বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্রে আর থাকবে না সাদা সংখ্যাগরিষ্ঠ

মার্কিন শক্তির ভবিষ্যৎ -শেষ

দ্য ইকোনোমিস্ট | প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:১০ এএম

লকডাউন এবং করোনাভাইরাসে বিধ্বস্ত অর্থনীতিগুলোর মধ্যেই অত্যাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা একটি নতুন ধরনের যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি করছে, যেখানে অঞ্চলিক দখল ধরে রাখা আগের তুলনায় কম প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে। কেন রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান এবং ইরানকে আফগানিস্তানের দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের চোরালিতে ডুবে আরেকটি সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধের জন্য রেখে যাওয়া নয়? সেই সুযোগে বিশ্রাম নিয়ে মার্কিন বাহিনীর তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে চীনের সাথে সম্ভাব্য সামরিক সঙ্ঘাতের জন্য গতিশীল ও প্রস্তুত থাকা নয়?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আসল শোক আফগানিস্তানের পরাজয় নয়, বরং সেটি, যা সরাসরি টেলিভিশনে দেখানো হয়েছিল। যখন দেশটি ভিয়েতনামের ব্যর্থ যুদ্ধ থেকে সরে আসে, তখন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ছিল। এর বেশিরভাগই সশস্ত্র বাহিনীতে জোরপূর্বক নিয়োগের কারণে ঘটেছিল। যদিও আফগানিস্তানের যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের রাস্তায় অনুরূপ আবেগ জাগিয়ে তোলেনি, তবে, ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে অনেকেই সেই সংযোগগুলোও তৈরি করেছেন এবং কয়েক দশকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আর সাদা সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থাকবে না।

মার্টিন লুথার কিং যখন পুঁজিবাদ, বর্ণবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদের মধ্যে সংযোগ দেখিয়েছিলেন এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, তখন তিনি অপদস্থ হয়েছিলেন। মোহাম্মদ আলী যখন মার্কিন সেনাবাহিনীতে অংশ নিতে অস্বীকার করেছিলেন এবং নিজেকে একজন বিবেকবান আপত্তিকারী বলে ঘোষণা করেছিলেন। তার বক্সিং শিরোপা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং তাকে কারাদণ্ডের হুমকি দেয়া হয়েছিল।

কালো আফ্রিকানদের দাসত্ব এবং আদি আমেরিকানদেরকে গণহত্যা এবং তাদের লুপ্ত করে দেয়ার ঘটনা আজো প্রায় প্রতিটি জনসাধারণের কথোপকথনের মধ্যে বিরাজমান। এসব গল্পের সাথে মার্কিন যুদ্ধ বা মার্কিন মিত্রদের নিগ্রহ ও ধ্বংসের অন্যান্য গল্পও খুব সম্ভবত যুক্ত হবে। এটি ঘটতে জাতীয়তাবাদ এবং ব্যতিক্রমধর্মীতা বাধা হতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মেরুকরণ এবং বিভেদগুলো সময়মতো জনশৃঙ্খলাকে মারাত্মক ভাঙনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে প্রাথমিক লক্ষণ দেখেছি এবং অন্যদিকে খুব ভিন্ন ধরনের সঙ্কটও কড়া নাড়ছে।

বহু শতাব্দী ধরে পর্যাপ্ত জমি এবং মিঠা পানি, বিরূপ প্রতিবেশীহীন, উভয় পাশে মহাসাগর এবং ফ্র্যাকিংয়ের প্রচুর তেল সমেত যুক্তরাষ্ট্রের নিজের ভৌগলিক সীমায় স্বাচ্ছন্দ্যে পশ্চাদপসরণের সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন তার ভৌগলিক অবস্থা বিরূপ হতে শুরু করেছে। দেশটির প্রাকৃতিক অনুগ্রহ আর ‘আমেরিকান জীবনধারা’ বা যুদ্ধকে টিকিয়ে রাখতে পারছে না। ঠিক এভাবেই, চীনের ভৌগলিক অবস্থা কি ‘চীনা জীবনধারা’ টিকিয়ে রাখতে সক্ষম?

মহাসাগর ফেঁপে উঠছে, উপকূল এবং উপকূলীয় শহরগুলি অনিরাপদ, বনগুলি জ্বলছে, সভ্যতার বসতীগুলোতে আগুনের লেলিহান শিখা আঁচ ছড়াচ্ছে, ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে শহরগুলি পুরোমাত্রায় গ্রাস করছে। নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। শস্য-শ্যামল উপত্যকাগুলোকে খরা তাড়া করছে। হারিকেন এবং বন্যা শহরগুলোকে ধ্বংস করছে। ভূগর্ভস্থ পানি কমে যাওয়ায় ক্যালিফোর্নিয়া ডুবে যাচ্ছে। কলোরাডো নদীর অনন্য হুভার ড্যামের জলাধার, যা ৪০ মিলিয়ন মানুষকে মিষ্টি পানি সরবরাহ করে, তা আশঙ্কাজনক হারে শুকিয়ে যাচ্ছে।

যদি সাম্রাজ্য এবং তাদের উপনিবেশগুলো তাদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য পৃথিবীকে লুন্ঠন করতে চায়, তাহলে সেই লুণ্ঠন আমেরিকান, ইউরোপীয়, চীনা বা ভারতীয় পুঁজিবাদের দ্বারা পরিচালিত কিনা, তা বিবেচ্য নয়। সত্যিকার অর্থে আমাদের এসব আলোচনা করার সময় এটি নয়। কারণ আমরা যখন কথায় ব্যস্ত, পৃথিবী তখন যবনিকায় ব্যস্ত। (শেষ)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Anwar Hossain ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৫৮ এএম says : 0
সাদা সংখ্যাগরিষ্ঠ না থাকায় ভালো
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৫৯ এএম says : 0
সাদারা দীর্ঘদিন ধরে কালোদের অত্যাচার করে আসছে, এর একটা অবসান হওয়া উচিত।
Total Reply(0)
সৈকত ফকির ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০০ এএম says : 0
আমেরিকার বর্ণবিদ্বেষ একটা চরম সমস্যার,,,এটার অবসান কবে ঘটবে!
Total Reply(0)
মিরাজ আলী ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০১ এএম says : 0
খুবই ভালো খবর।
Total Reply(0)
Mohammad Shamim ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:১৬ এএম says : 0
আস্তে আস্তে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থাই খারাপ হয়ে আসছে
Total Reply(0)
গোলাম কাদের ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:১৭ এএম says : 0
আর কয়েক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সারা বিশ্ব থেকে মার খেয়ে নিজের দেশে ফিরবে। তখন এমনইতেই ঠিক হয়ে যাবে
Total Reply(0)
প্রিয়সী ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:১৮ এএম says : 0
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মেরুকরণ এবং বিভেদগুলো সময়মতো জনশৃঙ্খলাকে মারাত্মক ভাঙনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন