বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

ক্রিকেটের ‘জালাল ভাই’ আর নেই

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:৫৭ পিএম

দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে সবার কাছে ‘জালাল ভাই’ নামে পরিচিত ছিলেন। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও একই নামে তার পরিচিতি ছিল। সেই তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক কোচ ও বরেণ্য ক্রীড়া সাংবাদিক জালাল আহমেদ চৌধুরী আর নেই। স্বজনদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার আনুমানিক সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সব্যসাচী চরিত্র জালাল আহমেদ চৌধুরী। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে যান। মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ আসর আজিমপুরস্থ ইরাকি মসজিদ সংলগ্ন মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে মরহুমের লাশ দাফন করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে চলাফেরায় সুস্থই ছিলেন জালাল আহমেদ চৌধুরী। তবে হঠাৎ তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগলে ১ সেপ্টেম্বর তাকে প্রথমবার আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৫ সেপ্টেম্বর ফের হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। দ্বিতীয় দফায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর আর তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি ঘটেনি। গত শুক্রবার থেকে তাকে রাখা হয় ভেন্টিলেশনে, ছিলেন আইসিইউতে। ফুসফুসের সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগে শেষ পর্যন্ত পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলেই গেলেন সবার প্রিয় ‘জালাল ভাই’।

মরহুম জালাল আহমেদ চৌধুরী ছিলেন সাবেক ক্রিকেটার। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে সত্তর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি ঢাকা ক্রিকেট লিগে দাপটের সঙ্গেই খেলেছেন। খেলা ছেড়ে দেয়ার পর শুরু করেন কোচিং। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেট প্রশিক্ষক হিসেবে ভারতের পাতিয়ালায় কোচিংয়ের উপর উচ্চতর কোর্স করেন তিনি। পরে ক্রিকেট প্রশিক্ষক হিসেবে মোহামডান, ধানমন্ডি, কলাবাগানসহ বেশ কয়েকটি শীর্ষ ক্লাবে কাজ করেন। দেশের ক্রিকেটের এক সব্যসাচী চরিত্র ছিলেন জালাল। যিনি একাধারে ছিলেন ক্রিকেটার, কোচ, ক্রীড়া সাংবাদিক ও লেখক। তার হাত ধরেই দেশের অসংখ্য বড় ক্রিকেট তারকা উঠে এসেছেন। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন- জাতীয় দলের প্রথম ওয়ানডে অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, অন্যতম সেরা স্পিনার নজরুল কাদের লিন্টু, রবিন, গোলাম ফারুক সুরু, জি এম নওশের প্রিন্স ও তুষার ইমরান। তিন বছর আগেও জালাল আহমেদ চৌধুরী ছিলেন কলাবাগানের কোচ। মোহাম্মদ আশরাফুল যে মৌসুমে এক লিগে পাঁচটি শতক হাঁকিয়েছিলেন, সেই লিগেও তিনি ছিলেন আশরাফুলের দল কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের কোচ।

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ দলের আইসিসি ট্রফি জয়ের নেপথ্য কারিগরও ছিলেন মরহুম জালাল আহমেদ চৌধুরী। মূলত তার হাতেই গড়ে উঠেছিল সেই আসরের বাংলাদেশ দল। পরে টুর্নামেন্ট শুরুর ১০/১২ দিন আগে টাইগারদের কোচ হিসেবে বাংলাদেশ দলে যোগ দেন গর্ডন গ্রিনিজ। ক্রিকেট কোচের বাইরে তিনি ছিলেন দেশ বরেণ্য ক্রীড়া সাংবাদিক ও লেখক। আশির দশকে তৎকালীন বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকার স্পোর্টস ইনচার্জ হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। পেশাদার ক্রীড়া সাংবাদিকদের তিন সংগঠনের অন্যতম বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসজেএ) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। এছাড়া ছিলেন বিসিবির আম্পায়ার্স ও স্কোরার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদকের দায়িত্বেও। দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা চলে তাকে। একাধারে ক্রিকেটার, কোচ, আম্পায়ার, সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে সবার প্রশংসাধন্য ছিলেন তিনি। সব্যসাচী চরিত্রের এই সাবেক ক্রিকেটার, কোচ ও সাংবাদিকের মৃত্যুতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) মর্মাহত। তাই তো তার মৃত্যুর দিন বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের ১২তম সভা শুরুর আগে ১ মিনিট নীরবতা পালন করতে দেখা যায় বোর্ড পরিচালকদের।

জালাল আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল। এছাড়া শোক জানিয়ে পৃথক বার্তা দিয়েছে বিসিবি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস কমিউনিটি (বিএসজেসি), বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসজেএ) ও বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) সহ বিভিন্ন সংগঠন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন