শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

খলীফা ও খিলাফতের তত্ত্বকথা-১

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

পৃথিবী সৃষ্টির শুভ লগ্ন হতে শুরু করে পৃথিবী বিলয় পর্যন্ত একটা অখণ্ড সময় অতিক্রম করছে পৃথিবী ও তার বাসিন্দারা। এই অখণ্ড সময়কে ভাগ করে পৃথিবীবাসীদের চলার পথকে সহজতর করে দেয়া হয়েছে। যেমন, সেকেণ্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন-রাত, সপ্তাহ, মাস, বছর, যুগ, কাল, কালান্তর ইত্যাদি। এই ব্যবস্থাপনা আল্লাহপাক নিজেই করে দিয়েছেন। তারপরও সৃষ্টির সেরা মানুষ এই অখণ্ড সময়কে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করে চলেছে। কারণ, মানুষ এই পৃথিবীতে আল্লাহর ‘খলীফা’ বা প্রতিনিধি। প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে পারঙ্গম।

আল কোরআন গভীর মনোযোগের সাথে অধ্যায়ন করলে দেখা যায় যে, মহান আল্লাহপাক সরাসরি খলীফা শব্দটি আল কোরআনে দু’বার ব্যবহার করেছেন। যথা: (ক) আর (স্বরণ কর সে সময়ের কথা) যখন তোমার পালনকর্তা ফিরিশতাদেরকে বললেন: আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ‘ফিরিশতাগণ বলল, আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে দাঙ্গা হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা সর্বদাই আপনার গুণকীর্তন করছি এবং আপনার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন: নিঃসন্দেহে আমি যা জানি, তোমরা তা জান না। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-৩০)।

(খ) হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল খুশির অনুস্বরণ কর না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি, এ কারণে যে, তারা হিসাব দিবসকে ভুলে যায়। (সূরা সোয়াদ : আয়াত-২৬)।

উল্লিখিত দু’টি আয়াতের প্রথমটিতে ‘খলীফা’ শব্দের দ্বারা সামগ্রিকভাবে প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্বপালনের কথা বুঝানো হয়েছে এবং দ্বিতীয়টিতে বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ন্যায়সঙ্গতভাবে ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এতে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, মানুষের ব্যক্তিগত জীবন হতে শুরু করে, পারিবারিক, সামাজিক এবং দেশ ও জাতীয় জীবনের সকল অঙ্গনে এমনকি গোটা বিশ্বের সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে ন্যায়পরায়ণতার সাথে সকল মানুষ প্রতিনিধিকে নির্দেশ পালন করতে হবে। অন্যথায় প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্ব পালন করা হবে না এবং কঠোর শাস্তির নিগঢ় হতেও রেহাই পাওয়া যাবে না।

আর ‘খলীফা’ শব্দটির বহুবচন ‘খুলাফা’ শব্দটি আল কোরআনে তিনবার ব্যবহৃত হয়েছে। যথা: (ক) তোমরা কি আশ্চর্য বোধ করছ যে, তোমাদের কাছে, তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকেই একজনের বাচনিক উপদেশ এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে। তোমরা স্মরণ কর, যখন আল্লাহ তোমাদেরকে কাউমে নূহের পর ‘খলীফা’ (প্রতিনিধি) করেছেন এবং তোমাদের দেহের বিস্তৃতি বেশি করেছেন। তোমরা আল্লাহর নেয়ামতসমূহ স্মরণ কর যাতে তোমাদের মঙ্গল হয়। (সূরা আ’রাফ : আয়াত-৬৯)।

(খ) তোমরা স্মরণ কর, যখন তোমাদেরকে আদ জাতির পরে খলীফা করেছেন, তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠিকানা দিয়েছেন। তোমরা নরম মাটিতে অট্টালিকা নির্মাণ কর এবং পর্বত গাত্র খনন করে প্রকোষ্ঠ নির্মাণ কর। অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি কর না। (সূরা আ’রাফ : আয়াত-৭৪)।
বলতো কে অসহায়দের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের খলীফা (স্থলাভিষিক্ত) করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই চিন্তা-ফিকির কর। (সূরা নামল : আয়াত-৬২)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মেঘদূত পারভেজ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৯ এএম says : 0
এই শাসনব্যবস্থায় সার্বভৌমত্বের অধিকারী একমাত্র মহান আল্লাহ। তিনিই বিশ্বজগতের স্রষ্টা এবং সর্বোচ্চ শাসক। মানুষের মর্যাদা হলো, সে সর্বোচ্চ শাসকের প্রতিনিধি বা খলিফা এবং তার রাজনৈতিক ব্যবস্থা হবে সর্বোচ্চ শাসকের বিধানের অধীন।
Total Reply(0)
হাদী উজ্জামান ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩০ এএম says : 0
খলিফার কাজ হলো, সর্বোচ্চ শাসক আল্লাহর আইনকে তাঁর প্রকৃত লক্ষ্য অনুযায়ী কার্যকর করা এবং তাঁর নির্দেশিত পথে রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করা।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩০ এএম says : 0
খিলাফত সম্পর্কে খুলাফায়ে রাশেদিন এবং রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাহাবিদের সর্বসম্মত অভিমত ছিল, খিলাফত একটি নির্বাচনভিত্তিক পদমর্যাদা। মুসলমানদের পারস্পরিক পরামর্শ এবং তাঁদের স্বাধীন মতামত প্রকাশের মাধ্যমেই তা কায়েম করতে হবে।
Total Reply(0)
মোঃ নাজমুল ইসলাম ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩০ এএম says : 0
বংশানুক্রমিকভাবে বা বল প্রয়োগের দ্বারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া কিংবা নেতৃত্ব দেয়া তাদের মতে খিলাফত নয়, বরং তা রাজতন্ত্র।
Total Reply(0)
তৌহিদুজ জামান ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩১ এএম says : 0
খিলাফত ও রাজতন্ত্রের যে স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ধারণা সাহাবিরা পোষণ করতেন, হজরত আবু মূসা আল-আশ‘আরি রা: তা ব্যক্ত করেছেন এভাবে ‘খিলাফত হচ্ছে তাই, যা প্রতিষ্ঠা করতে পরামর্শ নেয়া হয়েছে। আর তরবারির জোরে যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা হচ্ছে বাদশাহী বা রাজতন্ত্র।’
Total Reply(0)
সোয়েব আহমেদ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩১ এএম says : 0
ইসলামের এই খিলাফত ব্যবস্থা সর্বজনীন। আল্লাহর এই প্রতিনিধিত্বের অধিকার বিশেষ কোনো ব্যক্তি, পরিবার কিংবা বিশেষ কোনো শ্রেণীর জন্য নির্দিষ্ট বা সংরক্ষিত নয়। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাসী এবং তাঁদের বিধান ও আইন মান্যকারী সব মানুষই আল্লাহর দেয়া এই প্রতিনিধিত্বের সমান অধিকারী।
Total Reply(0)
তারেক আজিজ ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩১ এএম says : 0
আনাস ইবন মালিক রা: বলেন, ‘নবী সা: একদা হজরত আবু বকর, হজরত ‘উমর ও হজরত ‘উসমান রা:-সহ উহুদ পাহাড়ে আরোহণ করলে পাহাড় তাঁদের নিয়ে (আনন্দে) দুলতে থাকে। তখন নবী সা: বললেন, ‘হে উহুদ! স্থির থাক। কেননা তোমার উপরে একজন নবী, একজন সিদ্দিক ও দু’জন শহীদ আছে।’ (সহিহ বুখারি)।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন