শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুই আসামির জবানবন্দি : ১৫ কোটি টাকা নেন নাহিদা রুনাই

শুভ্রা রানীর বাসায় যাতায়াত করতেন পিকে হালদার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

পিকে হালদারের বন্ধুর কাছ থেকে ১৫ কোটি টাকা নেন নাহিদা রুনাই। এ অর্থে তিনি শেয়ার ব্যবসা করেন। এছাড়া শুভ্রা রানী ঘোষের বাসায় প্রায়ই যাতায়াত করতেন পিকে হালদার। একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়া প্রশান্ত কুমার হালদার (পি.কে হালদার)র সম্পর্কে এ জবানবন্দি দিয়েছেন নাহিদা রুনাই আহমেদ ও শুভ্রা রানী ঘোষ। গতকাল বৃহস্পতিবার তারা এ জবানবন্দি দেন। এর আগে আদালতের নির্দেশে তাদের ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

জবানবন্দিতে নাহিদা রুনাই জানান, ২০০৮ সালে ৮ আগস্ট আইআইডিএফসিতে অফিসার পদে চট্টগ্রাম শাখায় তিনি যোগদান করেন। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন আসাদুজ্জামান খান। ডিএমডি পি, কে হালদার। রুনাই ২০১০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে চাকুরি করেন। ২০১০ সালের ডিসেম্বর রুনাই রিলায়েন্স ফাইন্যান্স—এ অ্যাসিটেন্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। তিনি কাজ করতেন ক্রেডিট ডিভিশনে। তখন তার সরাসরি রিপোর্টিং বস ছিলেন পি, কে হালদার।
২০১১ সালে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স—এ মো. রাশেদুল হক এসভিপি হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৫ সালের জুনে মো. রাশেদুল হক ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে যোগদান করেন। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে একদিন এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি.—এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল শাহরিয়ার রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লি.—এর এমডি পিকে হালদারের কক্ষে আসেন। পি, কে হালদাররা তাকে নিজ কক্ষে ডেকে পাঠান। তাকে এফএএস ফাইন্যান্স লি.—এ যোগদান করতে বলেন। তার যোগদান করার ইচ্ছেও ছিল। কিন্তু কিছুদিন পর পি, কে হালদার রাসেল শাহরিয়ারকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং—এ রাশেদুল হকের অধীনে চাকরি করতে বলেন।
পরে তিনি ২০১৫ সালের জুলাইতে ভিপি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং—এ বিজনেস হেড হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি বিজনেস হেড হিসেবে চাকরি করেন। অফিসিয়াল ঋণ ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করতে থাকেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির পর এইচ,আর বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন রাসেল। শেয়ার ডিভিশনও দেখভাল শুরু করেন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং—এ যোগদানের পরে কক্সবাজারের রেডিসন ব্লু হোটেলের জন্য বিভিন্ন অফিসিয়াল মিটিং—এ তিনি ৬/৭ বার মো. সিদ্দিকুর রহমান, মো. জাহাঙ্গীর আলম ও পি, কে হালদারদের সাথে ইন্দোনেশিয়া, মালেয়শিয়া, ব্যাংকক ভ্রমণে যান। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিং—এর বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজে আরো ৪/৫ বার দেশের বাইরে বেড়াতে যান। শুধুমাত্র কেনাকাটার জন্য ভারতেই গিয়েছেন ১০/১২ বার।
পি, কে হালদারের নিদেের্শই মূলত বিভিন্ন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের ভিজিট প্রতিবেদন ছাড়া ঋণ দিতে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে কোন মর্টগেজ না নিয়ে ব্যাংকিং রীতিনীতির বাইরে রাসেলসহ এমডি রাশেদুল হক, আল মামুন সোহাগ, এভিপি; রাফসান রিয়াদ চৌধুরী (৩৬), সিনিয়র ম্যানেজার, ঋণ প্রস্তাব তৈরির পর ইন্টারন্যাল মেমোতে স্বাক্ষর করেন। পরে বোর্ডে ঋণ অনুমোদন হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে উক্ত অর্থ না পাঠিয়ে পি, কে হালদারের মৌখিক নির্দেশে বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে এ অর্থ পাঠানো হয়।
পি, কে হালদারের নিদেের্শ রাসেলসহ (১) রাশেদুল হক (৫০), সাবেক এমডি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (৩) অভীক সিনহা (৩১), ম্যানেজার, ট্রেজারি, লিপরো ইস্টারন্যাশনাল নামীয় অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ১৬টি চেকের মাধ্যমে ১১৬,৫৫,৪১,৮৯৭ টাকা দেন। এটি প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির হিসাবে এ অর্থ পাঠানো হয়েছে।
শেয়ার ব্যবসা করার জন্য পি, কে সিন্ডিকেটের সদস্য ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং—এর ঋণগ্রহীতা স্বপন কুমার মিস্ত্রি ১৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন নাহিদা রুনাইকে। এ অর্থ দিয়ে রুনাই শেয়ার ব্যবসা করেন।
সুভ্রা রানী ঘোষ, (৪৭), পরিচালক, ওকায়ামা লিমিটেড, স্বামী: সুব্রত দাস। ওকায়ামা লিমিটেড—এর চেয়ারম্যান হলেন তার স্বামী সুব্রত দাস, (৫৩) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন মো. তোফাজ্জাল হোসেন, (৫০), পিতা: মো. মোবারক হোসাইন, স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম: ভীলপুর, পো: ইলিয়াতগঞ্জ, থানা: চান্দিনা, জেলা: কুমিল্লা। তিনি এ প্রতিষ্ঠানে পরিচালক হিসেবে ছিলেন। তার স্বামী সুব্রত দাস ছিলেন পি, কে হালদারের বন্ধু। বুয়েটে তারা একসঙ্গে পড়াশুনা করেন। সেই সুবাদে বুয়েটের বিভিন্ন প্রোগামে তার স্বামীর সঙ্গে গেলে পি, কে হালদারের সাথে সাক্ষাত হয়। তার স্বামীর বন্ধু হওয়ার সুবাদে পি, কে হালদার তার বাসায় যাতায়াত করতেন। তিনি ‘অ্যান্ড বি ট্রেডিং’—এর মালিক। তিনি এফএএস ফাইন্যান্স লি. থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানের নামে কোন প্রকার মর্টগেজ ছাড়াই ৩১ কোটি টাকা ঋণ নেন। প্রকৃতপক্ষে বারিধারাতে ভাড়া করা একটি রুমেই ছিল ‘অ্যান্ডবি ট্রেডিং’ ও ওয়াকামা লি.—এর অফিস। কোন মর্টগেজ না দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং—এর কর্মকর্তাদের সহায়তায় ওয়াকামা লি:—এর নামে ৮৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়। উক্ত ঋণের মধ্যে কয়েক কোটি টাকা তুলে তিনি তার স্বামী সুব্রত দাসকে দেন। এ অর্থ তিনি পি, কে হালদারের হাতে তুলে দেন। উক্ত ঋণের বিষয়ে তার স্বামী সব কিছু জানেন। ঋণের টাকা পি, কে হালদারের বিভিন্ন কোম্পানি ও পি, কে হালদার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবে গেছে যা পরে শুনেছে। ওয়াকামা লি.—এর পরিচালক হিসেবে তিনি ভাতা পেতেন, যা তার ব্যাংক হিসাবে জমা হতো। তার স্বামী তার কাছ থেকে চেকে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা তুলে কী করতেন তা তিনি জানেন না। তার ছেলে আমেরিকায় লেখাপড়া করে। সে সুবাদে তিনি ও তার স্বামী সুব্রত দাস আমেরিকায় গিয়েছিলেন। তার স্বামী বর্তমানে আমেরিকায় রয়েছেন। অ্যান্ডবি ট্রেডিং ও ওয়াকামা লি. প্রতিষ্ঠান দু’টি বন্ধ রয়েছে। যেহেতু উক্ত ঋণের বিপরীতে কোন মর্টগেজ নেই এবং প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় লিজিং—এর ঋণ পরিশোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বর্তমানে ঋণটি ক্লাসিফাইড/মন্দ অবস্থায় রয়েছে। এবি ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে তার হিসাব রয়েছে। তাদের পক্ষে উক্ত ঋণের বিপরীতে এক টাকাও দেয়া সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে দেয়া একেবারেই অনিশ্চিত।
উভয় আসামীর বিরুদ্ধে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন এবং ৫/৯/২০২১ খ্রি: তারিখ হতে আসামীদেরকে দুদকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়।
দুদক কতৃর্ক ইন্টারন্যাশনাল লিজিং—এর অর্থ আত্মসাতে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা হয়েছে এবং এসব মামলায় জড়িত অর্থের পরিমাণ প্রায় ১১০০ কোটি। এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। অনুসন্ধান ও তদন্ত চলছে। দুদকের উপ—পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান মামলাটি তদন্ত করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
MD Junaed Bhuiyan ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৪৬ এএম says : 0
· তাদের কেমন বিবেক কোটি কোটি টাকা লুটপাট করতেছে অথচ তার প্রতিবেশী না খেয়ে মরতেছে
Total Reply(0)
Hossain Kabir ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৪৬ এএম says : 0
চোরের ঘরে টাকার পাহাড়, আর কাজ করে খাওয়া মানুষের অভাব ই কাটে না।
Total Reply(0)
Mdrahim Uddin ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৪৭ এএম says : 0
এরা আওয়ামী লীগ এর প্রডাক্ট আওয়ামী লীগের মাথায় লবন রেখে বরই খাচ্ছে।
Total Reply(0)
Abdus Salam Forazi ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৪৭ এএম says : 0
শুভ্রা তো চুনোপুটি, রাঘব বোয়ালরা কোথায়? অনেকতো অবঃ সচিব ও আছেন, তাঁরা কেন গ্রেপ্তার হননি?
Total Reply(0)
Mokarrom King ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৪৮ এএম says : 0
এই সমস্ত দুর্নীতিবাজদের জন্য আলাদা করে চিড়িয়াখানা বানানো হোক এবং সাধারন পাবলিকের দেখার সুযোগ করে দেওয়া হোক
Total Reply(0)
Tajul Islam ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৪৮ এএম says : 0
আরে ভাই ডিজিটাল দেশে এটা কোন টাকাই না
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন