মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

স্কুল না আসার কারণ তারা এখন স্বামীর সংসারে

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৮:৩৪ এএম | আপডেট : ৮:৪১ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

করোনার বন্ধে অনেক স্কুল শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে গেছে। তারা এখন স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আবার অনেকে মা হয়েছেন। প্রেমের সম্পর্ক করেও বিয়ে করেছেন কয়েক শিক্ষার্থী। জানা গেছে, গত দেড় বছরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় ছয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৪২ শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে।লেখাপড়া বন্ধ করে এখন স্বামীর সংসার করছেন শিক্ষার্থীরা।

বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দেড় বছরে স্কুল শিক্ষার্থীদের বিয়ের সংখ্যা বেড়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দারিদ্রতা ও দুর্ঘটনা এড়াতে অভিভাবকরা কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন।

মির্জাপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে ১৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫৫টি মাধ্যমিক, ৮টি কলেজ, ১৪টি মাদরাসা এবং তিনটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ হাজার, উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৯ হাজার ১৯২, কলেজ শিক্ষার্থী ৮ হাজার ৭৫২ ও মাদরাসায় ৩ হাজার ৭৭৫ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে বলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিস সূত্র নিশ্চিত করেছে।

করোনা মহামারির এ সময়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা বাল্য বিয়ের খবর পেয়ে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হয়ে কয়েকটি বিয়ে বন্ধ করেন। কিন্তু পরবর্তীতে ওইসব পরিবারের অভিভাবকরা বিভিন্ন উপায়ে বয়স বাড়িয়ে মেয়েদের বিয়ে দেন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।

মির্জাপুর সরকারি সদয় কৃষ্ণ মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থী এক হাজার ৯৬২ জন। এরমধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী প্রেমের সম্পর্ক করে সম্প্রতি বিয়ে করেছে। এছাড়া ২০২১ সালের ২৮৮ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ জন ও ২০২২ সালের এসএসসি ৩৪৪ জনের মধ্যে ৫ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। এ বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৬৫ থেকে ৭৫ ভাগ।

সদরের মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এক হাজার ৪৬০ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। উপস্থিতির হার ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভোকেশনালসহ নবম শ্রেণিতে ২৯১ ছাত্রী রয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ জন বিয়ে হয়েছে। এছাড়া ২০২১ সালের ৩০৬ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩৪ জন এবং ২০২২ সালের ২৯৩ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জন বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। সদরের এই দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত বিয়ে হওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিদ্যালয়ে ক্লাস করছে বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ নিশ্চিত করেছেন।

দেওহাটা এ জে উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি হতে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এক হাজার ১১৯ জন শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে। অষ্টম শ্রেণির একজন, নবম শ্রেণির চারজন, এসএসসি (২০২১) ১৯৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৮ জন ছাত্রী, এসএসসি (২০২২) ২০৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজন ছেলে ও ১২ জন ছাত্রী বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খোরশেদ আলম জানিয়েছেন। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ।

উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত গেড়ামাড়া গোহাইলবাড়ি সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টিতে গত দেড় বছরে ষষ্ঠ শ্রেণির চারজন, সপ্তম শ্রেণির ৯ জন, ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ১৯ জন ও ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী ৯ জন ছাত্রী বাল্য বিয়ের স্বীকার হয়েছে বলে বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক ফিরোজ আল মামুন নিশ্চিত করেছেন। বিদ্যালয়টির আশপাশের গ্রামগুলো নিচু এলাকা হওয়ায় বন্যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে আসতে পারছে না। এ বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ।

এ দিকে মির্জাপুর উপজেলা সদরের আফাজ উদ্দিন দারুল উলুম দাখিল মাদরাসায় গত দেড় বছরে অষ্টম শ্রেণির একজন ও নবম শ্রেণির চারজন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে।

এই অবস্থা উপজেলার ৬৬ নম্বর বহুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এ বিদ্যালয়টিতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গত দেড় বছরে অষ্টম শ্রেণি পাশ তিন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম।

পোস্টকামুরী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শরফুননিছা খানম জানান, বিদ্যালয়টিতে শিশু শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৭৯৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। উপস্থিতির হার ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ।

সদরের আফাজ উদ্দিন দারুল উলুম দাখিল মাদরাসার সুপার মোহাম্মদ ফজলুল করিম বলেন, বাল্য বিয়ের অন্যতম কারণ দারিদ্রতা। করোনা মহামারিতে কর্মজীবী অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন। এতে দরিদ্র মানুষ বেশি বিপাকে পড়েন। একদিকে তাদের সংসার চালানো অপরদিকে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটাতে হিমশিমে পড়তে হয়। দারিদ্রতার কারণেও অনেক অভিভাবক মেয়েদের কম বয়সে বিয়ে দিয়েছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন বলে জানান।

গেড়ামাড়া গোহাইলবাড়ি সবুজ সেনা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক বলেন, বাল্যবিয়ে আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেড়ে উঠা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে বড় বাধা। শিক্ষার্থীদের অভিবাবকদের এ বিষয়ে বুঝালেও তারা বুঝতে চেষ্টা করেন না। বিভিন্ন উপায়ে মেয়েদের বয়স বৃদ্ধি করে তাদের বিয়ে দেন অভিভাবকরা।

মির্জাপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে অভিভাকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে ছিলেন। মেয়েরা বাড়িতে বসে অলস সময় কাটান। এতে দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে এমন চিন্তা করে অনেক অভিভাবক মেয়েদের বিয়ে দেন।

মির্জাপুর থানা মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা ও নিকাহ রেজিস্ট্রার (ভাতগ্রাম ইউনিয়ন) মো. ফরিদ হোসাইন বলেন, অপ্রাপ্ত ছেলেমেয়ের বয়স বৃদ্ধির মাধ্যমে বিয়ের বৈধতা নেই। তিনি একটি বাল্য বিয়েরও নিকাহ রেজিস্ট্রার করাননি। তবে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি সাপেক্ষে নিকাহ রেজিস্ট্রার করানো হয় বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানান, বাল্য বিয়ের খবর পেলে আমরা উপস্থিত হয়ে ওই বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। গত দেড় বছরে মির্জাপুর উপজেলায় কতজন শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছেন তার তালিকা করা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন