শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের দাবি

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের অনলাইন মতবিনিময় সভা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৮:১০ পিএম

সংবিধানে বর্ণিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের আলোকে সকল নাগরিকের সমানাধিকার নিশ্চিত করতে হলে অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন জরুরি বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা। অভিন্ন পারিবারিক আইনের মধ্যে অভিন্ন বিবাহ ও বিবাহ-বিচ্ছেদ রেজিস্ট্রেশন, ভরণপোষণ, অভিভাবকত্ব ও প্রতিপালন, দত্তক ও পোষ্যসন্তান গ্রহণ এবং উত্তরাধিকার আইন অর্ন্তভূক্ত। তারা আরও বলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইন না থাকায় সকলক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। চারটি প্রধান ধর্মাবলম্বীর পারিবারিক আইনে পার্থক্য থাকার কারণে সমাজে অবিচার রোধ করা যাচ্ছে না এবং সম্পদ-সম্পত্তিতে নারীরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কাজেই সম্পদ-সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা বর্তমান সময়ের দাবি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তারা এসব কথা বলেন।

সকল নাগরিকের সমানাধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রস্তাবিত অভিন্ন পারিবারিক আইন বিষয়ে আজ (২২ সেপ্টেম্বর ২০২১) বিকাল সাড়ে ৩টায় অনলাইনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের পক্ষে যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের ৫০ বছরে এসে দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমতার দর্শন থেকে দূরে আছি। সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পারিবারিক আইন সংস্কারের কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেও আইনে বৈষম্য ও অসমতা বিদ্যমান। এটা দূর করে সমতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সভায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রস্তাবিত অভিন্ন পারিবারিক আইন বিষয়ে লিখিত বক্তব্য উত্থাপন করেন সংগঠনের সহসাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম।

অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব সম্পর্কে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা.ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা থেকে রেহাই না পাওয়ার অন্যতম কারণ সামাজিক ক্ষমতা কাঠামোয় নারীর দূর্বল অবস্থান। নারীর ব্যক্তি অধিকার ধর্মীয় আচার-আচরণ দ্বারা নির্ধারিত। ধর্মের ভিত্তিতে নারী অধিকার নির্ধারিত হলে নারীসমাজ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। কাজেই সাংবিধানিক ধারার সাথে সংগতি রেখে তৃতীয় লিঙ্গ ও প্রতিবন্ধী নারীদের অধিকারসহ সকল নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ণ জরুরি। পাশাপাশি, সরকার নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য সিডওসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সনদ স্বাক্ষরও অনুমোদন করেছে। এসব সনদ বাস্তবায়ন করতে হলেও অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন জরুরি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এটা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে এবং করে যাবে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের পক্ষে যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব বিষয়ে আজকের আলোচনা ও মতামত থেকে তিনি সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং এ আলোচনা ও মতামত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব বরাবর উপস্থাপন করবেন।

অন্যতম সংবিধান প্রণেতা ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের যে আদর্শ ছিল, যে লক্ষ্য ছিল সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য যে প্রতিশ্রুতি ছিল তা সফল হয়নি। সকল নাগরিক যদি সমান হয় এবং আইনের আশ্রয় লাভের সমান অধিকারী হয় তাহলে সংবিধান অনুযায়ী নারীর প্রতি বৈষম্য দূর হয়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

মানবাধিকারকর্মী অ্যাড. সুলতানা কামাল বলেন, প্রচলিত পারিবারিক আইনগুলো ধর্মীয় আইন ও প্রথার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে এটা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নারীদের মধ্যে এবং একই সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। তিনি সংবিধানের ২৬ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা কিছু অসাংবিধানিক আইন নিয়েই গত ৫০ বছর ধরে চলেছি।’

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সার্বজনীন মানবাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, ধর্মীয় রীতিনীতি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-সবকিছুর সাথেই আজকের আলোচনা খুবই প্রাসঙ্গিক। যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে আইনসংস্কার কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত ও প্রতিহত করার চেষ্টা করছে তার কতটুকু ধর্মীয় চেতনার দ্বারা আর কতোটুকু কায়েমী স্বার্থের দ্বারা প্রভাবিত তা পরিষ্কার করে বোঝার প্রতি জোর দেন।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালিক, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, বাসুদেব ধর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর, অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন, বাংলাদেশ খ্রিস্টান এসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, অধ্যাপক জগন্নাথ বড়ুয়া, হিন্দু আইন সংস্কার পরিষদের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ড. ময়না তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক পুলক ঘটক, সহযোগী অধ্যাপক খ্রীস্টিন রিচার্ডসন প্রমুখ, অধ্যাপক ড. ডালেম চন্দ্র বর্মন, মানবাধিকারকর্মী রঞ্জন কর্মকার, গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল, ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, তাসলিমা ইয়াসমিন, মানবাধিকারকর্মী চঞ্চনা চাকমা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রেখা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক সাহানা কবির, অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম, সংগঠন সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ, প্রকাশনা সম্পাদক সারাবান তহুরা এবং নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন। সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের লিগ্যাল এ্যডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাড. মাকছুদা আখতার লাইলী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন