বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

আইপি টিভির নামে যথেচ্ছাচার বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

ইন্টারনেট ও তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বিস্তার গণমাধ্যমের গতানুগতিক ধারণাকে ভেঙ্গে দিতে বসেছে। কোটি কোটি মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, নোটপ্যাডে তথ্যের অবাধ প্রবাহ মূলধারার গণমাধ্যম তথা সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও, সিনেমা-থিয়েটার, ডিকশনারী, লাইব্রেরীর বিকল্প মাধ্যম হয়ে উঠেছে। একেকটি মূলধারার সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলের সাথে কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ, সাংবাদিক-সম্প্রচার কর্মীসহ শত শত মানুষের কর্মসংস্থান, সরকারি অনুমোদন ও নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত হলেও ইন্টারনেটভিত্তিক টেলিভিশন (আইপি টিভি), ইউটিউব চ্যানেল বা ফেসবুক পেজ খুলতে তেমন কোনো বিনিয়োগ, দক্ষ জনবল বা অবকাঠামোগত ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় না। এ কারণেই একপশ্রণীর মানুষ নিজ খেয়াল খুশিমত ইউটিউব চ্যানেল বা আইপি টিভি খুলে নিজেকে টিভি চ্যানেলের মালিক-সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নানাভাবে সুবিধা গ্রহণের প্রয়াস চালাতে দেখা যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে সারাদেশে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত যে কেউ আইপি টিভি চ্যানেল খুলে মনের মাধুরি মিশিয়ে নিজের খেয়াল খুশিমত নানা তথ্য সম্প্রচার করছে। কোনো সাবস্ক্রিপশন ফি না থাকায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন ও সাবস্ক্রিপশন নিচ্ছে অনেকেই। যেখানে মূল ধারার পত্রিকা ও সম্প্রচারমাধ্যম কোটি কোটি টাকা খরচ করে সরকারি নীতিমালা মেনে সংবাদ ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান নির্মাণ ও সম্প্রচার করছে, সেখানে এসব অনুমোদনহীন আইপি টিভি যথেচ্ছভাবে অনুষ্ঠান তৈরী ও সম্প্রচার করে গণমাধ্যম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে ভুল মেসেজ দিচ্ছে।

একদিকে নামে-বেনামে পরিচালিত বিনা পয়সার আইপি টিভি চ্যানেলগুলো মূল ধারার চ্যানেলগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিচ্ছে, অন্যদিকে এসব চ্যানেলের অদক্ষ পরিচালক ও মতলববাজির প্রচারণায় মানুষের রুচি বিকৃতি ঘটাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের জাতীয় স্বার্থ, সামাজিক নিরাপত্তা ও মূল্যবোধের পরিপন্থী প্রচারণা চললেও, তা দেখার যেন কেউ নেই। দেশে ইতিমধ্যে ২০১৭ সালে একটি জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা গেজেটেড আকারে গৃহীত হলেও এখনো পর্যন্ত অনলাইন টিভির অনুমোদন বা রেজিস্ট্রেশনের কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। এ মুহূর্তে দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার আইপি টিভি চালু থাকলেও নিবন্ধন বা অনুমোদনের উপর নির্ভরশীল না হওয়ার এর প্রকৃত সংখ্যা কত সে হিসাব কারো কাছেই নেই। ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলের নাম ভাঙ্গানো একশ্রেণীর মতলববাজ আইপি টিভি খুলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করে ভুয়া সংবাদ পরিবেশন করে চাঁদাবাজি ও ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। অনুমোদনহীন, মানহীন, মিথ্যা, বিকৃত তথ্য, ভুয়া ও অশ্লীল ভিডিও ক্লিপিং ভাইরাল করে এসব আইপি টিভি রাতারাতি খ্যাতি অর্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। সরকারি দলের সাথে সম্পৃক্ত এক শ্রেণীর ব্যক্তি আইপি টিভির মাধ্যমে প্রচারণা ও চাঁদাবাজি করার তথ্য জানাজানি হয় সম্প্রতি বহিষ্কার হওয়া আওয়ামী লীগ নেত্রী হেলেনা জাহাঙ্গীরের জয়যাত্রা টিভির অপতৎপরতার মাধ্যমে।

আইপিটিভি খুলে জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে বিদেশে ব্যুরো অফিসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অর্থকড়ি আদায়ের রাস্তা খোলা হলেও সাধারণ মানুষ জানে না এগুলো অবৈধ, অনুমোদনহীন, মানহীন ও ভূঁইফোড় অনলাইন সম্প্রচার চ্যানেল। এ ধরনের অনলাইন ভিত্তিক যথেচ্ছ সম্প্রচার চ্যানেল দেশের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের সুযোগে বিশ্বের সর্বত্রই এ ধরণের চ্যানেল বেড়ে চলেছে। কোনো দেশের নীতিমালা বা নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় এসব নিয়ন্ত্রণ করা হয়তো সহজ নয়। এসব টিভি চ্যানেলের নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অবশ্যই আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নীতিমালা অনুসরণ করা অপরিহার্য। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত টিভি চ্যানেলের অনুকরণে নাম ও লোগো ব্যবহার করে আইপি টিভির মালিকানা ও সাংবাদিকতার নামে নিরপরাধ মানুষের মানহানি, প্রতারণা, চাঁদাবাজি, অশ্লীল ও মানহীন প্রচারণা বন্ধ করা উচিৎ। এসব চ্যানেলের দায়বদ্ধতা না থাকায় যে যেভাবে পারছে নিজের মতো করে তথ্য, বক্তব্য ও মতবাদ প্রচার করছে। সাধারণ মানুষের পক্ষে এসব যাচাই করা সম্ভব নয়। ফলে অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছে। কোনটি সঠিক, কোনটি বেঠিক-এ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। সরকার আইপি টিভির নীতিমালা প্রণয়ন ও অনুমোদনের কথা বললেও এখন পর্যন্ত তার কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। আমরা মনে করি, তথ্য-বিভ্রাট ও অপপ্রচার কিংবা ভুল মতবাদ রোধে আইপি টিভির বৈধ অনুমোদনের বিষয়টি দ্রুত বাস্তবায়ন করা জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না, মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর অনলাইন সম্প্রচার মাধ্যমও জাতীয় স্বার্থে জনসচেতনতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্য পরিষেবা সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এ কারণে, অনলাইন টিভি ও সম্প্রচার মাধ্যমের মানরক্ষা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন