বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

কবরে সিজদা ও প্রদিপ জ্বালানো

কাজী সিকান্দার | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন সুন্দর একটি পৃথিবী। যেখানে আমরা বসবাস করি। এ পৃথিবীর বুকে আমাদের জন্ম। এ পৃথিবীতেই আমাদের কবর রচিত হয়। যুগে যুগে এ পৃথিবীতে এসেছে অসংখ্য অগণিত নবী, রাসূল ও মহামানব। তাঁরা কেই বেচে নেই। বর্তমানে যারা আছেন তাঁরাও একদিন এ মাটির তলে চলে যাবেন। মধ্যখানে এ স্বল্প সময় শুধু আল্লাহ তাআলার এবাদতের জন্য। আল্লাহকে রাজি ও খুসি করার জন্য। আল্লাহর কুদরতি পায়ে মাথা ঠেকানোর জন্য। মানুষের কপালও বড় দাম। তাই এ কপাল আল্লাহর জন্য। মানুষের সময় ও কাজের বড় দাম। তাই এ সময় ও কাজ হবে আল্লাহর উদ্দেশ্যে। অন্য কারো সামনে মাথা ঝুকানোতো প্রশ্নই আসে না। অন্য কারো উদ্দেশ্যেও যেন না হয় কোন কাজ ও সময় ব্যায়। এখানে যুগে যুগে মানুষ ভুল করেছে। মানুষ মানুষের সবচয়ে বড় দামী কপাল ঠেকিয়েছে মানুষের পায়ে। কবরের কাছে। মানুষ তার সবচেয়ে দামী সময় ব্যায় করছে কবরের ওপর প্রদিপ জ্বালানো থেকে কবরকে সাজানোর কাজে। কথা ছিল মানুষ নিজে সাজবে আল্লাহর রঙ্গে। কিন্তু মানুষ সাজায় কবর। এ চরম ভুল যেন উম্মত না করে। এ শিরিকের পথে যেন উম্ম না হাঁটে। তাই রাসূল সা. বড় আসঙ্কা নিয়ে উম্মতকে সতর্ক করছেন।

হযরত আয়েশা রা. কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূল সা. তাঁর মৃত্যুশয্যায় বলেছেন, ইয়াহুদী এবং খৃষ্টানদের ওপর আল্লাহর লা’নত হোক। তারা স্বীয় নবীগণের কবরকে সিজদার স্থানরূপে গ্রহণ করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)
রাসূল সা. মৃত্যু শয্যায় শায়িত। আমরা জানি মৃত্যুর পূর্বে মানুষ অতি মূল্যবান নসিহত করেন। এরওপর নবীর ওসিয়ত কত গুরুত্বপূর্ণ? রাসূল সা. দেখলেন তাঁর মৃত্যু সন্নিকটে। তাই তার উম্মতকে বলে যাচ্ছেন যেন তাঁর কবরকে সেজদার স্থান না বানাতে। কারণ এ সিজদা করা শিরিক। সিজদা শুধু আল্লাহর জন্য। কোন নবী বা আল্লাহর ওলীর জন্য নয়।

হযরত জুন্দুব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূল সা. কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের পূর্ববর্তীগণ স্বীয় নবীগণ এবং সৎলোকগণেল কবরকে সিজদাগাহ বানিয়েছিল। খবরবাদর! তোমরা কবরকে সিজদাগাহ বানাবে না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করছি। (মুসলিম)

এর থেকে স্পষ্ট কথা আর কী হতে পারে? এরপরও বড়হতভাগ্য আমরা যে, আমাদের যুগে এসে সেই নবীর উম্মতই কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। যে নবী বলেছেন, ‘‘ খবরবাদর! তোমরা কবরকে সিজদাগাহ বানাবে না। আমি তোমাদেরকে তা থেকে নিষেধ করছি’’।

প্রদিপ জ্বালানো ও মহিলা কবরে যাওয়া
কবর একটি মৃত মানুষের শেষ ঠিকানা। কবরে যে শায়িত আছে তিনি হয়তো সুখে আছেন অথবা দুঃখে। সকল শক্তি শেষ হওয়ার পর একজন মনুষের কবরে স্থান হয় । যেখানে তাঁর নিজের ব্যাপারে কোন শক্তি রাখেন না সেখানে অন্যের কী উপকার করবে? কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে কবর সাজানো, কাবরে প্রদিপ জ্বালানো থেকে শুরু করে কবর কেন্দ্রীক ওরশ সহ অনেক অনুষ্ঠান করা হয়। এখানে দু’শ্রেণীর মানুষ কাজ করে। এক শ্রেণীর মানুষ বিশ্বাস করে এ কবরের কোন কিছুই নেই তবে তার অর্থনৈতিক স্বার্থে কবরকে রক্ষণাবেক্ষণ করে। কারণ মানুষ এতে দান সদকা করে, মানত করে তাই তাদের একটি উপার্জনের মাধ্যম হলো। তাই তারা মানুষকে বিভিন্ন কিচ্ছা কাহিনী বর্ণনা করে মাজার ও কবরের মহত্ব তুলে ধরে। দ্বিতীয় শ্রেনীর লোক এরাই তারা বিশ্বাস করে কবরের অনেক ক্ষমতা। মূলত তাদেরকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। তাই তারা এসে প্রদিপ জ্বালায়।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা. কবর যিয়ারতকারীণী মহিলাদেরকে লা’নত করেছেন এবং সেই সব লোকের ওপরও লা’নত করেছেন যারা কবরকে মসজিদ বানিয়েছে এবং সেখানে প্রদিপজ্বালায়। (আবু দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৭১) কবরের ওপর প্রদিপ জ্বালানো লানতের কাজ। মহিলা কবর জেয়ারত করা লা’নতের কাজ। কিন্তু বর্তমানে মাজারগুলোতে মহিলাদের আগমন এত বেশি তা কল্পনাতীত। অরো বড় বিস্ময়ের কথা তারা কবরের সামনে সিজদা ও বিভিন্ন মান্নত করে ছেলে চায়, চাকরি চায় বিভিন্ন জিনিস চায়। এসব কাজ সম্পূর্ণ হারাম ও শিরিক।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় বর্তমানে একাজগুলোই হচ্ছে বেশি। আরো দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। একাজগুলোর পিছনে প্রতাপশালী কিছু স্বার্থান্বেষী মহল জাড়িত থাকায় তাদের গতি তীব্রতার সাথে বাড়ছে। যে কাজ ইসলামে সম্পর্ণ নিষিদ্ধ সেই কাজই করছে তারা ইসলামের দোহাই দিয়ে। সম্মানের দোহাই দিয়ে। এ কাজগুলো থেকে উত্তরণের পথ আমাদেরকে বের করতে হবে। না হয় এক সময় পুরো পৃথিবী শিরিকে ভরে যাবে। আসুন আমরা এ সকল শিরিকী কাজ থেকে বিরত থাকি।

লেখক : পরিচালক ইসলাহ বাংলাদেশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন