শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বিষাক্ত তামাকের পরিবর্তে পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে লামার কৃষকের

প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

লামা (বান্দরবান) উপজেলা সংবাদদাতা
বিষাক্ত তামাকের বদলে পেঁপে চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন বান্দরবানের লামা উপজেলার অনেক কৃষক। পাহাড়ে উৎপাদিত পেঁপের গুণাগুণ ও স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় দেশের অন্যান্য জেলা-উপজেলায় এর চাহিদা বেশি। স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠী ও বাঙালিরা উপজেলার বিভিন্ন পাহাড় ও সমতল জমিতে পেঁপের আবাদ করেছেন। বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবেও এটির ব্যাপক চাষ হচ্ছে। সরকারি কিংবা বেসরকারি সহযোগিতা পেয়ে কৃষকরা তামাক চাষ বাদ দিয়ে এ চাষে আরো বেশি ঝুঁকবেন। পার্বত্য এলাকার পাহাড়ে কিংবা সমতলে সারা বছরই পেঁপের চাষ করা যায়। ফলে বারো মাসই এ সবজি বা ফল হিসেবে পাওয়া যায় এখানকার হাট-বাজারে। পেঁপে চাষ করে চাষিরা নিজের পরিবারে পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করছেন। লামা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মানুষ পুষ্টির অভাব পূরণে শাকসবজি ও ফলমূলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। এ বিষয়টি মাথায় রেখে এখন পাহাড়ে সারা বছরই পেঁপের চাষ করা হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকার আবহাওয়া ও মাটি পেঁপে চাষের উপযোগী। পেঁপে শুধুমাত্র ফল হিসেবে নয়, সবজি হিসেবেও এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এতে আছে প্রচুর ক্যারোটিন ও ভিটামিন সি। পাহাড়ি পাথুরে-বেলে মাটিতে পেঁপের চাষ ভালো হয়। সে হিসেবে ৪০ শতক জমিতে বছরে প্রায় ৫ হাজার থেকে দশ হাজারটি পেঁপে উৎপাদন হয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাহাড় ও সমতলের প্রায় ১০ একর জমিতে পেঁপের চাষ হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ফাতেমা জান্নাত বলেন, অজীর্ণ, কৃমি সংক্রমণ. আলসার, ত্বকে ঘা, একজিমা, কিডনি সংক্রান্ত জটিলতা, ডিপথেরিয়া, আন্ত্রিক ও পাকস্থলির ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে কাঁচা পেঁপের পেপেইন অতি উপকারী। এছাড়া পেঁপের আঁঠা/ক্ষির ও বীজ ক্রিমিনাশক ও প্লীহা যকৃতকে সতেজ রাখে। লামা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নুরে আলম জানান, পেঁপের বিভিন্ন জাত রয়েছে। এর মধ্যে এই এলাকায় স্থানীয় পেঁপে বেশি চাষ হয়। এছাড়া বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উচ্চ ফলনশীল শাহী, থাইল্যান্ডীসহ আরো কয়েক প্রজাতির পেঁপে চাষ করছেন অনেকে। উঁচু ও মাঝারি উঁচু উর্বর দো-আশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। এছাড়া পরিচর্যা করলে সব ধরনের মাটিতেই চাষ সম্ভব। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে পৌষ মাসের মাঝামাঝি এবং মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময় পেঁপের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। এছাড়া শাহী পেঁপে সারা বছরই চাষ করা যায়। বীজ থেকে চারা তৈরি করা যায়। পলিথিনে চারা তৈরি করলে, দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যে রোপণের পর চারা দ্রুত বৃদ্ধি পায় বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়। চারা রোপণের ১৫ দিন আগে গর্তের মাটিতে সার মেশাতে হয়। পানি নিকাশের জন্য দুই সারি মাঝখানে ৫০ সে.মি. নালা রাখতে হয় (সমতল জমিতে)। কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে যতটুকু সম্ভব সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া মাটি পরীক্ষা করে এর ধরন অনুযায়ী সার ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে জৈবসার ব্যবস্থাপনা উত্তম। স্থানীয় কৃৃষকরা আক্ষেপ করে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কোনো সহযোগিতা আমরা পাই না। ফলে রোগ-বালাইয়ের সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক কৃষি বিভাগের লোকেরা হাজির হন না। এ ব্যাপারে লামা উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নুরে আলম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের জনবল কম থাকায় কৃষকদের যথাযত সাপোর্ট দিতে পারছি না, আমরা এ সমস্যা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। রূপসিপাড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, প্রতি একর  পেঁপে চাষে ২৫ হাজার টাকা মূলধন বিনিয়োগ করতে হয়। ব্যাংক, এনজিও বা নিকটাত্মীয়দের থেকে সুদের উপর ঋণের টাকা নিয়ে স্থানীয় কৃষকরা পেঁপে চাষ করছেন। তিনি আরো বলেন, এই এলাকায় প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহজশর্তে ঋণ সহযোগিতা পেলে কৃষকরা পেঁপে চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাই পরিবেশ ও কৃষি শিল্পবান্ধব কৃষকদের এ দাবি পূরণে সরকার বা কোনো বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন