বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানের দাপট

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

নিষিদ্ধ যান অথচ মহাসড়কে সরব। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মতো ব্যস্ততম সড়কেও নিয়ম মানানো যায়নি রিকশা ও অটোরিকশা চালকদের। মনে হয় যেন মহাসড়কটাকে রিকশা ও অটোরিকশার দখলে’। যান্ত্রিক গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করা সম্ভব হলেও রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিধান নেই ট্রাফিক পুলিশের কাছে। ফলে দেশের লাইফ-লাইন হিসেবে খ্যাত এই মহাসড়কে যেভাবে খুশি চলছে রিকশা।

বেপরোয়াভাবে চলাচল করায় প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছে এসব তিন চাকার অবৈধ নিষিদ্ধ গাড়ীগুলো। অভিযোগ রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের মাসিক মাসোহারা দিয়ে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই অবৈধ যানবাহনগুলো।

পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মহাসড়কে রিকশা বা অটোরিকশার ফি স্টাইলে চলছে। বিভিন্ন বাসষ্ট্যান্ডগুলোতে যে যানজট তার মূলে রয়েছে রিকশা। সংযোগ সড়ক সবই এখন রিকশার দখলে। চালকের আসনে ১২-১৪ বছরের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধদেরও দেখা যায়। ফলে তাদের মধ্যে নেই সচেতনতা বা দায়িত্ববোধ। গ্যারেজ মালিক ও রিকশাচালকদের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় এখন ১৫-২০ হাজারের ওপর রিকশা চলছে। তবে এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে কোনো তথ্য নেই।

মহাসড়কের ষ্ট্যান্ড বা কোনো সংযোগ সড়কে ১০ মিনিট দাঁড়ালেই বোঝা যাবে কত সংখ্যক রিকশা মহাসড়কে চলছে। ব্যাটারিচালিত রিকশার দাম কম ও ভাড়া বেশী হওয়ায় এটি নতুন ব্যবসা হিসেবে নিয়েছে কেউ কেউ। ফলে প্রতিদিন বাড়ছে মহাসড়কে এর সংখ্যা। এতে করে সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে দেশের মূল্যবান বিদ্যুৎ। যেকোনো সময়ের তুলনায় কুমিল্লায় এলাকায় এখন বেড়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। মহাসড়কের কুমিল্লার বাসষ্ট্যন্ডের ওপরেই বীরদর্পে লাইন ধরে পার্কিংয়ে অবস্থান করছে রিকশাগুলো। এছাড়া কুমিল্লার ক্যন্টনমেন্ট, নাজিরাবাজার, কোরপাই, চান্দিনা, নূরীতলা, মাধাইয়া, ইলিয়টগঞ্জ, দৌলতপুর, রায়পুর, গৌরীপুর, শহীদনগর, দাউদকান্দি বিশ^রোড মহাসড়কে এসব গাড়িগুলো বেশি চলাচল করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিদিন নতুন করে রিকশা নামছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ের ব্যস্ত সড়কে। একটি রিকশা রাস্তায় নামলেই মালিকের লাভ। একটি রিকশা নির্মাণে খরচ হয় ১২-১৫ হাজার টাকা। মাসে আয় হয় কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার টাকা। রিকশার কোনো লাইসেন্স লাগে না। চালকেরও কোন লাইসেন্স বা প্রশিক্ষণ লাগে না। শুধু প্যাডেল ঘোরাতে পারলেই চলে।

অভিযোগ রয়েছে এই রিকশা এখন একটি সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের কোটি কোটি টাকার উপার্জনের পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত পাঁচ বছরে অন্তত কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছে রিকশার ভুয়া নম্বর প্লেট বিক্রি করে। পুলিশের সাথে মাসোহারার বিনিময়ে কিছু ড্রাইভার এসব অবৈধ গাড়ি চালাচ্ছেন বলে জানান তারা। সিএনজি চালকরা জানান, মহাসড়কটিতে সবাই একটি সিস্টেম করে অবাধেই সিএনজি চালাচ্ছে। কোথাও কোন পুলিশ কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কেউ তাকে বাধা দেয় না। পুলিশকে মাসোহারা দিয়েইতো গাড়ি চালাতে হয়। সড়ক পরিবহন মন্ত্রীর নির্দেশও মানছে না পুলিশ। তারা গোপন আঁতাতের কারণে এসবের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান পরিচালনা না করে বরং সিএনজি চলায় উৎসাহিত করছে। একেতো মহাসড়কে নিষিদ্ধ তার উপর সিএনজিগুলো উল্টো পথেই চলাচল করছে, যার ফলে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব তদারকির জন্য নিয়মিত অভিযান চালানোর কথা থাকলেও হাইওয়ে পুলিশ কখনই তা করেন না বলে দাবি স্থানীয়দের।

ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত তিন চাকার গাড়িকে নিবন্ধন দেয় না সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। ২০১১ সালে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু চালু গাড়িগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার শর্তে সেগুলোর জন্য যন্ত্রাংশ আমদানি করতে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে যন্ত্রাংশের নামেই বিক্রি হয়ে চলেছে গাড়ি। প্রায় সব জেলা শহরে উন্মুক্ত বিক্রয়কেন্দ্রও আছে। বিআরটিএ নিবন্ধন না দিলেও পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ লাইসেন্স দিচ্ছে। স্থানীয়ভাবে চাঁদা দিয়ে অবাধে চলছে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত যানবাহন। অপর সত্য হলো, এই গাড়ি চালিয়ে অনেক গরিব জীবন ধারণ করেন। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য কলামিস্ট আবুল মকসুদ বলেন, রাস্তায় ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ করে লাভ হবে না। চাকরির অভাব থাকায় অনেকেই এসব যানবাহন চালানোকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। ইজিবাইক চালিয়ে ঘর-সংসার চালাচ্ছেন। ধরতে হবে তাদের, যারা এগুলো অবৈধভাবে উৎপাদন ও বিক্রি করছে।

জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শামছুল হক জানিয়েছেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ ধীরগতির যানবাহন। তিনি বলেন, মহাসড়কে বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট গাড়ির মতো দ্রুতগতির যান যেমন চলে, একই সঙ্গে চলে ধীরগতির অটোরিকশা, ইজিবাইক, শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ি, ব্যাটারিচালিত গাড়ি ও রিকশা। তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে মহাসড়কে এমন বারোয়ারি যান চলাচল করে না। ধীরগতির যানবাহনের কারণে দ্রুতগতির যান দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ধীরগতির যানগুলো দুর্বল হওয়ায় এর যাত্রী ও চালকদের নিরাপত্তা নেই। সামান্য টোকা লাগলে বড় সংখ্যায় প্রাণহানি ঘটে। মহাসড়ক নিরাপদ করতে দ্রুতগতি ও ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সড়ক বা লেন থাকতে হবে।
সরকারের পরিকল্পনাতেও রয়েছে মহাসড়কে ধীরগতির জন্য পৃথক লেন থাকবে। কিন্তু বিদ্যমান দেশের প্রধান ছয় মহাসড়কের কোনোটিতে ধীরগতির লেন নেই। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে সব মহাসড়কেই ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেন থাকবে। তবে গত তিন বছরে এ ঘোষণা কার্যকর হয়েছে সামান্যই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাইওয়ে পূর্বাঞ্চলের পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার সিএনজি অটো রিকশা চলার প্রশ্নই আসে না। শুধু সিএনজি নয় সব ধরনের তিন চাকার গাড়ি মহাসড়কে নিষিদ্ধ। এগুলো কঠোরভাবে বন্ধ করতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন