শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিকন্দী শরফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস ছামাদ মাষ্টার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর দায়রা ও জজ আদালতের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক মো. মনির কামাল ১৫ সেপ্টেম্বর বুধবার এ রায় ঘোষনা করেন। রায়ে চার আসামীকে মৃত্যুদন্ড ও ৯ আসামীকে যাবজ্জীবন কারদন্ড দেয়া হয়েছে।
২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারী সন্ধ্যায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় ছামাদ মাষ্টারকে। তিনি সদর উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
রায়ে চাঁন মিয়া খান, নুরুজ্জামান খান, জাহাঙ্গীর মাদবর ও জুলহাস মাদবরকে মৃত্যুদন্ড ও আব্দুল হালিম মোল্যা, ফারক খান, আজিজুর মাদবর, জলিল মাদবর, আজাহার মাদবর, লাল মিয়া মীর, মিজান মীর, এমদাদ মাদবর ও আক্তার গাজীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। ঘটনার সময় যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আব্দুল হালিম মোল্যা চন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। আর মামলা থেকে খালাস দেয়া হয়েছে আজিবর বালি, খোকন ব্যাপারী, সোহরাব মোল্যা, আজাহার মোল্যা ও আব্দুল খন্দকারকে। খালাস পাওয়া আজিবর বালি মাদারীপুর সদরের ছিলারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
মামলার বিবরণে জানাযায়, ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারী শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টার দিকে সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের ল²ীর মোর বাসস্ট্যান্ডে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় আব্দুস ছামাদ মাষ্টারকে। ১৭ জানুয়ারী নিহত ছামাদ মাষ্টারের স্ত্রী ফেরদৌসী আজাদ তৎকালীন চন্দ্রপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম মোল্লাকে প্রধান আসামী করে ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরপর দীর্ঘ ৮ বছর মামলার তেমন কোন অগ্রগতি না থাকায় ২০১৮ সালে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার জন্য আবেদন জানান মামলার বাদী। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে-৩ এ স্থানান্তর করা হয়। ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। গত মার্চ মাসে মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর এ মামলার দুপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ করা হয়। ১৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযুক্ত ১৮ জনের মধ্যে ১৭ জন কারাগারে রয়েছে।
নিহত আব্দুস ছামাদ মাষ্টার চিকন্দি শরফ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০১০ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিয়েছিলেন। এর আগে ২০০৩ সালে চন্দ্রপুর ইউপি নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচন নিয়ে বিরোধে তাকে হত্যা করা হয়।
আব্দুস ছামাদ মাষ্টারের স্ত্রী মামলার বাদী ফেরদৌসী আজাদ বলেন, আমার স্বামী একজন জনপ্রিয় মানুষ ছিলেন। নির্বাচনের আগে তখনকার চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম মোল্লা তার লোকজন নিয়ে আমার স্বামীকে নির্মম ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। মামলার রায়ের জন্য দীর্ঘ ১১ বছর অপেক্ষা করেছি। রায় ভাল হয়েছে। কিন্তু এ হত্যাকান্ডের অন্যতম মাষ্টারমাইন্ড আজিবর বালি খালাস পাওয়ায় আমরা বিস্মিত, হতাশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন