উত্তর ঃ মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর আবির্ভাবের পূর্বযুগকে আইয়ামে জাহেলিয়াত তথা বর্বরতার যুগ বলা হয়। সেযুগে আরবজাতি জুয়া,মদ্যপান, হিংস্রতা, বর্বরতা,ব্যভিচারসহ নানারকম পাপ-সাগরে নিমজ্জিত ছিলো। এমন কোনো অন্যায়-অবিচার ছিলো না,যা তাদের মাঝে বিদ্যমান ছিলো না। কিন্তু এরপরও তাদের মাঝে এমন কিছু নৈতিক গুণ ছিলো, যা সত্যিই ঈর্ষনীয়।
নিম্নে এমন কিছু গুণ নিয়ে আলোচনা করা হলো -
১- উদারতা ও বদান্যতা
এটি ছিলো আরবদের অন্যতম একটি গুণ।
নীতি-নৈতিকতায় নিম্নস্তরে পৌঁছলেও দয়া-দাক্ষিণ্যে তারা ছিলো সর্বশীর্ষে। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে তারা পরস্পর রীতিমতো প্রতিযোগিতা ও গর্ব করতো।
উক্ত গুণকে কেন্দ্র করে কেউ কেউ নিজের প্রশংসা নিজেই করতো। তাদের দানের প্রবণতা এতোটাই উঁচু ছিলো,যার প্রতি মুগ্ধ না হয়ে পারা যেতো না। দেখা গেছে, কঠিন শীত কিংবা অভাবের সময় কারো বাড়িতে মেহমান এলো ;কিন্তু বাড়ীওয়ালার কাছে নিজের জীবিকার জন্য একটি উট ছাড়া আর কিছুই নেই। তবুও সে নিজের একমাত্র সম্বল উটটি জবাই করে মেহমানদের আপ্যায়ন করতো।
২-অঙ্গীকার রক্ষা
জাহেলি যুগে তাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিলো, ওয়াদা রক্ষা করা,কথা রাখা।
অঙ্গীকার রক্ষা করাকে তারা ধর্মীয় কর্তব্য মনে করতো। ঘনিষ্ঠলোকদের মর্যাদা রক্ষার্থে নিজ সন্তানের রক্তপাত কিংবা নিজ বাড়িভিটা পরিত্যাগ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারকে ও তুচ্ছ মনে করতো।
৩-ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদাবোধ
সেকালে আরবদের আরেকটি নৈতিকগুণ ছিলো,পার্থিব সবকিছুর উপর নিজেদের মান-মর্যাদাকে প্রাধান্য দিতো তারা।
নিজেদের ব্যাপারে সহ্য করতো না কোনো অন্যায়-অনাচার। যার ফলে তাদের অহংকারও মর্যাদাবোধ সীমাতিক্রম করেছিলো। তাদের এই আত্নমর্যাদাবোধের উপর সামান্যতম আঘাত এলে তারা ক্ষেপে যেতো। জড়িয়ে পড়তো তারা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। এতে তাদের প্রাণহানির ব্যাপারে কোনো উৎকন্ঠাই থাকতো না। প্রাণের তুলনায় মান-মর্যাদাকেই তারা অধিক মূল্যবান মনে করতো।
৪- সংকল্প বাস্তবায়ন
ইসলামপূর্ব যুগে আরবদের আরো একটি বৈশিষ্ট্য ছিলো, কোনো কাজ সম্পাদনের সংকল্প করলে তারা প্রাণবাজি রেখে তা করে ছাড়তো । পার্থিব কোনো শক্তি তাদেরকে তা থেকে দমাতে পারতো না।
৫-সরলতা
তাদের জীবনযাত্রা ছিলো অত্যন্ত সহজ-সরল। ছিলো না তাদের চিন্তা-চেতনায় লেশমাত্র জটিলতা। উদার,উন্মুক্ত মরুপ্রকৃতির মতোই ছিলো তাদের মন। এ কারণে প্রকৃতিগতভাবেই তারা ছিলো সৎ এবং সততাপ্রিয়। ধোঁকাবাজি,বিশ্বাসভঙ্গের মতো কোনো ব্যাপার ছিলো তাদের সম্পূর্ণ অজানা। আমানত রক্ষা করাকে তারা পবিত্র দায়িত্ব মনে করতো।
(আর রাহিকুল মাখতুম অবলম্বনে : ৮৮-৯১)
উত্তর দিচ্ছেন : মুফতি আবুল কাসেম মুহাদ্দিস,জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, কুমিল্লা।)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন