কমিটি নিয়ে কত অপেক্ষা করবে সিলেট ছাত্রলীগ। দিন-মাস-বছর গড়িয়ে পুরো ৪ বছর ধরে কমিটিহীন সিলেট ছাত্রলীগ। একই হাল জেলা ও মহানগরের। কমিটি কমিটি বলতে বলতে হয়রান ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। গলার পানি শুকিয়ে যাচ্ছে, আশা প্রত্যাশা হচ্ছে গুড়েবালি। ধর্ণা দিচ্ছেন অভিভাবক সংগঠন আওয়ামীলীগের নেতৃস্থানীয়দের সাথে। সূত্র জানিয়েছে, কমিটিতে মাইম্যান সিলেকশনের টানাপোড়নে দীর্ঘসূত্রিতায় পড়েছে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া। এমন গ্যাঁড়াকলে পড়ে নেতৃত্ব শূন্যতায় ভুগছে সিলেট ছাত্রলীগের তাজা প্রাণ। ২০১৭ সালের অক্টোবরে সিলেট জেলা, ঠিক পরের বছর একই মাসে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হয়। সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়তা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কমিটিকে বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন ঘটেছে এরমধ্যে। কিন্তু নেতৃত্ব গঠন হয়নি সিলেট ছাত্রলীগের। এরমধ্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ সিলেট সফরে এসেছেন। কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে, নতুন কমিটি ঘোষণার বার্তাও দিয়েছেন। বাস্তবায়িত হচ্ছে না কমিটি গঠন ঘোষণা।
সম্প্রতি সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনী প্রচারণায় এসে জেলা ও মহানগর কমিটি খুব দ্রুত ঘোষণার ইঙ্গিত দিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। তাদের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি স্বপ্ন না সত্যি, তাই নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সেই বিশ্লেষণে রয়েছে হতাশার দীর্ঘশ্বাস। জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগে মেধাবী, প্রতিশ্রুতিশীল পদ প্রত্যাশীদের নেই অভাব। সেই প্রত্যাশীদের মধ্যে এমন রয়েছে, কর্মতৎপরতায় তৈরি করেছে গ্রহণযোগ্য ইমেজ। জুনিয়র কর্মীদের কাছে তারা আস্থাশীল। কমিটি না হলেও আগলে রেখেছে নেতাকর্মীদের। এসবের মধ্যে কমিটি নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে তারা। প্রশ্নের তীর ছুড়ে দিচ্ছে ছাত্রলীগ কেন এতোদিন ধরে কমিটি ঘোষণা করতে পারছে না। সরল প্রশ্নবানে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে পদপ্রত্যাশীরা। এমন প্রশ্ন বুকের মধ্যে চাপা দিলেও শান্তনা দিচ্ছেন কর্মীদের। অপেক্ষা করো কমিটি শিগগিরই আসবে। সেই আসবে কেবল সময়ের কাটায় যাচ্ছে, কিন্তু কমিটি নেই। দল ক্ষমতা, সময় অনুকূল, কমিটি ঘোষণার এ জটে খাবলে খাচ্ছে ছাত্রলীগের প্রতিশ্রুতিশীল নেতাদের। অথচ যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে কেন্দ্রের নেতারা বিভিন্নভাবে তথ্য ও তালিকা সংগ্রহ করেছেন। জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ, সাক্ষাৎকার, যোগ্যতা, তদবির এসব মিলিয়ে প্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা হলেও কেন্দ্রের চূড়ান্ত ঘোষণায় আটকে আছে সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি। যে কোন সময় কমিটি ঘোষণা হতে পারে-এই আশায় প্রহর গুনছেন দুই ডজন পদপ্রত্যাশী। ধারণা করা হচ্ছে চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ঘোষণা করা হবে কমিটি। তাই শেষ মূহুর্তে এসব পদপ্রত্যাশীদের অনেকেই এখন ঢাকামুখী। তদবিরের সর্বশেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এসব প্রার্থীদের নেতারাও। কে হচ্ছেন সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের কান্ডারি- এ আলোচনাই চলছে এখন সিলেটের সর্বত্র।
পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন কনক পাল অরুপ, জাওয়াদ খান, বিপ্লব কান্তি দাস, নাজমুল ইসলাম, সাদেকুর রহমান চৌধুরী। জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে আছেন রাহেল সিরাজ, মুহিবুর রহমান, ফারহান সাদিক, এম এস রুবেল, এম আর মুহিব, শিপু মিয়া, কাওসার উদ্দিন আহমদ, সোহাগ রাজ। মহানগর শাখার সভাপতি প্রার্থীদের মধ্যে আছেন শাহ আলম শাওন, সাদিকুর রহমান সাদিক, হুসাইন মো. সাগর, নাঈম আহমদ। একই শাখার সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীরা হলেন কিশোওয়ার জাহান সৌরভ, ময়জুল ইসলাম রাহাত ও সঞ্জয় পাশি জয়। এসব প্রত্যেক প্রার্থীরা গ্রুপিং তদবিরের পাশাপাশি পদ পেতে করোনাকালে বিভিন্নভাবে তৎপর ছিলেন। শোডাউন করেছেন দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতেও।
একাধিক সূত্র বলছে, ছাত্রলীগ কমিটিতে স্থানীয় আওয়ামীলীগের মতামত অপরিহার্য অংশ। সেই মতামতে ছাত্রলীগ রাজনীতির গৌরব এর চেয়ে নিজস্ব বলয় ভারী করার স্বার্থ হয়ে উঠেছে মূখ্য। সেই স্বার্থ এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগও কম। তারপরও নেতৃত্ব নির্বাচনে পদপ্রত্যাশীদের পারিবারিক প্রোফাইল, যুগোপযোগী পারফরমেন্স, ব্যক্তিগত ইমেজ ও স্মার্টনেসের প্রতি খেয়াল নেয়া জরুরী। কারণ ছাত্রলীগকে পরিচ্ছন্ন ও গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে ধরে রাখতে সেই বিষয়গুলো আমলে না নিলে, ‘সময়ের উত্তম ব্যবহার’ সংকটে পড়বে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন