শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চুরি করেই শত ট্রাক-পিকআপ কাভার্ডভ্যানের মালিক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

একের পর এক চুরি করে সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদ মালিক হয়েছেন বাড়ি, শত শত ট্রাক, পিকআপ ও কাভার্ডভ্যানের। মৌলভীবাজারে রয়েছে তার বিশাল অট্টালিকা। এর সবই তিনি গড়েছেন গার্মেন্টস পণ্য চুরির অর্থে। তিনি গার্মেন্টস পণ্য চোর চক্রের মূলহোতা। তার পরিকল্পনায় ও যোগসাজশে নিজস্ব যানবাহনে প্রায় পাঁচ হাজার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২৪টি মামলাও হয়েছে। চোরাই গার্মেন্টস পণ্য বিক্রি করে স্ত্রী সন্তানদের লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ গার্মেন্টস পণ্য চোরাই চক্রের হোতা সম্প্রতি আট মাস কারাভোগ শেষে বেরিয়েই আবার যুক্ত হন চোরাই কারবারে। গার্মেন্টস পণ্য চুরি সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা সিলেটি সাঈদসহ সাত জনকে গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদে এ সব তথ্য পেয়েছে ডিএমপির গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের একটি টিম। গতকাল সোমবার ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামের গার্মেন্টসের ১৭ হাজার ১৫২ পিস তৈরি পোশাক বিদেশে রফতানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নেয়ার পথে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়। ওই ঘটনায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গার্মেন্টস পণ্য চুরি সংঘবদ্ধ চক্রের মূলহোতা সিলেটি সাঈদসহ সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত পর্যন্ত রাজধানীর উত্তরা এবং কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার অন্যরা হলেন-রাজ্জাক, ইউসুফ, মাইনুল, আলামিন, দুলাল হোসেন ও খায়রুল। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে চার হাজার ৭০৫ পিস তৈরি পোশাকসহ দুটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়।
তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিবহনে যুক্ত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের যোগসাজশে গার্মেন্টস পণ্য চুরি করছে সংঘবদ্ধ চোরাই চক্রটি। বিশ্বে লিডিং রফতানিকারক বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পকে ঘিরে চোর চক্রের কারণে সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সংঘটিত চুরির ঘটনায় চোরাই মালামাল ও দুটি কাভার্ডভ্যান উদ্ধার এবং গার্মেন্টস পণ্য চোরাই চক্রের কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। গত ১১ মে জয়ন্তি নিট ওয়্যার লিমিটেড তৈরি পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ২৮ হাজার ৮২০ পিস পণ্য শিপমেন্ট করতে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে পাঠায়। বিদেশে মালামাল পৌঁছার পর জানা যায়, ওই শিপমেন্টে ১১ হাজার পণ্য কম। এজন্য বিদেশি বায়ার প্রতিষ্ঠানটিকে ২৮ হাজার ৯০৮ ডলার জরিমানা করে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুন্ন হয়। ওই ঘটনায় গত ১৭ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা দায়ের করে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ। এরই প্রেক্ষিতে ইমরান মোবারক ও ইব্রাহিম নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
তিনি বলেন, অন্যদিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর নেটওয়ার্ক ক্লোথিং লিমিটেড নামক গার্মেন্টসের তৈরি পোশাক ১৪৩১ কার্টুনে মোট ১৭ হাজার ১৫২ পিস বিদেশে রফতানির উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে যায়। মালামাল শিপমেন্টের সময় গণনাকালে ৫০০০ পিস মাল কম পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মামলা হয়। তেজগাঁও জোনাল টিম তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকা মহানগরের উত্তরা এলাকা থেকে চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও একটি কাভার্ডভ্যানসহ রাজ্জাক, ইউসুফ, খায়রুল ও মাইনুলকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারদের দেয়া তথ্যমতে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার নিমসার এলাকা থেকে চোরাই গার্মেন্টস মালামাল ও একটি কাভার্ডভ্যানসহ আল-আমিন ও দুলালকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে এবং তাদের দেয়া তথ্যমতে পুরো চক্রের মূলহোতা মো. সাহেদ ওরফে সিলেটি সাঈদকে গ্রেফতার করা হয়। সিলেটি সাঈদের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ২৪টি মামলা রয়েছে।
চট্টগ্রামে তিনি ছয়টি মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছেন। চোর চক্রের অন্য সহযোগীদের সহায়তায় তিনি বিভিন্ন সময় প্রায় পাঁচ হাজার চুরির ঘটনায় হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার পণ্য।
হাফিজ আক্তার বলেন, সিলেটি সাঈদের স্ত্রী সন্তানসহ লন্ডনে বসবাস করেন। তার মালিকানাধীন বিশাল অট্টালিকা রয়েছে মৌলভীবাজারে। তার রয়েছে প্রায় পাঁচ শতাধিক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ। এসব যানবাহন তিনি ভাড়ায় ব্যবহার করতেন গার্মেন্টস পণ্য শিপমেন্টের কাজে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গার্মেন্টস পণ্য পরিবহনে যুক্ত। নিজের ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ব্যবহার করে ও এজেন্সি, চালক ও শ্রমিকদের সহায়তায় সংঘবদ্ধ চোরাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন সাঈদ।
এত মামলা নিয়ে কীভাবে সিলেটি সাঈদ গার্মেন্ট পণ্য চোরাই চক্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল? জানতে চাইলে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, তিনি বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছেন। সর্বশেষ একটি মামলায় তিনি আট মাস কারাভোগ করেন। তবে বেরিয়েই আবার জড়িয়ে পড়েন গার্মেন্টস পণ্য চোরাই কারবারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Aman Ullah Talukder ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১০:২৭ এএম says : 0
এটা সত্য চোরে নাহি শোনে কভু ধর্মের কাহিনী। তবুও চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। যারা দূর্নীতি, চুরি-ডাকাতি বা অর্থ আত্বসাত মামলায় জেলে যায় তাদের মধ্যে সংশোধনের জন্য, যারা মুসলিম তাদেরকে জেলেই ইসলামী নৈতিক শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন