শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

মীরাছে ছেলে ও মেয়ের অধিকার-১

আবদুল্লাহ ফাহাদ | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

অনেকে জীবদ্দশাতেই স্থাবর-অস্থাবর সকল সম্পদ সন্তানদের মাঝে বণ্টন করতে চায়। প্রথমত এটা কোনো অপরিহার্য বিষয় নয়। দ্বিতীয়ত পিতামাতার জীবদ্দশায় তাদের সম্পদে সন্তানদের কোনো অধিকার সাব্যস্ত হয় না; বরং পিতামাতাই নিজ সম্পদের মালিক। তারা ইচ্ছা করলে সন্তানদের মাঝে তা বণ্টন করতেও পারেন, ইচ্ছা করলে নাও করতে পারেন। সন্তানরা পিতামাতার কাছে এই দাবি করতে পারে না যে, আপনারা যা কিছু উপার্জন করেছেন তা আমাদের মাঝে বণ্টন করে দিন।

অনেক সন্তান এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করে এবং এই বলে পিতামাতাকে বাধ্য করে যে, আপনার তো এখন আর এই সম্পদের প্রয়োজন নেই, এগুলো তো এখন আমাদের অধিকার। তাই জীবিত অবস্থায়ই সবকিছু বণ্টন করে ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে যান। আপনার মৃত্যুর পর আমরা ঠিকমতো সম্পদের হিস্যা পাব কি পাব না-এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাছাড়া এ নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হতে পারে। সুতরাং এখনই জমিজমা বণ্টন করুন।

মনে রাখতে হবে যে, পিতামাতাই তাদের সম্পদের মালিক। সুতরাং বণ্টন করা, না করার বিষয়ে তারা স্বাধীন। অবশ্য পিতামাতা যদি মনে করেন যে, তাদের জীবদ্দশাতেই সম্পদ বণ্টন করে দেওয়া সমীচীন হবে তাহলে তারা তা করতে পারেন। যদি না করেন তবে এর সুযোগও তাদের রয়েছে।

যদি পিতামাতা জীবদ্দশাতেই সন্তানদের মাঝে নিজেদের সম্পদ বণ্টন করতে চান তবে এরও অবকাশ আছে। যদিও মীরাছের অধিকার ব্যক্তির মৃত্যুর পরই সাব্যস্ত হয়, কিন্তু মৃত্যুর পূর্বের সম্পদ বণ্টন যেহেতু অগ্রিম মীরাছ বণ্টনের নিয়তে হয়ে থাকে তাই এক্ষেত্রেও উত্তম হলো শরীয়তের মীরাছ-ব্যবস্থার নীতিমালা অনুযায়ী তা বণ্টন করা এবং প্রত্যেককে তার হিস্যা হস্তান্তর করে দেওয়া।

তবে এই অগ্রিম বণ্টন যেহেতু প্রকৃত মীরাছ বণ্টন নয় তাই এক্ষেত্রে ছেলে-মেয়েকে সমান হারে দেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। (তাকমিলা ফাতহুল মুলহিম : ২/৭৫)। মনে রাখা উচিত যে, মৃত্যু-পূর্ব সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনো ছেলে বা মেয়েকে বঞ্চিত করা কিংবা মীরাছের প্রাপ্য হিস্যা থেকে কম দেওয়া জায়েয নয়। সুতরাং তা থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।

আমাদের সমাজের অবস্থা তো এই যে, একে তো পিতা তার জীবদ্দশায় মেয়েদেরকে সম্পদ দেয় না। এমনকি যদি বলা হয়, আপনি তো সব সম্পদ ছেলেদেরকেই দিয়ে দিলেন, মেয়েদেরকে কিছু দিলেন না? তখন জবাবে বলে, আমি তো মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। বিবাহের সময় তাকে যা কিছু দিয়েছি তাতেই তার পাওনা আদায় হয়ে গেছে। এই ধারণা ভুল। বিয়ের সময় মেয়েকে আসবাবপত্র ও অন্যান্য সামগ্রী দেওয়ার কারণে তার মীরাছের হক শেষ হয়ে যায় না। তেমনি এ কারণে তাকে পিতার সম্পদ থেকেও বঞ্চিত করা যায় না।

ছেলের বিয়েতে পিতা যেমন খরচ করেন তেমনি মেয়ের বিয়েতেও করবেন। সাধারণত দেখা যায়, পুত্রের বিয়েতে বেশি খরচ করা হয়। এটাও ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রেও সমতা রক্ষা করা উচিত। এর সহজ উপায় হলো, নিজের আর্থিক সঙ্গতি অনুসারে আগেভাগেই নির্দিষ্ট করে নিবে যে, প্রত্যেক পুত্র-কন্যার বিয়েতে এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করব। এরপর সে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ থেকে ছেলে-মেয়ের বিয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করবে। যদি কারো ক্ষেত্রে কিছু বেঁচে যায় তাহলে নগদ আকারে তা প্রদান করবে। এমন যেন না হয়, এক সন্তানের বিয়েতে বেশি খরচ করা হল, অন্য সন্তানের বিয়েতে কম। কারণ এটাও এক ধরনের অন্যায়, যা শরীয়তে অপছন্দনীয়।

মোটকথা মেয়ের বিয়েতে সবকিছু দিয়ে দিয়েছি, এখন আর তার কোনো অধিকার নেই, জীবদ্দশাতেও সে আর কিছু পাবে না, মৃত্যুর পরও মীরাছের সম্পদে তার কোনো অধিকার থাকবে না-এটা স্পষ্ট জুলুম এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মেঘদূত পারভেজ ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:২৯ এএম says : 0
মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদই হচ্ছে মীরাছ, যা মৃতের নিকটাত্মীয়রা লাভ করে। প্রাচীনকাল থেকে মৃতের সন্তানাদি ও আত্মীয়দের মাঝে সম্পত্তি বণ্টনের নিয়ম চলে আসছে।
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:৩০ এএম says : 0
সম্পদ বণ্টনে অনিয়ম হ’লে উত্তরাধিকারীদের মাঝে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রে তা প্রতিহিংসার চরম সীমায় উপনীত হয়। তাই মৃত ব্যক্তির সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের গুরুত্ব অপরিসীম। এতে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
Total Reply(0)
সৈকত ফকির ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:৩০ এএম says : 0
জাহেলী যুগে আরবে মীরাছ হ’তে মহিলাদেরকে কোন অংশ দেয়া হ’ত না। এক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, তারা যুদ্ধ-বিগ্রহ বা অন্য কোনভাবে নিজ সম্প্রদায়কে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে না। তারা বলত, ‘যারা ঘোড়ায় চড়তে পারে না, তরবারী ব্যবহার করতে জানে না এবং শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না, আমরা কিভাবে তাদেরকে সম্পদ প্রদান করতে পারি’? তাই তারা শিশুদের মত মেয়েদেরকেও উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করত।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:৩১ এএম says : 0
‘আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের (মধ্যে মীরাছ বণ্টনের) ব্যাপারে তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান। যদি তারা দুইয়ের অধিক কন্যা হয়, তাহ’লে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ পাবে। আর যদি কেবল একজনই কন্যা হয়, তবে তার জন্য অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার প্রত্যেকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ করে পাবে, যদি মৃতের কোন পুত্র সন্তান থাকে। আর যদি না থাকে এবং কেবল পিতা-মাতাই ওয়ারিছ হয়, তাহ’লে মা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। কিন্তু যদি মৃতের ভাইয়েরা থাকে, তাহ’লে মা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ মৃতের অছিয়ত পূরণ করার পর এবং তার ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রদের মধ্যে কে তোমাদের জন্য অধিক উপকারী, তা তোমরা জানো না। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়’ (নিসা ৪/১১)।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক হ’তে পারে, মহিলা দুর্বল ও সম্পদের অধিক মুখাপেক্ষী হওয়া সত্ত্বেও তাকে পুরুষের অর্ধেক সম্পদ দেয়ার কারণ কি? এর জবাবে বলা যায়, এ বিধান মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। যিনি সৃষ্টিকুলের কল্যাণ সর্বাধিক পরিজ্ঞাত।
Total Reply(0)
মোঃ আফসারুল হক ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১০:২২ এএম says : 0
খুব ভাল লাগল। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ও সমাজে এর গুরুত্ব অপরিসীম। তবে সমাজের সকল এভাবে মানলে ও পালন করলে সমাজে অনেক শান্তি বিরাজ করবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন