বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কোরআন মাজীদে মোহর : বিধান ও শিক্ষা

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

ইসলামের যে বিধানগুলো স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বারবার বিভিন্ন আয়াতে বয়ান করেছেন তার অপরিহার্যতা বলার অপেক্ষা রাখে না। মানুষের অবহেলা ও অমনোযোগিতার কারণে সেসব বিধান সমাজের চোখে গুরুত্বহীন হয়ে গেলেও আল্লাহর কাছে তা গুরুত্বহীন নয়।

ঐসব বিধানের অন্যতম হচ্ছে নারীর মোহর। কত প্রসঙ্গে কতভাবে যে আহকামুল হাকিমীন আল্লাহ এই বিধানটি বয়ান করেছেন! বিবাহ-বন্ধনের প্রসঙ্গে, বিবাহ-বিচ্ছেদের প্রসেঙ্গ, ঈমানদার ব্যক্তি ও সমাজের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে, জাহেলী সমাজের বর্বরতা রোধ প্রসঙ্গে মোটকথা অনেকভাবে অনেক জায়গায় মোহরের বিধান বর্ণনা করেছেন।
তাই কোরআন মজীদে যেমন আছে এর আইন ও বিধানগত দিক তেমনি আছে নৈতিক ও মানবিক দিক, যা মুমিনের চিন্তা ও মস্তিষ্কের পাশাপাশি আলোড়িত করে তার কলব ও হৃদয়কেও। এই সব কিছুর সাথে মুমিন নর-নারীকে স্মরণ করানো হয়েছে আল্লাহর আদালত ও বিচার-দিবসের অমোঘ সত্যের কথা। তাই একমাত্র কোরআনই পারে নারী-পুরুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং সঠিক পথের দিশা দিতে যদি তারা সমর্পিত হয় কোরআনের বিধান ও শিক্ষার প্রতি।

বিয়েতে মোহর অপরিহার্য : উল্লিখিত নারীরা ছাড়া অন্যদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, যে স্বীয় সম্পদ দ্বারা প্রয়াসী হবে তাদের সাথে বিবাহবন্ধনে, ব্যভিচারে নয়। অতএব তাদের নিকট থেকে তোমরা যে আনন্দ উপভোগ করেছ (সে কারণে) তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে প্রদান করবে। আর মোহর নির্ধারিত থাকার পরও কোনো বিষয়ে পরস্পর সম্মত হলে তাতে তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।-(সূরা নিসা : ২৪)।

এই আয়াতে বিয়ে-শাদি সম্পর্কে কিছু মৌলিক বিধান দেওয়া হয়েছে, যার বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে হাদীস শরীফে। এই আয়াত থেকে যে বিধানগুলো পাওয়া যায় তা হচ্ছে : ১. ‘মুহাররামাত’ (যাদের সাথে বিবাহ হারাম করা হয়েছে) ছাড়া অন্যদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ। কোরআন মাজীদে ও হাদীস শরীফে মুহাররামাতের বিবরণ ও আনুষঙ্গিক বিধানাবলি দেওয়া হয়েছে।
২. মোহর ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ফরয এবং বিয়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। মোহর ছাড়া বিয়ে হয় না। আকদের সময় উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেওয়ার শর্ত করলেও মোহর বাতিল হয় না। ৩. স্বামীর কর্তব্য যথাযথভাবে মোহর পরিশোধ করা।

৪. বিয়ের পর সহবাস হলে (কিংবা একান্তে সাক্ষাত হলে, যাকে পরিভাষায় ‘খালওয়াতে সহীহা’ বলে), পূর্ণ মোহর আদায় করা অপরিহার্য। সুতরাং আকদের সময় মোহর ধার্য করা হলে ধার্যকৃত পূর্ণ মোহর আর ধার্য না হয়ে থাকলে মোহরে মিছ্ল দিতে হয়।

৫. ধার্যকৃত মোহর থেকে স্ত্রী যেমন কিছু ছেড়ে দিতে পারে তেমনি স্বামীও কিছু বেশি দিতে পারে। স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে হলে এতে কোনো দোষ নেই। ৬. মোহর এমন কিছু হতে হবে, যা শরীয়তের দৃষ্টিতে ‘মাল’ (সম্পদ) বলে গণ্য। মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ কোরআন মাজীদে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি। হাদীস, আছার ও শরীয়তের অন্যান্য দলিলে তা বলা হয়েছে। ফিকহে হানাফী অনুসারে সর্বনিম্ন মোহর দশ দিরহাম। ৭. বিয়েতে ইজাব-কবুল ও সাক্ষী অপরিহার্য। এই শর্তগুলোর বিস্তারিত ব্যাখ্যা হাদীস শরীফে রয়েছে।

উপরোক্ত বিধানগুলো ছাড়াও একজন মুমিন এই আয়াত থেকে আরো কিছু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। যেমন : ১. মোহর যদিও একটি মধুর লেনদেন এবং ঐভাবেই তা আদায় করা উচিত, তবে তা নিছক উপহার নয় যে, ইচ্ছা হলে দেওয়া যায়, ইচ্ছে হলে বিরত থাকা যায়; বরং তা হলো স্ত্রীর প্রাপ্য অধিকার। স্ত্রী যেমন প্রীতি ও ভালোবাসার সাথে নিজেকে অর্পণ করেছে, স্বামীরও কর্তব্য সম্মান ও মর্যাদার সাথে তার মোহর আদায় করা।
২. স্ত্রীর মোহর ফাঁকি দেওয়া অতি হীন কাজ। কারণ এর অর্থ দাঁড়ায়, ভোগ করতে রাজি, কিন্তু বিনিময় দিতে রাজি নয়। যে স্বামীর মনে স্ত্রীর মোহর আদায়ের ইচ্ছাটুকুও নেই হাদীস শরীফে তাকে বলা হয়েছে ‘ব্যাভিচারী’। (মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/৫২২-৫২৩)।

৩. অনেক বড় অংকের মোহর ধার্য করা যেমন শরীয়তে কাম্য নয় তেমনি তা একেবারে তুচ্ছ ও সামান্য হওয়াও উচিত নয়। মোহরের পরিমাণ এমন হওয়া চাই, যা সাধারণত আগ্রহের বিষয় হয়। নবী (সা.) এর সুন্নাহ ও সাহাবায়ে কেরামের সাধারণ রীতি এক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদীস :
আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, আমি (উম্মুল মুমিনীন) আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী পরিমাণ মোহর দিয়েছেন? তিনি বললেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদেরকে সাড়ে বারো উকিয়া অর্থাৎ পাঁচশ’ দিরহাম মোহর দিয়েছেন।’ (সহীহ মুসলিম : ১৪২৬)।
আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমাদের মোহর ছিল দশ উকিয়া (চারশ’ দিরহাম)। (সুনানে নাসায়ী : ৬/১১৭)।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
নোমান মাহমুদ ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
দ্বীন-ধর্মকে ভালোবাসেন এবং নামাজ-রোজা করেন এমন অনেক মানুষও মোহরের বিষয়ে সচেতন নন। এ বিষয়ে উদাসীনতা এত প্রকট যে, অনেকে নফল নামাজ পড়াকে যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, মোহর আদায়কে তার সিকি ভাগও মনে করেন না। অথচ তা একটি ফরজ বিধান ও বান্দার হক, যা আদায় করা ছাড়া মানুষ প্রকৃত দ্বীনদার হতে পারে না।
Total Reply(0)
রেজাউল করিম ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করতে হবে; এটা স্বামী কর্তৃক প্রদেয় স্ত্রীর জন্য ইসলাম কর্তৃক নির্ধারিত অধিকার বিশেষ।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
দেনমোহর আদায় করা ফরজ এবং এটা বিয়ে বৈধ করার মাধ্যমও বটে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে দেনমোহর নামেমাত্র নির্ধারণ করা হয়। অনেকটা যেন নিয়ম রক্ষার বিষয়!
Total Reply(0)
ক্ষণিকের মুসাফির ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
বিয়ের কাবিননামার ফরমে দেনমোহরের পরিমাণ লিখতে হয় তাই লেখা! হাতেগোনা কয়েকজন বাদে বিয়েবিচ্ছেদজনিত কারণ ছাড়া স্ত্রীকে খুশি মনে দেনমোহর প্রদান করেছেন এমন নজির খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
Total Reply(0)
নাকিব নাকিব নাকিব ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:১৮ এএম says : 0
সমাজের অনেকেই দেনমোহরকে নারীর বৈবাহিক জীবনের একটি ‘বন্ড’ মনে করে থাকেন। এ ধারণা একেবারেই অমূলক। বিয়েতে দেনমোহর প্রদান প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমের সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের মোহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে। ’
Total Reply(0)
Anwar ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১০:৫৮ এএম says : 0
স্ত্রীর মোহর ফাঁকি দেওয়া অতি হীন কাজ। কারণ এর অর্থ দাঁড়ায়, ভোগ করতে রাজি, কিন্তু বিনিময় দিতে রাজি নয়। যে স্বামীর মনে স্ত্রীর মোহর আদায়ের ইচ্ছাটুকুও নেই হাদীস শরীফে তাকে বলা হয়েছে ‘ব্যাভিচারী’। (মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/৫২২-৫২৩)।
Total Reply(0)
md Ziaur Rahman ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৩২ এএম says : 0
পঁাচ লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে নগদ ১০০/-কোন ব্যবসায়ী কি ৫০০০০০/-মাল আজীবনের জন্য বাকি রাখবে?তাহলে দেনমোহরের বেলায় এমন কেন? দোকানে বাকি রাখলে হালখাতায় পরিশোধ করতে হয়। এ কোন ব্যবসা যে দেনমোহরের বেলায় আজীবন বাকি। হে মুমিন আল্লাহ কে ভয়কর এবং নিজের মানসিকতা পরিবর্তন করো।
Total Reply(0)
মোঃ ইয়াকুব আলী বরনী ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪৬ এএম says : 0
শরিয়ত মোতাবেক বাংলাদেশী টাকায় মহরের সর্বনিম্ন পরিমান কত?
Total Reply(0)
মোঃ নজরুল ইসলাম ২১ মে, ২০২২, ৮:৫৪ এএম says : 0
ইসলামে মোহরানা ফরজ ও তা পরিশোধ করতেই হবে।কিন্ কিম্তু ছেলের পরিশোধের সমর্থন কতটুকু আছে, তা আর কেউ আর এটা তোয়াক্কা না করে, ছেলের উপর মেয়ে পক্ষ জোর করে হলেও বিশাল একটা অংক চাপিয়ে দেয় যা, ছেলের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। এটাকে ইসলাম কতটুকু সমর্থন করে জানিনা। বা এটা মেয়ে পক্ষের জোর করে চাপানো ঠিক কিনা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন