যশোরে পারিবারিক কলহ, কর্মক্ষেত্রে হতাশাসহ নানা কারণে ফাঁস ও বিষপানে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ এ প্রবণতায় ঝুঁকে পড়ছেন। গত চার মাসে জেলায় গলায় ফাঁস ও বিষ পানে ১৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে আরও অনেকে। বিশেষ করে করোনার সময় আর্থিক হতাশা ও পারিবারিক কলহ থেকে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নিয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার দাইতলা ফতেপুর এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী মুরাদ হোসেন। পারিবারিক কলহের জেরে মুরাদ আত্মহত্যা করেন বলে জানা গেছে। স্বামীর মৃত্যু শোক সহ্য করতে না পেরে ৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে অন্তঃসত্ত্বা শান্তা নিজেও কীটনাশক পান করেন। পরে পরিবারের লোকজন তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে সন্ধ্যার দিকে শান্তা আট মাসের মৃত সন্তান প্রসব করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিনই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা। স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সযোগে খুলনায় নেওয়ার পথে স্থানীয় রূপদিয়া বাজারে পৌঁছালে গাড়িতে শান্তার মৃত্যু হয়।
৮ সেপ্টেম্বর সকালে মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ ঝাঁপা গ্রামের নুরজাহান ইসলাম (২৭) নামে এক গৃহবধূ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে স্বজনরা তাকে যশোর জেনারেল হাতপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনরা জানান, স্বামীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জেরে নুরজাহান আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। নুরজাহানের পাঁচ ও ৯ বছরের দুটি শিশুসন্তান রয়েছে।
এ ছাড়া চলতি মাসের (সেপ্টেম্বর) সর্বশেষ ১৫ দিনে আরও অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বিষ পান ও ফাঁস দিয়ে। সব মিলে গত সাড়ে ৪ মাসে জেলায় প্রায় ২০২ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাকালে মানুষ নানা সংকটে দিন পার করছে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান দেখা দিয়েছে। ফলে হতাশাগ্রস্ত মানুষ নিজেকে হত্যার প্রবণতায় ঝুঁকছেন।
জানা যায়, গেল মাসের ১৭ আগস্ট যশোরের শার্শা উপজেলার শুড়ারঘোপ গ্রামে মেয়ে আখি মনিকে (৬) বিষপানে হত্যার পর সুমি খাতুন (৩০) নামে এক নারী আত্মহত্যা করেছেন। তিন বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদের পর সুমি খাতুন তার শিশুকন্যা আখি মনিকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন। এ নিয়ে সুমির মায়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা কাটাকাটি হতো। মা তাকে এ নিয়ে বকাঝকা করেন। এরপর মা ও মেয়ের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। পারিবারিক কলহ ও মায়ের ওপর অভিমান করে মেয়েকে বিষ পানে হত্যার পর সুমি আত্মহত্যা করেন বলে জানান স্বজনেরা।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আব্দুস সালাম সেলিম (৫৫) যশোর শহরে বাসায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সম্প্রতি তাকে বগুড়ায় বদলি করা হয়। বদলিজনিত কারণে তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। এর জেরে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী মনিরা বেগম।
অপরদিকে গত ৭ আগস্ট স্বামীর পরকীয়া নিয়ে বিবাদের জেরে তিন বছরের মেয়ে কথাকে এক রশিতে ঝুঁলিয়ে হত্যার পর আরেক রশিতে আত্মহত্যা করেন মণিরামপুরের এক গৃহবধূ পিয়া মন্ডল (২২)। এ ঘটনায় স্বামী কলেজশিক্ষক কণার মন্ডলের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচণার দায়ে মামলা হয়েছে। পুলিশ ওই দিনই কণার মন্ডলকে আটক করে।
আগস্ট মাসে ৪৭ জনের মধ্যে ২৬ জন ফাঁস এবং ২১ জন বিষ পানে আত্মহত্যা করেন। জুলাই মাসে ৬৮ জনের মধ্যে ৪৮ জন ফাঁস ও ২০ জন বিষ পানে আত্মহত্যা করেন। জুন মাসে আত্মঘাতী ৩১ জনের মধ্যে ১৯ জন ফাঁস ও ১২ জন বিষ পান করেন। মে মাসে আত্মঘাতী ৩৬ জনের মধ্যে ২৩ জন ফাঁস ও ১২ জন বিষ পান করেন। পারিবারিক কলহ, সামাজিক অস্থিরতা ও হতাশার জেরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন