শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ই-কমার্সের দুর্নীতি ও প্রতারণা ঠেকাতে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

বিশ্বব্যাপী অনলাইনে পণ্য কেনা-বেচার ক্ষেত্রে ই-কমার্স একটি বিশাল মার্কেট প্লেসে পরিণত হয়েছে। মানুষ এখন ঘরে বসে অনলাইনে কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। আমাদের দেশেও অনলাইন শপিং ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ক্রয়কৃত পণ্য মানুষের ঘরে পৌঁছে দেয়ার এক বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। এ লক্ষ্যে, হাজার হাজার অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বাসার গৃহিনী থেকে শুরু করে বেকার তরুণরা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। এসব অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের মাঝে কোনো কোনোটি সুবিশাল কলেবরে আত্মপ্রকাশ করেছে। তবে এগুলোর কোনো কোনোটি অস্বাভাবিক কমমূল্যে পণ্য সরবরাহ করার কথা বলে ক্রেতাদের কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগও উঠেছে। পণ্যের প্রকৃত দামের অর্ধেক মূল্যে কিংবা শতভাগ বা তার বেশি ক্যাশব্যাকের কথা বলে প্রতারণার অভিনব কৌশল এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় ই-ভ্যালি নামে একটি প্রতিষ্ঠান অভিযুক্ত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এবং সিইওকে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, অতি লাভ এবং লোভ দেখিয়ে ক্রেতাদের অর্থ লোপাট করেছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে আগাম অর্থ নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য ডেলিভারি দেয়ার কথা থাকলেও তা না দিয়ে সময়ক্ষেপণ করেছে। এ সময়ের মধ্যে নতুন ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্যের আগাম অর্থ নেয়াও শুরু করেছে। এভাবে পুরাতন ক্রেতাদের অর্থ কুক্ষিগত করে নতুন ক্রেতাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে বিশাল অংকের অর্থ জমা করে লোপাট করেছে। প্রতিষ্ঠানটির মূলধন যা তার চেয়ে কয়েকশ’ কোটি টাকা বেশি দেনা হয়ে রয়েছে। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে শোবিজের তারকা থেকে শুরু করে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদেরও যুক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ক্রেতাদের অর্থ মেরে দেয়ার এই অভিনব প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি গুলশান থানায় এক গ্রাহক মামলা করলে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও সিইওকে গ্রেফতার করা হয়। অসংখ্য ক্রেতা তাদের অর্থ ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কায় মিছিল-মিটিং করেছে।

এমএলএম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের শত শত কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের ঘটনা নতুন নয়। ডেস্টিনি, যুবকের ঘটনা সকলেরই জানা। এদের কর্তা ব্যক্তিদের আটক করে জেলে রাখা হলেও গ্রাহকরা আজ পর্যন্ত অর্থ ফেরত পায়নি। ফেরত পাবে কিনা, তা অনিশ্চিত। এ প্রক্রিয়া এখন অনলাইনের কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অবলম্বন করছে। ই-ভ্যালি, ধামাকা’র মতো কিছু প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের লোভনীয় অফারে প্রলুব্ধ করে কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাপী অনেক অনলাইন প্রতিষ্ঠান সুনামের সাথে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অ্যামাজন, আলীবাবা, আলী’র মতো প্রতিষ্ঠান সারাবিশ্বে খ্যাতি লাভ করেছে। গ্রাহকরা তাদের সেবায় সন্তুষ্ট। আমাদের দেশে ই-কমার্সের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ছোট-বড় মিলিয়ে হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান ব্যবসা চালাচ্ছে। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। মার্কেটের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোও অনলাইনে যুক্ত হচ্ছে। এসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দারাজ, আলেশা মার্টের মতো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রযুক্তির উৎকর্ষ যেমন মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দিয়েছে, তেমনি এর অপব্যবহারও অত্যন্ত ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। এটা প্রযুক্তির দোষ নয়, এর ব্যবহারকারীর দোষ। প্রযুক্তির মাধ্যমে একদিকে ই-কমার্সের মতো বিশাল মার্কেট প্লেস গড়ে উঠছে, অন্যদিকে কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতারণামূলক কর্মকান্ড মানুষের ক্ষতি করছে। ইভ্যালি নামক প্রতিষ্ঠানটি তার উদাহরণ। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এমন আরও ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো মানুষকে প্রতারিত করছে। অন্যদিকে, অনলাইনে পাবজিসহ বিভিন্ন ধরনের জনপ্রিয় গেমের মাধ্যমে জুয়া খেলার আয়োজন করে মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়ার পাশাপাশি অর্থপাচারের ঘটনা ঘটছে। পি কে হালদাররা যেমন বিভিন্ন পন্থায় রাষ্ট্রের শত শত কোটি টাকা পাচার ও মেরে দিচ্ছে, তেমনি অনেকে অনলাইনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে ও জুয়ার আসর বসিয়ে মানুষের অর্থ লোপাট করছে। এমএলএম থেকে অনলাইনে নবতর প্রক্রিয়ায় মানুষের অর্থ মেরে দেয়ার এমন প্রতারণা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা জরুরি বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিবাচক অনেক কর্মকান্ডের পাশাপাশি নেতিবাচক কর্মকান্ডও চলে। সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করে কেবল রাজনৈতিক ও তার স্বার্থপরিপন্থী বিষয়গুলো দমনে মনোযোগী হয়েছে। এক্ষেত্রে কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। পান থেকে চুন খসলেই কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। অথচ ই-কমার্সে প্রতারণাসহ অন্যান্য অনাকাক্সিক্ষত ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে ক্ষতিকর যেসব অপকর্ম চলছে, সে সবের খেয়াল করছে না। এক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতার কথা বলে চুপ মেরে আছে। এসব অপকর্ম জনস্বার্থবিরোধী ও ক্ষতিকারক, অথচ তা আমলে নিতে দেখা যাচ্ছে না। এতে মানুষের স্বার্থের বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। ই-ভ্যালি বা এ ধরণের প্রতারক প্রতিষ্ঠানের দ্বারা মানুষের যে বিপুল অংকের অর্থের ক্ষতি হচ্ছে, তা কিভাবে উদ্ধার করা যায়, এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপ নেই। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও সিইওকে আইনের আওতায় এবং জেলে নিলেও গ্রাহকদের অর্থ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের জেলে নিলে হবে না, তাদের সহযোগিতায় কিভাবে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়া যায়, এ ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে এসব প্রতিষ্ঠানের অপকর্ম ও লুটপাটের দায় সরকারকেই নিতে হবে। গ্রাহকদেরও এ ধরনের যেকোনো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। অতি লাভ ও লোভ দেখানোর ফাঁদে পড়ে অর্থ খোয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। ই-কমার্সের প্রতারণা, দুর্নীতি ঠেকাতে এবং ক্ষেত্রটির সুষ্ঠু প্রসারে শৃঙ্খলা ও জাবাদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন