বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাকে বঙ্গেপসাগরের ভাঙন থেকে রক্ষায় সাড়ে ৯শ কোটির টাকার প্রকল্প

বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহারের পরামর্শ

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:০০ পিএম

গত দু দশক ধরে বঙ্গোপসাগরের প্রবল ঢেউ কুয়াকাটার বিভিন্ন অংশকে গ্রাস করছে।


সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম কুয়াকাটা সৈকত সহ পুরো এলাকাকে বঙ্গোপসাগরের প্রবল ঢেউ-এ বিলিন হওয়া থেকে রক্ষায় প্রায় সাড়ে ৯শ কোটি টাকার একটি ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ পুণর্গঠনে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ফেরত পাঠান হয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলী সহ দায়িত্বশীল মহল এমাসের মধ্যেই সংশোধনী সহ ডিপিপি’টি পুনরায় বোর্ডে প্রেরনের ব্যপারে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে বোর্ড ও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় হয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প প্রস্তাবনাটি পরিকল্পনা কমিশন সহ একনেক-এ অনুমোদনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দায়িত্বশীল মহল। ফলে আগামী অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা-এডিপি’তে অন্তর্ভূক্তির সম্ভবনার কথাও বচলেভেছভন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাযিত্বশীণ মহল। আগামী জুলাইÑআগষ্টে দরপত্র অহবান করে ২০২২-এর ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরুর সম্ভবনার কথাও জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল মহল।
পটুয়াখলীর সর্ব দক্ষিণে কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত উপমহাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার প্রধান বাঁধা হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগরের ভাঙন। পর্যটন কেন্দ্রটির মুল অকর্ষন সী বীচের পূর্বের রাবনাবাদ ও পশ্চিম প্রান্তের আন্ধারমানিক চ্যানেলের শ্রোত গতি পরিবর্তন করায় ১৯৯৮ সাল থেকে ভাঙন শুরু হয়। প্রথমে ঢেউ-এর আঘাতে বছরে এক মিটার করে সী বীচ বিলীন হতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের তরফ থেকে তেমন কোন উদ্বেগ ছিলনা।
পরবর্তিতে ২০১০ সাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিমিত কিছু উদ্যোগ গ্রহন করে। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় জিউ টিউব ও সিসি ব্লক ফেলে মূল সী বীচটি সাগরের ঢেউ থেকে রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহন করা হলেও তার কোনটিই কার্যকর ফল দেয়নি। ফলে বিপুল অর্থ ব্যায় করেও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতকে রক্ষার বিষয়টি ফলপ্রসু হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে একাধীক সংবাদ প্রকাশের ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অস্বস্তিও বৃদ্ধি পায়। ভাঙন রেধে কার্যকর পদক্ষেপের দাবীতে কুয়াকাটায় আকাধীক মানব বন্ধন সহ প্রতিবাদ সমাবেশও হয়েছে। এক পর্যায়ে বিষয়টি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি সরেজমিনে কুয়াকাটা সফর করে এলক্ষে পারিপূর্র্ণ মডেল স্ট্যাডি সহ জরুরী পদক্ষেপ গ্রহনের নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষিতে আধা সরকারী নদী গবেষনা প্রতিষ্ঠান ‘আইডব্লিউএম’ এর মাধ্যমে পরিপূর্ণ জরিপ ও সম্ভব্যতা সমিক্ষা শেষে কুয়াকাটার সৈকত রক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রনয়ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
আইডব্লিউএম এ লক্ষে তার প্রস্তাবনায় কুয়াকাটা উপক’লীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ থেকে সী বীচ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি গ্রোয়েনের মাধ্যমে ভাঙন রোধের প্রস্তাব দিয়েছে। এলক্ষে গ্রোয়েনগুলোতে জিও টেক্সটাইল-এর ওপর ৪৫ সেন্টিমিটার থেকে ১ মিটার সাইজের সিসি ব্লক সন্নিবেশ করা হবে। মূল সী বীচ রক্ষায় দু প্রান্তের রাবনাবাদ ও আন্দামানিক চ্যানেল পর্যন্ত প্রায় ১১ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এলাকায় সিসি ব্লকের সাহায্যে গ্রোয়েনগুলো নির্মিত হবে।
প্রকল্পের আওতায় কুয়াকাটা সৈকতে একটি আদর্শ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে ‘ওয়াকিং বে’ ছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ‘লাইফ গার্ড স্টেশন’, বসার স্থান, ট্রইল, পার্কিং ল্যান্ডস্কেপ ও টয়লেট নির্মানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটির জন্য আইডব্লিউএম ৬৪৫ কোটি ৬০ লখ টাকার ব্যায় প্রস্তাব করলেও পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯৪৯ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে সম্পূর্ণ দেশীয় অর্র্থেই তা বাস্তবায়িত হবে বলে জানা গেছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়ন তদরকিও করবে আইডব্লিউএম।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিনাঞ্চলীয় জোনের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, সরকার কুয়াকাটা সৈকতকে ভাঙন থেকে রক্ষা সহ একটি আদর্শ সমুদ্র সৈকত হিসেবে গড়ে তুলতে আগ্রহী। পানি উন্নয়ন বোর্ডও সে লক্ষে পদক্ষেপ গ্রহন করতে যাচ্ছে। পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী সর্বক্ষনিকভাবে প্রকল্পটির খোজ খবর রাখছেন বলেও জানান তিনি ।
তবে ওয়াকিবাহাল মহল থেকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পরিহার করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহনের তাগিদ দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন