মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের বাসে হামলায় জড়িত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা!

পাকিস্তানি পত্রিকার দাবি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

লাহোরে ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দলের বাসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল। সে হামলার কারণে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজন সম্ভব হয়নি অনেক দিন। নিরাপত্তা শঙ্কায় সে সময় কোনো দেশই পাকিস্তান সফরে যেতে রাজি হয়নি। সেই হামলার সাড়ে ১২ বছর পর এসে পাকিস্তানের করাচিভিত্তিক পত্রিকা দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল দাবি করছে, ওই হামলাটা ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাই করিয়েছিল! পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রাদেশিক পুলিশের অপরাধ তদন্ত শাখার (সিআইডি) নিরাপত্তা হুমকি সংক্রান্ত গোপন গোয়েন্দা প্রতিবেদন থেকেই এমন দাবি দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল লিখেছে, লাহোরে ওই হামলার ঠিক ৪০ দিন আগে, অর্থাৎ ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি পাঞ্জাবের অপরাধ তদন্ত শাখা (সিআইডি) হামলার হুমকির কথা নির্দিষ্ট করে জানিয়েছিল। তাদের প্রতিবেদনে লেখা ছিল, পাকিস্তানের সুনামক্ষুণ্ন করতে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলকে লক্ষ্য বানাচ্ছে।
সিআইডির প্রতিবেদনটি সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বানানো (সোর্স রিপোর্ট) ছিল জানিয়ে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল লিখেছে, সিআইডির সেই প্রতিবেদনে লেখা ছিল, শ্রীলঙ্কা দলের ‘হোটেল থেকে স্টেডিয়ামের রাস্তায় কিংবা তারা হোটেলে থাকার সময়ে’ হামলা হতে পারে।
২০০৯ সালের ৩ মার্চ লাহোরে হোটেল থেকে স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে শ্রীলঙ্কা দলের বাসে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সফরের দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনের খেলা ছিল সেদিন। রাস্তায় ১২ জন বন্দুকধারী হামলা চালায় লঙ্কান ক্রিকেটারদের বহনকারী বাসে। শ্রীলঙ্কা দলের ছয়জন সদস্য তখন আহত হন। আর পাকিস্তানের পুলিশ বাহিনীর ছয় সদস্য ও দুজন সাধারণ নাগরিক নিহত হন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল। ওই হামলার পর থেকেই পাকিস্তান সরকারের দিক থেকে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। হামলার জন্য ভারতকে দায়ী করে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল লিখেছে, সিআইডির প্রতিবেদনের পরও নিরাপত্তা হুমকিকে যাঁরা উপেক্ষা করেছিলেন, পাকিস্তানের ওই কর্মকর্তাদেরও কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি।
সিআইডির ওই প্রতিবেদন নিয়ে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল লিখেছে, ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি তারিখে জমা দেওয়া সেই প্রতিবেদনের ফাইলের গায়ে লেখা ছিল ‘গোপন/ অবিলম্বে’ (সিক্রেট/ ইমিডিয়েট)। বিষয়ের ঘরে লেখা ছিল ‘সোর্স রিপোর্ট।’
চার পয়েন্টের প্রতিবেদনে ‘বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে’ জানিয়ে লেখা ছিল, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা তাদের এজেন্টদের নির্দেশ দিয়েছে শ্রীলঙ্কা দলের বাস হোটেল-স্টেডিয়ামের রাস্তায় থাকার সময়ে কিংবা শ্রীলঙ্কা দল হোটেলে থাকার সময়ে হামলা চালাতে- এমনটাই লিখেছে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল আরও লিখেছে, সিআইডির প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পয়েন্টে লেখা ছিল, এটা পরিষ্কার যে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘খেলাধুলার ইভেন্টের ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে নিরাপত্তা হুমকির দেশ হিসেবে দেখাতে যায়, বিশেষ করে যখন ইউরোপিয়ান ও ভারতীয় দলগুলো এরই মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে বেশি শঙ্কা থাকায় পাকিস্তানে আসতে রাজি হয়নি।’ প্রতিবেদনটি কার কার কাছে পাঠানো হয়েছে, সেটিও প্রকাশ করেছে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল—সে সময়ের পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব সৈয়দ কামাল শাহ (ইসলামাবাদ), মুখ্য সচিব জাভেদ মাহমুদ (পাঞ্জাব), মুখ্যমন্ত্রীর একান্ত সচিব ড. সৈয়দ তকদীর শাহ (পাঞ্জাব) ও সে সময়ের পাঞ্জাব প্রাদেশিক সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব নাদিম হাসান আসিফ (পাঞ্জাব)।
প্রতিবেদনের ওপরের চিঠিতে সই ছিল পাঞ্জাব সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি মালিক মুহাম্মদ ইকবালের। দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই চিঠিতে একটা নোটও ছিল, যেখানে বলা হয়েছিল, লাহোরের ক্যাপিট্যাল সিটি পুলিশ অফিসার (সিসিপিও) ও লাহোরের কমিশনারকে আলাদা আলাদাভাবে ব্যাপারটি জানানো হচ্ছে যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল লিখেছে, লাহোরে ওই হামলার ঠিক ৪০ দিন আগে, অর্থাৎ ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি পাঞ্জাবের অপরাধ তদন্ত শাখা (সিআইডি) হামলার হুমকির কথা নির্দিষ্ট করে জানিয়েছিল। তাদের প্রতিবেদনে লেখা ছিল, পাকিস্তানের সুনামক্ষুণ্ন করতে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলকে লক্ষ্য বানাচ্ছে।
বিষয়টি অনেক সংবেদনশীল হওয়ায় সেদিনই, অর্থাৎ ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি সেটি সে সময়ের পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে জানানো হয়। তার নির্দেশ অনুযায়ীই পাঞ্জাবের আইজিপি, লাহোরের কমিশনার, লাহোরের সিসিপিও, প্রধান সচিব ও স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন নোট পাঠানো হয় বলে লিখেছে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে দাবি, ওই নোটে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে লেখা হয়, ‘মুখ্যমন্ত্রী খামে বদ্ধ সোর্স রিপোর্টটি দেখেছেন এবং তার চাওয়া, লাহোর সফরের সময়ে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দলের নিরাপত্তার জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা যাতে নেওয়া হয়। তার আরও চাওয়া, যেকোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে যাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়।’
সিআইডির ওই রিপোর্ট পাওয়ার পরের দিনই একটি বৈঠক ডাকা হয় বলে লিখেছে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। সে সময়ের লাহোরের কমিশনারের নেতৃত্বে সে বৈঠকে পুলিশের ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চের (আইবি) পরিচালক, ডিআইজি ট্রাফিক, মিলিটারি ইনটেলিজেন্সের প্রতিনিধি, আইএসআইয়ের (পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা) পরিচালকসহ আরও কয়েকজন ছিলেন বলে লিখেছে পত্রিকাটি। ওই বৈঠকে শাহবাজ শরীফের অধীনে থাকা প্রাদেশিক সরকার পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার তৃতীয় ওয়ানডের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা হাতে নেয় বলে লিখেছে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। সিরিজের ওয়ানডেটি অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল লিখেছে, সে সময়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা সন্ত্রাসী হামলার শঙ্কার প্রতিটি দিক এবং সেটি ঠেকাতে নেওয়া প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন। বৈঠকের বিবরণী থেকে পুক্সক্ষখানুপুক্সক্ষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা ও কোনো অঘটন হলে সে ক্ষেত্রে কী হবে সে পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় বলে লিখেছে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
পত্রিকাটির ভাষ্য অনুযায়ী, সে সময়ের পাঞ্জাবের আইজি শওকত জাভেদ নিজে ওই ওয়ানডে ম্যাচে (২৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত) শ্রীলঙ্কা দলের বাস যাওয়া-আসার রাস্তা পরিদর্শন করেছিলেন। রাস্তায় দায়িত্বে দাঁড়ানো পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। সিসিপিও পারভেজ রাঠোরও একাধিকবার সাইট পরিদর্শন করছিলেন বলে লিখেছে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
এত কিছুর পরও হামলা হলো কীভাবে? এই জায়গায় অবশ্য রাজনৈতিক কারণের কথা উল্লেখ করেছে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। সে সময় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারে ছিল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। রাষ্ট্রপতি ছিলেন আসিফ আলী জারদারি ও প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানি। নিউজ ইন্টারন্যাশনাল লিখেছেন, পাকিস্তানের দুর্ভাগ্য,২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঞ্জাবে গভর্নরের শাসন জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার। এতে শুধু মুখ্য সচিব আর আইজিপি-ই নন, সিসিপিও, সাত এসপিসহ আরও অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়। এর ফলে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি জানিয়ে সিআইডি যে প্রতিবেদন করেছিল, সেটি আর অত গ্রাহ্য হয়নি বলে লিখেছে দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Golaf Rahman ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:০২ এএম says : 0
এই অভিযোগ বিশ্বাস করার মতো। ভারতেরই কাজ এটা।
Total Reply(0)
মুক্তিকামী জনতা ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:০২ এএম says : 0
পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করতে ভারত সবসময় চত্রান্ত করে আসছে।
Total Reply(0)
তোফাজ্জল হোসেন ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:০৩ এএম says : 0
ভারত প্রতিবেশীদের অস্থিতিশীল করতে যতটা প্রচেষ্টা চালাই তা যদি শান্তি প্রতিষ্ঠায় করতো তাহলে এশিয়া শান্ত হয়ে যেত।
Total Reply(0)
দেবব্রত চক্রবর্ত্তী ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:০৩ এএম says : 0
ভারতের মতো একাট সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বিশ্বের দ্বিতীয় আর নেই।
Total Reply(0)
রুকাইয়া খাতুন ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:০৪ এএম says : 0
ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাকিস্তান এগিয়ে যাক।
Total Reply(0)
aakash ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১০:২৪ এএম says : 0
vou vou vou vou .... he he he ....
Total Reply(0)
Sawrav ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:৩০ এএম says : 0
সত্যিই লজ্জাজনক ভারত আসলেই একটা নোংরা দেশ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন