শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে জিরো টলারেন্স

অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার দুই, আটক প্রতারক চক্রের তিন সদস্যও

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

রাজধানীতে আগে প্রায়ই অস্ত্রের মহড়া দেখা যেত, হতো বোমাবাজি। দুই কোটি জনগণের বসবাসের নগরী রাজধানীতে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে ডিএমপি। কোনো ধরনের গোলাগুলি, অস্ত্রের মহড়া, ঝনাঝনানি বরদাস্ত করা হবে না। এসব ঘটনাকে দুর্বলভাবে দেখাও হচ্ছে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গতকাল শনিবার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।

তিনি বলেন, গত ১৫ মে সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে রেমন্ড টেইলার্সের সামনে ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় দুজনকে অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। গত শুক্রবার কুমিল্লা বরুড়ার আমড়াতলী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন, মনিরুজ্জামান সুমন ও মো. ইমন। তাদের দেওয়া তথ্য মতে, রাজধানীর খিলগাঁও থানার ত্রিমোহনী এলাকা থেকে ২টি পিস্তল ও ৩ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভিকটিম সাইফুল ইসলাম, কচি, রিপন ও সুমন ছোটবেলার বন্ধু ছিলেন। সাইফুল ২ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। রিপন ও সুমন দলীয় পর্যায়ে পদ-পদবী না পাওয়ায় তাদের সম্পর্কের ফাটল সৃষ্টি হয়। এরপর তারা পৃথক গ্রæপ তৈরি করে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে সুমন ও রিপন গ্রুপ একত্রিত হয়ে ভিকটিম সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

তিনি আরো বলেন, রিপন গ্রুপের সদস্য বাশার হত্যা মামলার ১ নম্বর অভিযুক্ত ছিলেন ভিকটিম সাইফুল। ওই মামলায় সাইফুল দীর্ঘদিন জেলে থাকার কারণে সুমন গ্রুপ এলাকায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ড করতে থাকে। সাইফুল জেল থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর সুমন গ্রুপ ও রিপন গ্রুপ এলাকায় তাদের আধিপত্য বিস্তার হ্রাস পাওয়ার ভয়ে দুই গ্রুপ একত্রিত হয়ে ভিকটিম সাইফুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। গত ১৫ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে রেমন্ড টেইলার্সের সামনে রাস্তায় পূর্ব পরিকল্পনার অনুযায়ী রিপন, কচি, সুমন ও ইমনসহ ১২ থেকে ১৩ জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এ সময় সাইফুলকে রিপন ২ রাউন্ড ও সুমন ১ রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায়।

সম্প্রতি রাজধানীতে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। অস্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধির সুনির্দিষ্ট কারণ কী হতে পারে?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির এ গোয়েন্দা প্রধান বলেন, ডিএমপির পরিবেশ এখন শান্ত। যদিও আগে প্রায়ই অস্ত্রের মহড়া দেখা যেতো, হতো বোমাবাজি। গত চার মাস মাসে রাজধানীতে যেখানেই অস্ত্রের মহড়া, বোমাবাজি হয়েছে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অস্ত্র-গুলি জব্দ করা হয়েছে।
প্রতারক চক্রের তিন সদস্য গ্রেফতার: মেসেজিং ও ভয়েস-ওভার-আইপি সার্ভিস হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে প্রথমে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতো একটি প্রতারক চক্র। চক্রটি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ভিকটিমের সঙ্গে যোগাযোগ করে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। কখনো বিদেশে চাকরির অফার দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার এবং ই-মেইলে যোগাযোগ করে। চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে বিভিন্ন ফির বাহানায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহারে হাতিয়ে নেয় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। প্রতারণার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে ডিবি।

গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, গত শুক্রবার রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একটি টিম। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-মো. কবির হোসেন, শামসুল কবীর ও ইয়াছিন আলী। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই ২৫৭টি, ডেবিট কার্ড ২৩৪টি, মোবাইল ফোন ৮টি ও ১১টি মোবাইল সিম জব্দ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে কদমতলী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ড্রিম জবস ইন কানাডা নামে প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতারণামূলক কর্মকান্ড করে আসছে। চক্রের একটি গ্রুপ প্রথমে ভিকটিমের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে তার সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। আবার ফেসবুকে বিদেশে চাকরির অফার দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার এবং ইমেইলে যোগাযোগ করে। চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে বিভিন্ন ফির বাহানায় ব্যাংকে টাকা জমা দিতে বলে। হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর প্রদান করে। গ্রেফতার কবীর হোসেনের কাজ যাবতীয় অর্থ সংগ্রহ করে ম্যানেজানের হাতে পৌঁছে দিতেন। কবীর হোসেনের সহযোগী হিসাবে কাজ করেন গ্রেফতার ইয়াসিন। আর গ্রেফতার শামসুল কবীর হলেন ব্যাংক হিসাবধারী। তারা সবাই মাসিক ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতনে বিভিন্ন স্তরে কাজ করেন এবং তাদের অন্য কোনো পেশা নেই বলে প্রাথমিকভাবে তারা জানান। এ চক্রের অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
হাফিজ আক্তার আরও বলেন, কারো প্রলোভনে পড়ে প্রতারিত হওয়ার আগে খোঁজ নিন। চাকরি কখনো এভাবে মেলে না, সেটা আগে বুঝুন। আর কুরিয়ার, পার্সেল, উপহার প্রতারণার বিষয়ে ডিবি পুলিশ অনেক অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব প্রতারণার ব্যাপারে সাবধান থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন