শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

যশোরে ভিন্ন মেজাজের রেস্তোরাঁ ‘দ্য ব্যাম্বু ক্যাফে’, নানা অভিযোগ জরিমানা

যশোর ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:৩৫ পিএম

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি, প্রিমিসেস লাইসেন্স ও স্বাস্থ্য সনদ না থাকা এবং নিয়মিত কর পরিশোধ না করাসহ নানা অভিযোগে যশোরের ঐতিহ্যবাহী ‘দ্যা বাম্বু ক্যাফে’কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ জাকির হাসান অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা আদায় করেন। এসময় উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর নাজনীন নাহার ও বেঞ্চসহকারী সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

নাজনীন নাহার বলেন, হোটেল-রেস্তোরা খোলার আগে প্রিমিসেস লাইসেন্স ও কুকদের স্বাস্থ্য সনদ প্রয়োজন। সেই ধরনের কোনো অনুমতি নেননি বাম্বু ক্যাফের মালিক। অভিযান পরিচালনাকালে দেখা গেছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্যাফে রান্নার কাজ চলছে। হোটেল বয়দের নির্ধারিত পোশাক নেই। এছাড়া নিয়মিত কর পরিশোধ না করাসহ নানাবিধ ত্রুটি পাওয়া গেছে ক্যাফেতে। এসব অভিযোগে বাম্বু ক্যাফের ম্যানেজার রনিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

আদালতের বেঞ্চসহকারী সাইফুল ইসলাম বলেন, আদালত পরিচালনাকালে বাম্বু ক্যাফে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রবণতা দেখা যায়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালত ক্যাফের ত্রুটিগুলো সংশোধনের জন্য মালিকপক্ষকে তিন মাসের সময় দিয়েছেন। এরপরও ত্রুটি থাকলে ক্যাফ সিলগালাকরাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

গেলো ঈদুল ফিতরের দুইদিন আগে পুলেরহাট-রাজগঞ্জ সড়কের পলাশী মোড়ে দেশের একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বাম্বু ক্যাফের যাত্রা শুরু হয়। যেখানে ক্যাফ নির্মাণে তৈরি করা হয়েছে পাহাড়ি দামি বাঁশ ও কাঠ। প্রথম থেকে ক্যাফের নির্মাণশৈলী যশোরসহ আশপাশের এলাকার মানুষের দৃষ্টি কাড়ে। নিয়মিত দূর-দূরন্ত থেকে ক্যাফটি দেখতে মানুষ এখানে আসেন।

উদ্বোধনের দিন বৃষ্টি-দমকা হাওয়া আর কিছুদিন পরই করোনার কারণে লকডাউন- এই দুটি দুর্যোগ সয়েই ‘দ্য ব্যাম্বু ক্যাফে’র যাত্রারম্ভ!

দ্য ব্যাম্বু ক্যাফে যশোরে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় একটি ভিন্নমাত্রা এনে দিয়েছে ভোজনরসিক মানুষের মধ্যে।

যশোর শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে মণিরামপুর উপজেলার পলাশী এলাকায় সম্পূর্ণ গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে উঠেছে এই ফাস্ট ফুড ও মিনি চাইনিজ রেস্তোরাঁখানি।

দিনের আলোয় চারপাশে সবুজের সমারোহ; আর রাতের আঁধারে তার অন্য আরেক রূপ! আশপাশে কেবল ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক; আর ক্যাফের বাইরে ও ভেতরের রঙিন ঝলমলে আলোর ফোয়ারা!

যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পুলেরহাট থেকে মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ সড়কের একদম গা-ঘেঁষে অবস্থিত রেস্তোরাঁটি।

দু'পাশে সবুজ ধানের ক্ষেত, বরষায় ধুয়ে যাওয়া যাওয়া সবুজ বৃক্ষাদির নয়নাভিরাম-মনোহর দৃশ্য, বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক বাতাসের স্পর্শ নিয়ে ফাঁকা-কোলাহলমুক্ত একটি স্থানে বাঁশের তৈরি কাঠামোর ওপর গোলপাতার ছাউনি দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই রেস্টুরেন্টটি। প্রথম দেখায় যে কারও হৃদয় উদ্বেলিত হতে বাধ্য!

ক্যাফের বাইরে থেকে প্রথম দেখায় বেশ সাদামাটাই মনে হয়। কিন্তু ভেতরে ঢুকলেই একটু একটু করে চোখে পড়বে এর শিল্পগুণ! বিভিন্ন প্রকারের বাঁশের সাধারণ কাজে অসাধারণ সৌন্দর্য ঠিকরে বের হচ্ছে যেন!

শুধু বাঁশই নয়, ক্যাফেতে টেবিল-বেঞ্চ ও চেয়ারে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ। প্রতিটি টেবিলের ওপরে এবং আশপাশেও ঝুলছে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি ঝালরে রঙিন বাতি। সৌন্দর্য বিকাশে পাশাপাশি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বাবুই পাখির বাসা!

এই রেস্টুরেন্টের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- ভেতর থেকে পূর্ব ও পশ্চিম দিক ছুঁয়ে উঠে গেছে দুটি বাঁশ-কাঠের সিঁড়ি। পশ্চিমে দোতলায় রয়েছে একটি ফ্যামিলি কেবিন আর পুবে দুটি সিঙ্গেল কেবিন। সেখানেও বসার ব্যবস্থা করা আছে। তবে, কাঠের চেয়ারের পরিবর্তে রয়েছে সোফা! এই কেবিনগুলোর চারপাশ বাঁশের চটা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নান্দনিক বেড়া! আর নিচতলায় একইভাবে ছোট ছোট চারটি কেবিন রয়েছে- কাপলদের জন্যে!

সম্প্রতি ব্যাম্বু ক্যাফেতে গিয়েছিলেন যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকার স্বীকৃতি রহমান ও তার স্বজনরা। তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত সেখানকার পরিবেশ ও খাবার পরিবেশনে। তার ভাষ্য, শহরের কোলাহল থেকে দূরে, চারিদিকে সবুজ- চোখে প্রশান্তি এনে দেয়। রেস্টুরেন্টের এই সুন্দর পরিবেশ আরও সুন্দর হয়ে ওঠে সন্ধ্যায়। রঙিনবাতির মৃদু আলোয় সেখানে বসে গান শোনা যায়। রেস্টুরেন্টের কর্মীরা বেশ আন্তরিক; খাবারের মানও সুন্দর! দামটা একটু বেশি হলেও তা তাদের ব্যবহার, পরিবেশ আর পারিপার্শ্বিক সৌন্দর্যে তেমন একটা গায়ে লাগে না!

ব্যাম্বু ক্যাফের মালিক মঞ্জুরুল ইসলাম ও তার বন্ধু আরিফুজ্জামান রনি। কথা হয় মঞ্জুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, দশ বছরের চুক্তিতে ২৫ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যাম্বু ক্যাফে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এ বছরের ১২ মে ক্যাফে চালু করা হয়। গেল বছরের অক্টোবর মাস থেকে ক্যাফের কাজ শুরু হয়। প্রায় আট মাস ধরে চলে কর্মযজ্ঞ।

তিনি বলেন, ‘কারো কাছ থেকে ধারণা নিইনি; একটু আনকোরা একটু ভিন্নতা আনতেই বাঁশের এমন ব্যবহার।’

মুলি, ভলকো, যাওয়া আর পাহাড়ি- চার ধরনের প্রায় তিন হাজার বাঁশ ব্যবহৃত হয়েছে এই ক্যাফেতে। ১৩০ জনের বসার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। সকাল দশটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে তাদের এই খাবারের দোকান। শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত মোট মিলিয়ে মাসখানেকের একটু বেশিদিন ক্যাফে খোলা রাখা গেছে। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও আশপাশের উপজেলা থেকে লোকজন এখানে আসেন। লাভ-ক্ষতি প্রায় সমান- জানান মঞ্জুরুল ইসলাম।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন