বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণই কাক্সিক্ষত শান্তি নিহিত

খুৎবাপূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ইসলাম পরিপূর্ণ একটি জীবন বিধান। এর প্রত্যেকটি বিধান ভারসাম্যপূর্ণ। এতে কোনো কুসংস্কারের স্থান নেই। ইসলামের নির্দেশনা থেকে যে যতটুক দূরে সরে যাবে তার কাজের মধ্যে ততটুকু ভারসাম্যহীনতা স্থান করে নিবে। ইলামের পরিপূর্ণ অনুসরণই প্রত্যেককে কাক্সিক্ষত শান্তি নিশ্চিত করবে। গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। নগরীর মসজিদগুলোতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক মুসল্লি রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করেন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মুহাম্মদ মুহিবুবল্লাহিল বাকী গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেছেন, ইসলাম পরিপূর্ণ একটি জীবন বিধান। এতে কোনো কুসংস্কারের স্থান নেই। ইসালাম পূর্বযুগে আরবে সফর মাসকে নিয়ে এক ধরনের কুসংস্কার ছিল। এই কুসংস্কার থেকে পবিত্র করার জন্য রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, ইসলামে কোনো স্বয়ংক্রিয় সংক্রমণ নেই। নেই কোনো অশুভ লক্ষণ, এমন কি পেঁচার মধ্যেও কোনো অশুভ লুকায়িত নেই। সফর মাসেও কোনো সফর অর্থাৎ পেটের কীট তথা অশুভ লক্ষণ নেই। যেহেতু সফর মাস ও অন্য মাসের মতো একটি মাস। এ ধরনের কুসংস্কার ভিন্ন প্রকৃতিতে আমাদের সমাজে ও প্রচলিত আছে। যেমন আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে, সকালে ঘরের থেকে বের হওয়ার সময় চোখের সামনে ঝাঁড়ু দেখা গেলে মনে করা হয় যে, আজকের যাত্রা অশুভ হবে।

মুহাররম মাসের আগমণ হলে মনে করা হয় এ মাস শোকের মাস, এ মাসে খুশির কাজ তথা বিবাহ শাদী শুভ হবে না। যমজ কলা খেলে মনে করা হয় যমজ সন্তান হবে। কোনো মেয়ের দাঁতের মাঝখানে ফাঁকা থাকলে মনে করা হয় এ মেয়ের স্বামী মারা যাবে। রাসূলে পাক (সা.) এ সমস্ত কুসংস্কার পূর্ণ আক্বীদা বিশ্বাস থেকে মানুষকে পবিত্র করার জন্য বললেন, ইসলামে কোনো অশুভ লক্ষণ নেই। এমনকি সফর মাসেও।
সফর মাসে অশুভ কিছু যদি থাকত তাহলে এ মাসে ইসলামের এত বরকতময়ী স্মরণীয় ঘটনা ঘটত না। রাসূলে পাক (সা.) এর শাদী মোবারক হযরত খাদীজা (রা.)-এর সাথে এ মাসেই হয়। আত্মরক্ষার জন্য আবওয়া নামক ইসলামের প্রথম অভিযান এ মাসেই হয়। খায়বারের বিজয় এমাসেই হয়। হযরত খালিদ (রা.) এবং হযরত আমর ইবনুল আস এ মাসেই ইসলাম গ্রহণ করেন।

অতএব দিন, কাল, ক্ষণ, বস্তু কোনো কিছুর মধ্যেই অশুভ লক্ষণ আছে বলে বিশ্বাস করাটাকে ইসলাম অনুমোদন করে না। বরং মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করার জন্য ইসলাম শুভ লক্ষণ গ্রহণ করাকে অনুমোদন করে। কেননা কুসংস্কার এক ধরনের মিথ্যা বিশ্বাস, আর মিথ্যা অর্থ হলো অবাস্তবতা, ভারসাম্যহীনতা, যা বিশ্বাসের ভারসাম্যতাকে নষ্ট করে। অন্যদিকে ইসালাম হলো একটি ভারসাম্য পূর্ণ ধর্ম।

খতিব বলেন, ইসলাম নারী পুরুষের স্বাধীনতাকে অনুমোদন করে। তবে স্বাধীনতার নামে চরিত্রহীনতাকে অনুমোদন করে না। চরিত্র গঠনে সহায়ক এমন সাংস্কৃতিক কার্যকলাপকে ইসলাম অনুমোদন করে। তবে চরিত্র নষ্ট করে এমন সাংস্কৃতিক কার্যকলাপকে ইসলাম অনুমোদন করে না। ইসলাম তাওহীদ, রিসালাত, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী হওয়ার নির্দেশ দেয় অন্যদিকে কুসংস্কারের প্রতি বিশ্বাসী হতে নিষেধ করে। ইসালাম আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করার নির্দেশ দেয়। তবে আশাবাদী হয়ে কর্মত্যাগী হতে নিষেধ করে। মোদ্দা কথা হলো লেন-দেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, পারিবারিক-সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, কূটনৈতিক সব বিষয়ে ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ সবাইকে কবুল করুন। আমীন।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, জাহেলিয়্যাতের যুগে আরবরা আরবি সফর মাসকে দুঃখের মাস মনে করত। অথচ ইসলামে সময়ের সাথে কোনো কল্যাণ-অকল্যাণ নেই। সব ধরনের কল্যাণ-অকল্যাণ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। এর উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি। এছাড়া গতকাল ছিল ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। ২০০৩ সাল থেকে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে প্রতি দুই মিনিটে তিনজন অর্থাৎ ৪০ সেকেন্ডে ১ জন মানুষ আত্মহত্যা করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশেও সংখ্যাটি উদ্বেগজনক। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২০-এ কোভিড মহামারি শুরুর ১০ মাসে বাংলাদেশে আত্মহত্যা করেছে ১১ হাজারের বেশি মানুষ। নাউযুবিল্লাহ।

তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ প্রতিষ্ঠাসহ আত্মহত্যা প্রতিরোধে আধুনিক বিশ্বের গ্রহণ করা কোনো কর্মপন্থাই ফলপ্রুসূ হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, ইসলাম নির্দেশিত কর্মপন্থা ও ধর্মীয় অনুশাসন না মানা।
খতিব বলেন, ইসলাম আত্মহত্যাকে মহাপাপ এবং ঘৃণ্য কাজ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। যারা জেদ কিংবা পার্থিব জীবনের দুঃখ-দুর্দশা ও ব্যর্থতার গ্লানি থেকে বাঁচতে আত্মহননের মতো ভয়াবহ পথে পা বাড়ায়, তারা যদি বুঝতো এর ভয়াবহ শাস্তির কথা তাহলে কোনোভাবেই এই পথে পা দিত না।

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে আত্মহত্যাকারীর পরকালীন কঠোর আযাবের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। আর যে ব্যক্তি জুলুমের বশবর্তী ও সীমালঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে খুব শিগগিরই অগ্নিতে দগ্ধ করব। এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ।’ (সূরা: নিসা, আয়াত: ২৯-৩০)।

খতিব আরো বলেন, আত্মহত্যার অপরাধে জান্নাত হারাম হওয়ার পাশাপাশি হাদিসেও কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি আহত হয়ে (ধৈর্য না ধরে) আত্মহত্যা করে। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের আগেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার ওপর জান্নাত হারাম করে দিলাম।’ (বুখারী)। রাসুল (সা.) অন্যত্র বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যেই জিনিস দ্বারা আত্মহত্যা করে, কেয়ামতের দিন তাকে সেই জিনিস দ্বারাই শাস্তি দেয়া হবে। যে ব্যক্তি ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে, সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে, সে দোজখেও সেভাবে নিজেকে শাস্তি দেবে।’ (নাসাঈ)।
অন্য আরেকটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) আত্মহত্যাকারীর প্রতি প্রচণ্ড রাগান্বিত হয়ে তার জানাযার নামাজ পর্যন্ত পড়েননি। সুতরাং আত্মহত্যা প্রতিরোধে ধর্মীয় অনুশাসন মানার বিকল্প নেই। এ মহাপাপ থেকে বাঁচতে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর ভরসা এবং সবরের আমল করতে হবে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তৌফিক দান করেন, আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Abul Kalam ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৯:৩০ এএম says : 0
Complete Following of Islam is anti government comment because how will you follow complete islam under unislamic government?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন