শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নৈতিক অবক্ষয় রোধে সামাজিক দায়িত্ব-২

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৫৩ এএম

কোরআনুল কারীমে নৈতিক শিক্ষার ওপর অসংখ্য আয়াত রয়েছে। এর ব্যাখ্যা খোদ হুজুর (সা.) এর পবিত্র সীরাত। তাঁর চরিত্রের সঠিক পরিচয় তুলে ধরেছেন উম্মুল মোমেনীন হজরত আয়েশা সিদ্দিকী (রা.) তাঁর এক সংক্ষিপ্ত বাক্যের মাধ্যমে। তিনি বলেন, কানা খুলুকুহুল কোরআন । অর্থাৎ হুজুর (সা.)-এর প্রতিকথা তাঁর আমল দ্বারা প্রমাণিত। তাছাড়া হুজুর (সা.) খোদ বলেছেন, ‘ইন্নামা বুয়িছতু লি উতাম্মোমা মাকারিমাল আখলাক’। অর্থাৎ আমিতো এই জন্য প্রেরিত হয়েছি যে, উত্তম চরিত্রের পূর্ণতা দান করব (মোসনাদে আহমদ) ।

সুতরাং তার উত্তম চরিত্র হতে যে ব্যক্তি যতটুকু শিক্ষালাভ করে নিজের চরিত্রকে উত্তমরূপ দান করেছে, হুজুর(সা.) এর দরবারে সে ততটুকু উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয়েছে। হাদীসের গ্রন্থাবলিতে উত্তম চরিত্রের ওপর অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এখানে আমরা কেবল একটি হাদীসের কথা উল্লেখ করতে চাই।

বোখারী শরীফের হাদীসে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: শুনে রেখো! তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকই হেফাজতকারী-রক্ষক এবং তোমাদের মধ্যে প্রত্যেককে তার অধীনস্থ সর্ম্পকে প্রশ্ন করা হবে। ইমাম যে লোকদের শাসক, তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে তার অধীনস্থদের সর্ম্পকে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘর ও সন্তানদের রক্ষক। তাকে তাদের সর্ম্পকে প্রশ্ন করা হবে। গোলাম (নওকর) তার মালিকের মালামালের রক্ষণা-বেক্ষণকারী, তাকে সে সর্ম্পকে প্রশ্ন করা হবে। (আবার শুনে রেখো) তোমাদের মধ্যে প্রত্যেক তার অধীনস্থদের রক্ষক এবং তোমাদের মধ্যে প্রত্যেককে তার অধীনস্থ সর্ম্পকে প্রশ্ন করা হবে।

পরিবার হতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকের নেতৃত্বদানকারী প্রধান ব্যক্তিকে তার অধীনস্থদের সর্ম্পকে প্রশ্ন করার অর্থ হচ্ছে সমাজের কঠোর চাপের মধ্যে কেউ অন্যায় করার সাহস করবে না, কিন্তু সামাজিক চাপ না থাকলে পরিবেশ বিনষ্ট হবে এবং লোকেরা নানা পাপাচারে লিপ্ত হবে (নৈতিকতা বির্বজিত কাজে)।

ফলে সমাজ হবে কলুষিত এবং তাতে ছড়িয়ে পড়বে অনৈতিক কার্যাবলি, যেগুলো পরিণামে মানুষকে জাহান্নামের আগুনের অধিকারী করে। অনুরূপভাবে পরিবার প্রধানের উপর সন্তানাদির নৈতিক শিক্ষন-প্রশিক্ষণ এবং দেখভালের দায়িত্ব অপর্ণ করা হয়েছে। এ দায়িত্ব তারা এড়িয়ে যেতে পারে না। কোরআনের এ মৌলিক শিক্ষার সঠিক অনুসরন করা হলে বিশেষভাবে কোনো মুসলিম ঘরানার কোনো সন্তানই বিপথগামী হতে পারে না।

হাদীসে বর্ণিত বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে একটি শ্রেণির কথা বলা হয়েছে যে, স্বামীর পরিবারের রক্ষক স্ত্রী। পারিবারিক জীবনে এটি একটি সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য বহনকারী দিক। জীবনযাপনের চাহিদার তাগিদে গৃহকর্তা স্বামীকেই সাধারণত ঘরে-বাইরে কাজকর্মে ব্যস্ত থাকতে হয়।

এসময় স্ত্রীকে পরিবারের মান-মর্যাদা রক্ষাসহ ঘর সামলানো, ছেলে-মেয়ে ও পরিবারের সদস্যদের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতে হয় । বিশেষত শিশু সন্তানদের লালন-পালন তথা তাদের দেখভাল করা অতি জরুরী বিষয় হিসেবে দেখা দেয়। সন্তানের শৈশব হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়, বাবার চেয়ে মায়ের সান্নিধ্যই তার শারীরিক, মানসিক ও চারিত্রিক গঠন-বর্ধনের উপযুক্ত সময়।

বিশেষভাবে নাগরিক জীবনে কর্মমুখী নারীদের ও পুরুষদের ন্যায় যার যার কর্মস্থলে দিবসের সিংহভাগ সময় ব্যয় করতে হয়। যাদের শিশু সন্তান রয়েছে তাদের অনেকেরই ঝি-বুয়া তথা গৃহকর্মী মহিলাদের দায়িত্বে সন্তানদের সমার্পন করে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। সন্তানদের এ গুরুত্বপূর্ণ সময় বুয়া শ্রেণির মহিলাদের ওপর অর্পিত থাকাটাই স্বাভাবিক। যার পরিণতি সর্ম্পকে হয়তো অনেকেরই কোনো ভাবনা থাকে না।

নাগরিক জীবনে এটিই হচ্ছে পরিবারতন্ত্রের একটি নতুন রূপ। সুতরাং এ শ্রেণির পরিবারের সন্তানেরা কোন শিক্ষা-চরিত্র নিয়ে বাড়বে, সে প্রশ্ন অনেকেরই। যারা আগামীদিনের ভবিষৎ উজ্জ্বল করার যোগ্য বলে বিবেচিত হবার কথা, তাদের পক্ষে লালিত-পালিত হবার এহেন পরিবেশ তৈরি করা এ কোমলমতি শিশু সন্তানদের মৌলিক অধিকার হরণ ছাড়া আর কি হতে পারে! পরিশেষে হজরত শেখ সাদী (র.) এর বিখ্যাত কবিতাটি দিয়েই লেখা শেষ করতে চাই। তিনি বলেছেন : বে মুরব্বী কায় তাওয়ানাদ, ত্রিফলে দানেশ ওয়্যার সুদান/ কাত্রা রা এমুঁকা নাবাসাথ বে-ছদক গওহার সুদান’।

অর্থাৎ বৃষ্টির ফোটা যেমন ঝিনুক ব্যতীত মুক্তা দিতে পারে না, তেমনি মুরব্বী-অভিভাবক ছাড়া শিশু (সন্তান) জ্ঞানী হতে পারে না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
নাবিল আব্দুল্লাহ ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৩৬ এএম says : 0
জাতীয় ও সমাজ জীবনে সামাজিক মূল্যবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সমাজ জীবনে আমরা বিভিন্ন ঘটনা কিংবা বিষয়ের বিভিন্ন মূল্য নির্ধারণ করি। এ কাজটি করার সময় আমরা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, নৈতিক চেতনা, চিন্তা ও অনুভূতির দ্বারা পরিচালিত হই। সেভাবেই আমরা নীত হই মূল্যবোধের বলয়ে। সে ক্ষেত্রে আমাদের অবলম্বন নৈতিকতা, মানবকল্যাণ, সত্য ও সুন্দরের আকাক্সক্ষা, ন্যায় ও সত্যের প্রতি নিষ্ঠা, গণতন্ত্র, কল্যাণমুখী রাজনৈতিক ব্যবস্থা, মানবাধিকার প্রভৃতি। এসব কিছুর সমন্বয়ে যেসব মূল্যবোধ সৃষ্টি ও লালিত হয় মানবসমাজে সেগুলোই সাধারণত অভিহিত সামাজিক মূল্যবোধ হিসেবে।
Total Reply(0)
Adhora Rahman ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৩৮ এএম says : 0
অপশক্তি এবং অপরাজনীতির কারণে জনসাধারণ মানসম্মত সেবা এবং নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত। নির্যাতন-নিপীড়ন, জুলুম-অত্যাচার, নিরাপত্তাহীনতায় জনজীবন দুর্বিষহ। মূল্যবোধের অবক্ষয়ে আমাদের সমাজ, শিক্ষাঙ্গন এবং বিশ্বসমাজ হয়েছে কলুষিত।
Total Reply(0)
সফিক আহমেদ ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৩৮ এএম says : 0
আমাদের সমাজে মূল্যবোধের যে সংকট চলছে, তার কারণ পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় শিক্ষা, রাজনৈতিক মূল্যবোধ এসব শাশ্বত মূল্যবোধ আজ উপেক্ষিত।
Total Reply(0)
কাওসার ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৩৯ এএম says : 0
এই সামাজিক অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচতে হলে সর্বস্তরে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি। পারিবারিক বন্ধন বজায় রেখে পরিবার থেকেই ধর্মচর্চা ও নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। সমাজে ভ্রাতৃত্ব, সমপ্রীতি, পরমত সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করাসহ সর্বক্ষেত্রে অশ্লীলতাকে বর্জন এবং সকল ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ ও অন্যায়কে প্রতিহত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
Total Reply(0)
দুলাল ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৪০ এএম says : 0
মানুষ সামাজিক এ দায়িত্ব থেকে দূরে সরার কারণেই সামাজিক অন্যায়গুলো দিন দিন বেড়েই চলেছে। অপরাধীরা আরো উৎসাহী হচ্ছে। অপরাধপ্রবণতা ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে সমাজে যে বহু রকম ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে তার দায় সমাজের সদস্য হিসেবে আমরা এড়িয়ে যেতে পারি না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন