বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

ইসলামে পুত্র-কন্যার মাঝে সমতা : কিছু নির্দেশনা

আবদুল্লাহ ফাহাদ | প্রকাশের সময় : ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

হাদীস শরীফে কন্যাসন্তানের লালন-পালনের ছওয়াব ও ফজিলত যেমন আছে তেমনি আছে তার অধিকারসমূহের বর্ণনা। রাসূলুল্লাহ (সা.) স্পষ্টভাষায় নারীর অধিকারসমূহ বলে দিয়েছেন। আর এই অধিকারগুলো প্রধানত এমন, যা থেকে নারীকে বঞ্চিত করা হতো জাহেলি যুগে। বর্তমানে যুগের অবস্থাও তা থেকে ভিন্ন নয়। তাই এখানে তাদের অবহেলিত কিছু অধিকারের কথা আলোচনা করা হলো, যেন এই অবহেলার নিরসন হয়।

সন্তানদের প্রতি মমতা প্রকাশে সমতা : কারো কাছে পুত্রসন্তান বেশি প্রিয়, কারো কাছে কন্যাসন্তান। তবে অধিকাংশ মানুষই পুত্রসন্তান বেশি পছন্দ করে। মমতা ও মনের টান যেহেতু মানুষের ইচ্ছাধীন নয় তাই কারো প্রতি মনের টান বেশি হলে বা কম হলে মানুষ অপরাধী হয় না, কিন্তু এর প্রকাশটি যেহেতু মানুষের ইচ্ছা ও ইখতিয়ারের অধীন তাই এ বিষয়ে সমতা বজায় রাখা অপরিহার্য। অনেকে এই সমতা রক্ষা করে না।

পুত্র-কন্যার মাঝে অসম আচরণ করে। পুত্রকে বেশি আদর করে, উপহার বেশি দেয়, বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যায়। পক্ষান্তরে কন্যার খোঁজখবরও নিতে চায় না। আচার-আচরণে পিতামাতা থেকে এমন কিছু প্রকাশ পাওয়া উচিত নয়, যা দ্বারা সন্তানের মনে এই সংশয় জাগে যে, মা-বাবা অমুককে বেশি স্নেহ করেন, আমাকে কম। সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার এমন অসম আচরণ অন্যায়। কিয়ামতের দিন এ জন্য তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।

হাদীসের প্রসিদ্ধ ও প্রাচীন গ্রন্থ ‘মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক’-এ ইমাম আবদুর রাযযাক ইবনে হাম্মাম বর্ণনা করেন, জনৈক আনসারী সাহাবীকে রাসূলুল্লাহ (সা.) ডাকলেন। ইতোমধ্যে ওই সাহাবীর এক পুত্র তার কাছে এলো। তিনি তাকে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং কোলে বসালেন। কিছুক্ষণ পর তার এক কন্যাও সেখানে উপস্থিত হলো। তিনি তার হাত ধরে নিজের কাছে বসালেন। এটি লক্ষ করে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, উভয় সন্তানের প্রতি তোমার আচরণ অভিন্ন হওয়া উচিত ছিল। তোমরা নিজেদের সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা করো। এমনকি চুমু খাওয়ার ক্ষেত্রেও। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক : ৯/১০০)।

সকল সন্তানকে সমান উপহার দেওয়া : সন্তানদের প্রতি আদর-স্নেহ প্রকাশের মতো হাদিয়া-উপহারের ক্ষেত্রেও সমতা রক্ষা করা জরুরি। সুতরাং পিতামাতা যখন সন্তানদেরকে টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড় কিংবা কোনো খাদ্যদ্রব্য দিবেন তখন সকলকে সমান হারে দিতে হবে। কন্যাকে ঠিক ততটুকুই দিবে যতটুকু পুত্রকে দেওয়া হয়েছে। ছেলেকে বেশি আর মেয়েকে কম কিংবা এর বিপরীত করা যাবে না। বিশেষকরে আনন্দের উপলক্ষগুলোতে যখন সন্তানদেরকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু দেওয়া হয় তখনও সমতা রক্ষা করা অপরিহার্য। যেমন ঈদের দিনে ঈদি সমান হারে দেওয়া, কোনো সফর থেকে ফেরার পর হাদিয়া-উপহার দিলে সবাইকে সমান দেওয়া ইত্যাদি

হাদীস শরীফে আছে, বশীর ইবনে সাদ রা. একবার নিজপুত্র নুমান ইবনে বশীরকে কিছু জিনিস হাদিয়া করলেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে স্বাক্ষী বানানোর জন্য নুমানকে তাঁর নিকট নিয়ে এলেন। নবী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি তোমার সকল সন্তানকে এরুপ উপহার দিয়েছ? তিনি বললেন, জ্বী না। নবী (সা.) ইরশাদ করলেন, আল্লাহকে ভয় করো এবং সন্তানদের মাঝে সমতা রক্ষা কর। (আর এতটুকু চেষ্টা অবশ্যই কর যে, উপহার-সদাচার ইত্যাদির ক্ষেত্রে প্রত্যেকের অংশ যেন কাছাকাছি হয়)। (সহীহ মুসলিম : ৪০৫৯)।

প্রয়োজনের ক্ষেত্রগুলো ব্যতিক্রম : পিতামাতা যদি কোনো সন্তানের প্রয়োজনের খাতিরে অন্যদের চেয়ে তার পিছনে কিছুটা বেশি খরচ করে, যেমন কারো অসুস্থতার সময় কিংবা পড়াশোনার জন্য অথবা ছেলে বা মেয়ে কোনো সফরে যাচ্ছে; একজনের সফর অল্প সময়ের, অন্যজনের সফর দীর্ঘ, একজনের সফরে অর্থের প্রয়োজন বেশি, অন্যজনের কম এ ধরনের ক্ষেত্রগুলোতে তাদেরকে প্রয়োজন অনুপাতে কম-বেশি দিলে দোষ নেই। যে সন্তানের যতটুকু প্রয়োজন পিতামাতা তার জন্য ততটুকু খরচ করতে পারেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
এস এ তুহিন ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:২৬ এএম says : 0
ইসলামের প্রতিটি বিধানই মানব জাতির জন্য কল্যাণকর
Total Reply(0)
লিয়াকত আলী ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৬ এএম says : 0
আমরা যে কথাটি সব সময় বলে এসেছি এবং আমৃত্যু বলে যাব, তা হচ্ছে, নারীর কুরআনী অধিকার প্রতিষ্ঠা করুন। ব্যক্তি ও পরিবার, সমাজজ ও রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রে তা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এটিই নারীর মুক্তি ও মর্যাদার একমাত্র পথ।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৭ এএম says : 0
আজ মুসলিম সমাজের প্রতিটি পুরুষকে শপথ করতে হবে যে, আমি ব্যক্তি জীবনে নারীর সকল প্রাপ্য যথাযথভাবে পরিশোধ করব, তেমনি সমাজ-জীবনেও তাঁর কুরআনী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি নিয়োজিত করব।
Total Reply(0)
হেদায়েতুর রহমান ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৭ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুই ভাগে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ আর নারী। এভাবে সৃষ্টি করা আল্লাহ তাআলার হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। তবে আল্লাহ তাআলা কাউকে শুধু কন্যা সন্তানই দান করেন। আবার কাউকে পুত্র সন্তান। কাউকে আবার পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন। কাউকে কাউকে আবার কোনো সন্তানই দান করেন না। এ বণ্টনও আল্লাহ তাআলার বিশেষ হিকমত ও কল্যাণ-জ্ঞানের ভিত্তিতেই হয়।
Total Reply(0)
টুটুল ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:২৮ এএম says : 0
সন্তানদের প্রতি আদর-স্নেহ প্রকাশের মতো হাদিয়া-উপহারের ক্ষেত্রেও সমতা রক্ষা করা জরুরি। সুতরাং পিতামাতা যখন সন্তানদেরকে টাকা-পয়সা, কাপড়-চোপড় কিংবা কোনো খাদ্যদ্রব্য দিবেন তখন সকলকে সমান হারে দিতে হবে।
Total Reply(0)
ইলিয়াস ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩০ এএম says : 0
ইসলামের আলোকে সুন্দর দিক নির্দেশনামুলক একটি লেখা। লেখক ও দৈনিক ইনকিলাবকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)
শরীফ খুরশীদ আলম ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩১ এএম says : 0
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলাম পুর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশনা প্রদান করেছে, যা আমাদের জন্য সব সময় কল্যাণ বয়ে আনে
Total Reply(0)
সোলায়মান ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩২ এএম says : 0
পূর্ণ খুশি ও সন্তুষ্টির সাথে যেভাবে ছেলেদের লালনপালন করা হয় ঠিক সেভাবেই মেয়েদেরও লালনপালন করতে হবে- এটাই ইসলামের শিক্ষা
Total Reply(0)
গোলাম মোস্তফা ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৩ এএম says : 0
আমরা যদি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে সমাজে কোন বৈষম্য থাকবে না, ইনশা আল্লাহ
Total Reply(0)
এনায়েতুল্লাহ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩৪ এএম says : 0
দৈনিক ইনকিলাবে এই বিভাগের লেখাগুলো আমাদের প্রতিদিন ইসলাম সম্পর্কে আর ভালোভাবে জানার সুযোগ করে দিয়ে। তাই তাদের জন্য দোয়া রইলো।
Total Reply(0)
মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৪৩ এএম says : 0
সবার কথা ঠিক আছে,ছেলে এবং মেয়ে উভয়ে ইসলামী শরিয়তে চলতে হবে,মেয়ে সন্তান শরিয়ত মোতাবেক না চলতে চাইলে কি করতে হবে,
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন