শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জোর লড়াই চালিয়ে যেতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। শিশুদের কলরবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুখরিত হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থী,অভিভাবক,দেশবাসী উচ্ছ্বসিত হয়েছে। ইউনিসেফ পর্যন্ত স্বাগত জানিয়েছে। স্কুল ড্রেস, বইখাতা কেনার ধুম পড়েছে। ভর্তি হওয়া শুরু হয়েছে। তবে, প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সশরীর ক্লাস বন্ধই আছে। বন্যা কবলিত এলাকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলেনি। এছাড়া, পঞ্চম শ্রেণি, এসএসসি ও এইচএসসির সব দিনই ক্লাস হলেও অন্য শ্রেণির ক্লাস হবে সপ্তাহে একদিন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস হবে। পিইসি, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে। সব ক্লাসের বার্ষিক পরীক্ষাও নেয়ার সম্ভাবনা আছে। আগামী নভেম্বরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মেডিকেল কলেজ খুলেছে।অন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ও খোলার প্রক্রিয়া চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য ৩৭টি গাইডলাইনও দেয়া হয়েছে। তবে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, করোনার সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় বন্ধ করে দেয়া হবে। আমেরিকা ও ভারতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। এছাড়া দেশে ডেঙ্গুর খুব প্রকোপ চলছে।

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে গত ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একনাগাড়ে ৫৪৪ দিন দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। ইউনেস্কো বলেছে, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। ফলে ৪ কোটির অধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তাদের শিক্ষায় যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হবে না। এছাড়া, প্রায় ৩০% শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে বলে অনুমেয়। তাদের অনেকেই কর্মে নিযুক্ত হয়েছে। আবার অনেকে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। অন্যদিকে, উপার্জন বন্ধ হওয়ায় বহু অভিভাবক শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাওয়ায় তাদের সন্তানদের শিক্ষা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সর্বোপরি, সব শিক্ষার্থী ঘরে বন্দি থাকায় মানসিকভাবে পর্যদস্তু হয়েছে। বিপথে গেছে অনেকেই। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকও আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অপরদিকে,সারা দেশে প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল। সেখানে প্রায় ১০ লক্ষ শিক্ষক ও প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী ছিল। কিন্তু করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ১০ হাজার কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরও ১০ হাজার বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া, বেসরকারি পর্যায়ে উপর স্তরের আরও বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে টিউশন ফি না পেয়ে। তাই বহু শিক্ষক বেকার হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই নিম্নতর কাজে নিয়োজিত হয়েছে। মাদরাসা বন্ধ থাকায় মাদরাসা কাম এতিমখানার এতিম ও দুস্থ শিশুরা চরম বিপাকে দিন পার করছে। করোনা মহামারির সময়ে বহু দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পর খুলেছে। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে। তাই আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবী প্রবলতর হয়েছিল। ইউনিসেফও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবী জানিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা,চিকিৎসা ব্যবস্থা ও টিকা দেওয়ার হার আর এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা এক নয়। আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

করোনার সময়েও দেশের ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু থেকেছে। তবে, স্বাভাবিক সময়ের মতো ততটা কার্যকর হয়নি।দেশে ১৪৫টি ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, যার মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজার। এরা সকলেই ধনী ঘরের সন্তান। তাই অনলাইন শিক্ষা সরঞ্জামের কোন সমস্যা হয়নি তাদের। উপরন্তু সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরাও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষ। এছাড়া, দেশীয় শিক্ষার প্রতিষ্ঠানেরও অনেক প্রতিষ্ঠানে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলেছে। কিন্তু তাতে অংশগ্রহণ খুব কম। এক গবেষণা রিপোর্ট মতে, মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১০% অনলাইন প্ল্যাটফরমের সুবিধা নিতে পারছে।যারা অংশগ্রহণ করেছে,তাদের আউটপুট খুব ভাল নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদের এক জরিপ রিপোর্ট মতে, ঢাবির অনলাইনে প্রায় এক বছর ক্লাস শেষে পাঠ্যক্রমে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। ৫৩.৭% শিক্ষার্থীর এখনো সিলেবাস শেষ হয়নি। অনুমেয় যে, অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটপুটও অনুরূপই। অপরদিকে, গত জুন মাসে প্রকাশিত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অ্যানুয়াল প্রাইমারি স্কুল সেন্সাস শীর্ষক প্রতিবেদন মতে, গত বছর প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য টেলিভিশন ও রেডিওর মাধ্যমে পাঠদান সম্প্রচার শুরু হয়। এ প্রক্রিয়ায় কাক্সিক্ষত সফলতা না পেয়ে সম্প্রতি একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পাঠদানের জন্য শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ইন্টারনেটের ধীরগতি ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় এ উদ্যোগও ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের ৮৮ শতাংশেরই তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ নেই। অনলাইনে থিউরিটিক্যাল ক্লাস নেয়া সম্ভব হলেও র্প্যাকটিক্যাল ক্লাস নেয়া সম্ভব নয়। কারণ, এটা হাতে কলমের শিক্ষা, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্র্যাকটিক্যাল রুমের বাইরে সম্ভব নয়। তবুও অনলাইন শিক্ষা একদম বন্ধ থাকার চেয়ে ভাল। কিন্তু অনলাইনের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থী আর অনলাইনের আওতা বহির্ভ‚ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।এটা গ্রামাঞ্চলের ও গরীব শিক্ষার্থীদের বেলায় বেশি হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই শহরের শিক্ষার্থীদের চেয়ে পিছিয়ে আছে মানের দিক থেকে। অনলাইনের শিক্ষার কারণে সেই বৈষম্য আরও বেড়েছে! এই বৈষম্যের প্রভাব পড়বে তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেতেই।

করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ক্ষতি ছাড়াও দেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। খবরে প্রকাশ, ইউসেপ বাংলাদেশ সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে ১৯৭২ সাল থেকে। বর্তমানে দেশের আটটি জেলায় ৫৩টি সাধারণ শিক্ষা ও ১০টি কারিগরি শিক্ষা বিদ্যালয় চালু আছে এবং তাতে বছরে প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষা গ্রহণ করছে। এই প্রতিষ্ঠান মূলত: অনুদান ভিত্তিক। ইউকে এইড, অস্ট্রেলিয়া সরকার, জার্মান কো-অপারেশন ও আইএলও এর মতো সংস্থা একসময় সহায়তা করত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে করোনাসৃষ্ট বৈশ্বিক মহামন্দার কারণে সেই সহায়তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি চরম সংকটে পড়েছে। অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। আবার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুবই পুরনো, ভাঙ্গাচুরা তথা ঝুঁকিপূর্ণ। সর্বোপরি প্রতিবছরই বন্যায় ও নদী ভাঙ্গনে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যায় । চলতি বন্যায়ও সেটা হয়েছে। এভাবে বিপুল সংখ্যক শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শেভ দ্য চিলড্রেন এর রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশসহ ৪৮টি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। আধুনিক যুগে তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগেও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও মূলত: সেকেলে। যার সাথে শিক্ষিতদের বাস্তব জীবনের তেমন মিল নেই। অটোপাশ, অবাধ নকল, প্রশ্নপত্র ফাঁস, কারসাজি করে পাশের হার ব্যাপক বৃদ্ধি ইত্যাদি হয়েছে কয়েক দশক। সর্বোপরি শিক্ষক, কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের অভাব তো রয়েছেই। এসব কারণে শিক্ষার মান কমতে কমতে বর্তমানে লজ্জাজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানও তথৈবচ, যার প্রমাণ বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থান নেই বললেই চলে। দুয়েকটা থাকলেও তালিকায় অতি নীচে। টাইমস হায়ার এডুকেশন গত ২ সেপ্টেম্বর ৯৯টি দেশের প্রায় ১০ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য থেকে সেরা ১,৬৬২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে। তাতে বাংলাদেশের মাত্র ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৮০০-১০০০ এর মধ্যে (পাঁচ বছর পর এবার সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় স্থান পেয়েছে ), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১০০১-১২০০ এর মধ্যে এবং বুয়েটের অবস্থান ১২০০ এর পর (গতবারের চেয়ে ২০০ ধাপ পিছিয়েছে)। এ তালিকায় পাকিস্তানের ১৬টি, ভারতের ৬৩টি, নেপালের একটি এবং শ্রীলঙ্কার দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এছাড়া, কিউএস, সাংহাই র‌্যাংকিং কনসালট্যান্সি ইত্যাদি বৈশ্বিক সূচকেও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান প্রায় একই। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান ভাল না হলে তার শিক্ষার্থীর শিক্ষার মান ভাল হয় না। দ্বিতীয়ত: শিক্ষার মান নিম্ন পর্যায়ে ভাল না হলে উচ্চ পর্যায়ে ভাল হয় না। তৃতীয়ত শিক্ষকের মান ভাল না হলে শিক্ষার মান ভাল হয় না। তবুও দেশের বেশিরভাগ শিক্ষকের মান ভাল নয়।

অন্যদিকে, কয়েক বছর যাবত আইটি শিক্ষার দিকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দক্ষ শিক্ষকের অভাবে কাক্সিক্ষত ফল আসেনি।তেমনি কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটেনি তেমন।যেটুকু হয়েছে, তার মান নিম্নতর। দক্ষ শিক্ষকের ও প্রয়োজনীয় ল্যাবের অভাবে এ অবস্থা হয়েছে। উপরন্তু আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষ লোকেরও প্রচন্ড অভাব রয়েছে। তাই দেশে দক্ষ লোকের ঘাটতি ব্যাপক, যা বিদেশ থেকে এনে পূরণ করতে হচ্ছে। অথচ দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত বিআইডিএস-এর জরিপ রিপোর্ট মতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের ৬৬% বেকার থাকছেন। একই অবস্থা কম-বেশি কলেজ পড়–য়া ও স্নাতোকোত্তর শিক্ষার্থীদেরও। শিক্ষা ব্যবস্থা কর্মমুখী না হওয়ায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে, দেশের সাক্ষরতারও হার ও মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিবিএস’র বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিক-২০২০ মতে, দেশে সাক্ষরতার হার ৭৫.৬%। সাক্ষরতার সংজ্ঞা, আপনি কী লিখতে পারেন এমন প্রশ্ন এবং ‘ইয়েস’ ও ‘নো’ উত্তর ভিত্তিক। কিন্তু ইউনেস্কোর সংজ্ঞা অনুযায়ী, সাক্ষরতা হলো লিখতে, পড়তে, গণনা করতে ও যোগাযোগ স্থাপন করার সক্ষমতাকে বোঝায়। এর সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করতে জানা। এসডিজির ৪ (৬.১) নম্বর অনুচ্ছেদে সাক্ষরতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তাই ইউনেস্কোর সাক্ষরতার সংজ্ঞা অনুযায়ীই দেশে সাক্ষরতার হার নিরূপণ করা দরকার।আর সেটা করা হলে বর্তমানে দেশে সাক্ষরতার যে হার আছে, তা অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। অর্থাৎ দেশের শিক্ষার ও সাক্ষরতার মান খুবই নিম্নতম। তাই এই শিক্ষিতদের আউটপুট খুব ভাল নয়। এই অবস্থায় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যাত্রা শুরু হয়েছে, যাকে বলে প্রযুক্তি বিপ্লব। দেশে তার প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। এই পরিস্থিতিতে করোনা মহামারিতে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দেশের শিক্ষা খাতের সর্বনাশ হয়েছে। এর জের চলবে বহুদিন।

অবশ্য, শিক্ষা খাতের ক্ষতি শুধু বাংলাদেশেই হয়নি,করোনা মহামারিতে সারাবিশ্বেই শিক্ষার সর্বনাশ ঘটেছে। এটা পুষিয়ে নেয়ার জন্য বিশ্বব্যাপীই বিশেষ তৎপরতা শুরু হয়েছে।গত জুলাইয়ে লন্ডনে কেনিয়া ও যুক্তরাজ্য আয়োজিত এখঙইঅখ ঊউটঈঅঞওঙঘ ঝটগগওঞ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্বের বহু দেশের সরকার ও সংস্থাসমূহ শিক্ষা বিষয়ে বিশ্বজনীন অংশীদারিত্ব কর্মসূচিতে ৪০০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় ৯০টি দেশে ও অঞ্চলে যে ৮০% ছেলে-মেয়ে ভুলে যায় না, তারা সরকারি শিক্ষা কার্যক্রমে অবাধে প্রবেশাধিকারের সুযোগ পাবে।অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী গিলার্ড বলেছেন, এই প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আমাদের অংশীদারিত্ব আগামী ৫ বছরে ৫০০ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রা সম্পন্ন করতে পারবে। নোবেল বিজয়ী মালালা বলেছেন, ১৩ কোটি শিশু, যারা কভিড সংক্রমণের কারণে স্কুলে যেতে পারেনি, তাদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই হবে যথার্থ।

হ্যাঁ, এ লড়াই আমাদেরও চালিয়ে যেতে হবে। সে সাথে দেশের যেসব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে,সেগুলো সরকারী উদ্যোগে চালু এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় ফিরে আনার বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর ব্যাপক কল্যাণ হবে। অপরদিকে, শিক্ষাবর্ষের সাড়ে ৮ মাস অতিবাহিত হয়েছে, চলতি বছরের আর মাত্র সাড়ে ৩ মাস বাকী আছে। এই স্বল্প সময়ে সারাবছরের শিক্ষা কভার হবে না। তাই চলতি শিক্ষাবর্ষ ৪ মাস বৃদ্ধি করে এবং পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ ৪ হ্রাস করে চলতি সংকট নিরসন করা যেতে পারে। অপরদিকে, শিক্ষার সকল ক্ষেত্রেই মানোন্নয়ন করতে হবে। মানহীন শিক্ষা মূল্যহীন।ঘরে-বাইরে কোথাও এর মূল্য নেই। যেমন মূল্য নেই সেকেলে শিক্ষার। তাই শিক্ষার সকল স্তরে আমূল পরিবর্তন করে কর্মমুখী করা এবং তার মানোন্নয়ন করা অতীব জরুরি। শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য শিক্ষকের সব শূন্য পদ দ্রুত পূরণ, সব শিক্ষকের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও শিক্ষার পরিবেশ অনুকূল করা দরকার। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকলের উচিৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার শর্তগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে টিকা দেওয়া ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাসহ একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি। টিকা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। সরকারি চাকুরিতে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর জন্য করোনাকাল তথা ২০২০ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২১ মাস বয়স শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এটা যুক্তিযুক্ত নয়? এক যাত্রায় দু’ধরণের ফল। তাই বিসিএস পরীক্ষার্থীদেরও করোনাকালের ২১ মাস বয়স শিথিল করা প্রয়োজন।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন