শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সারাদেশে পণ্য পরিবহন ধর্মঘট

ভারতে পণ্য রফতানি বন্ধ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মহাসড়কে চাঁদাবাজি ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধসহ ১৫ দফা দাবিতে সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করছে বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক পণ্যপরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশন। এর ফলে সারাদেশে পণ্যবাহী পরিবহন বন্ধের পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে পণ্য রফতানি।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, দক্ষিণাঞ্চলেও গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ৭২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন শুরু করেছে বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশন। ধর্মঘটে অংশ নিয়েছে বরিশাল জেলা ট্রাক, ট্যাংকলড়ি, কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন। ফলে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত সারাদেশে বন্ধ থাকছে ট্রাক, ট্যাংকলড়ি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকসহ সব পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচল।

বাংলাদেশ ট্রাকচালক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি তালুকদার মো. মনির বলেছেন, সারাদেশে ১৫ দফা দাবি আদায়ে ট্রাক, ট্যাংকলড়ি, কাভার্ডভ্যানসহ পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল শুক্রবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। আমাদের দাবি মানা না হলে আরো কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আাওয়ামী লীগ দলীয় সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আজাদ হোসেন কালাম মোল্লা জানান, ধর্মঘট চলাকালে কোনো ট্রাক, ট্যাংকলড়ি ও কাভার্ডভ্যান চলতে দেয়া হবে না। আমরা বাধ্য হয়েই ১৫ দফা দাবি আদায়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। তিনি বলেন, মহাসড়কে চাঁদাবাজি ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তালুকদার মো. মনির বলেন, গাড়ির কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে পুলিশি হয়রানি এবং পৌর টোলের নামে সড়ক-মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

ধর্মঘটের সমর্থনে গতকাল দুপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশাল বিমানবন্দর মোড়ে সমাবেশ করেছে জেলা ট্রাক, ট্যাংকলড়ি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বরিশাল জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাউন্সিলর আজাদ হোসেন কালাম মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ছালাম, কোষাধ্যক্ষ আ. হালিম চান, লাইন সম্পাদক সরোয়ার বিশ্বাস, শাহিন গাজী, হুমায়ুন কবির প্রমুখ।

খুলনা ব্যুরো ও বেনাপোল অফিস জানায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য রফতানি ও বন্দর থেকে পন্য খালাস বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ কাভার্ডভ্যান-ট্রাক পণ্যপরিবহন মালিক অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ট্রাকচালক শ্রমিক ফেডারেশন। গতকাল সকাল থেকে আমদানি বাণিজ্য চালু থাকলেও বন্ধ রয়েছে রফতানি বাণিজ্য। বন্দর থেকে মালামাল খালাস বন্ধ থাকায় শতশত রফতানি পন্য বোঝাই ট্রাক আটকা পড়েছে বন্দর এলাকায়। বেনাপোল বন্দর থেকে ৫ কিলোমিটার ট্রাকের লম্বা লাইনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, প্রাইম মুভার (ট্রেইলার) বন্ধ রাখায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বন্দরে। ফলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীদের মাঝে। দেশের সিংহভাগ শিল্প কলকারখানা ও গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজের শতকরা ৮০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলবে এ ধর্মঘট। ফলে সকাল থেকে কোন পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান প্রবেশ করতে পারেনি বেনাপোল বন্দরে। ফলে বন্দরে মালামাল খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ পচনশীল সাদা মাছ রফতানির অপেক্ষায় পড়ে আছে বেনাপোল বন্দরে। বেনাপোল ট্রাক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ শামছুর রহমান বলেন, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি ও ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশন ১৫ দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। আমরা তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে পণ্যপরিবহন বন্ধ রেখেছি।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। তার ওপর পরিবহন ধর্মঘটে বন্দরে অচলাবস্থা সৃষ্টি করা আত্মঘাতী। ধর্মঘটে শিল্প কলকারখানা ও গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। অবিলম্বে ধর্মঘট প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে, সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ ১৫ দফা দাবিতে গতকাল সকাল থেকে সারাদেশের মত খুলনায় ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করছে বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ড ভ্যান মালিক শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। আগামী শুক্রবার ভোর পর্যন্ত চলবে এ ধর্মঘট। গত ৮ সেপ্টেম্বর তেজগাঁ কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে কেন্দ্রিয় নেতারা গতকাল থেকে ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার যদি তাদের দাবি না মেনে নেয় পরবর্তীতে বৃহত্তর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা।

গতকাল ভোর থেকে কোন পণ্য পরিবহন দূরপাল্লার উদ্দেশে যাত্রা করেনি। নগরীর বার্মাশীল রোড, জিরো পয়েন্ট, নূরনগর ও সাত নাম্বার ঘাট এলাকায় শতাধিক পণ্যবাহী গাড়ি রয়েছে। এ কারণে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়। চালকরাও অলস সময় কাটাচ্ছেন। পণ্য পরিবহনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ব্যবসায়ীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।

১৫ দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের অগ্রিম আয়কর নেওয়া যাবে না এবং এ পর্যন্ত নেওয়া অগ্রিম আয়কর ফেরত দিতে হবে। ১০ বছর ধরে ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চালকদের লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রয়েছে, অবলিম্বে তা চালু করতে হবে।

খুলনা ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল আলম বিপ্লব জানান, গতকাল থেকে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এ ধর্মঘট। সরকার মালিক শ্রমিকদের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়ন করছে। তারা এর পুর্নবিবেচনার দাবিও জানিয়েছেন। সরকার যদি তিনদিনের মধ্যে না মেনে নেয় তাহলে খুলনা থেকে বৃহত্তর আন্দেলনের ডাক দেওয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন