শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের খিলগাঁও গ্রামের এক গৃহবধূকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। জ্বিনের আছর আছে এমন অভিযোগ তুলে তার স্বামী দুলাল গাজী তাকে মারধর করেন। ওই গৃহবধূর নাম তামান্না আক্তার (২২)। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বৃহস্পতিবার রাতে তাকে মারধরের পর আজ শুক্রবার সকালে তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের ভর্ত্তাইসার গ্রামের তোতা মিয়ার মেয়ে তামান্না আক্তার। ২০১৮ সালে একই উপজেলার খিলগাঁও গ্রামের দুলাল গাজীর সাথে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে প্রায়ই তাকে মারধর করেন স্বামী দুলাল গাজী। তাকে জ্বিনের আছর করেছে এমন অভিযোগ তুলে মারধর করা হত। কয়েক দফায় তাকে বাড়ি থেকেও বের করে দেয়া হয়। ২০১৯ সালে তাকে বাথরুমে বেঁধে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে বাবার বাড়িতে নিয়ে যায়। এ নিয়ে দুই পরিবারের আত্মীয়-স্বজনরা একাধিকবার শালিস-মীমাংসা করেন।
বৃহস্পতিবার রাতে দুলাল গাজী তামান্নাকে মারধর করেন। ওই অবস্থায় তিনি শরীয়তপুরের এক সাংবাদিককে ফোন করেন। ওই সাংবাদিক বিষয়টি পালং থানার পুলিশকে জানায়। পরে রাতে তামান্নার বাবা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
তামান্না আক্তার বলেন, আমাকে শ্বশুর বাড়ির কেউ দেখতে পারেনা। সংসারের কোন কাজ-কর্মে ভুল-ভ্রান্তি হলেই আমাকে মারধর করা হয়। আর তারা অপবাদ দেন আমাকে নাকি জ্বিনে আছর করেছে। আমার ৩ বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। এসব কারণে সন্তানটিও আতঙ্কিত হয়ে অসুস্থ হয়ে পরছে।
তামান্নার বাবা তোতা মিয়া বলেন, এর আগেও ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসের ১১ তারিখ তামান্নাকে টয়লেটে আটকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে দুলাল। তখন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতাল ভর্তি করে দীর্ঘ দিনের চেষ্টায় সুস্থ করা হয়। তামান্নার সাথে জ্বিন রয়েছে দাবি করে তাকে জ্বিনে মেরেছে বলে তখনও দাবি করেন স্বামী দুলাল গাজী। এক নারীর সাথে দুলালের অনৈতিক সম্পর্কের প্রতিবাদ করায় আমার মেয়েকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
তামান্না আক্তারের স্বামী দুলাল গাজী বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে মারধর করিনি। তাকে জ্বিনে আছর করেছে। সে বিভিন্ন সময় বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়, আবার ফিরে আসে। তাকে কে মারধর করে আমি জানিনা।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন বলেন, তামান্না নামের এক গৃহবধূকে তার স্বামী মারধর করছেন এমন অভিযোগ পাওয়ার পর ওই নারীকে ফোন করি। তার বাবার বাড়ির লোকজনকে বলেছি লিখিত অভিযোগ দিতে। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর তার স্বামীর বাড়ির লোকজনকে ফোন করলে তারা জানায় মেয়েটিকে জ্বিনে আছর করেছে। এমন ভিত্তিহিন কথাইবা তারা কেন বলছেন তা খতিয়ে দেখা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন