শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কাশ্মীর সঙ্ঘাত সমাধানে ভূমিকা রাখতে হবে

সরকারকে ব্রিটিশ এমপিদের আহবান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:৫২ এএম

ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির একজন সংসদ সদস্য (এমপি) স্টিফেন কিনক ভারত অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের (আইআইওজেকে) স্থলভাগের পরিস্থিতি ‘গভীর উদ্বেগজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন, এবং যুক্তরাজ্য সরকারকে কয়েক দশকের সমাধানে সমাধানে ভ‚মিকা রাখার আহŸান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার হাউস অব কমন্সের একটি অধিবেশন, কাশ্মীর ইস্যুতে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এই সংঘাত হাজার হাজার মানুষের প্রাণ নিয়েছে। কিনক বলেন, ‘৭২ বছর ধরে জম্মু ও কাশ্মীরের এই সংঘাত চলছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দীর্ঘতম অমীমাংসিত সংঘাত। এটি ১৯৪৭ সালের এবং এটি রাজনৈতিক ও সামরিক দ্ব›েদ্বর দীর্ঘ এবং করুণ ইতিহাস দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্যের ভ‚মিকা পালন করা শুধু ঐতিহাসিক দায়িত্বই নয়, দেশটির সঙ্গে অনেক বন্ধন রয়েছে যা ২০২১ সালেও এটিকে আবদ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান ও ভারতে আমাদের বন্ধু এবং অংশীদারদের সাথে এবং কাশ্মীরি জনগণের সাথে শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করার সুযোগ রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, গত ৩০ বছরে অধিকৃত কাশ্মীরে ৯৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এটি ‘বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সামরিকীকৃত অঞ্চল’ হিসেবে স্বীকৃত। তার কথায়, ‘এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে, কাশ্মীর ভারত, চীন এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটি রাজনৈতিক ঘুঁটি হয়ে উঠেছে। তিনটি দেশের হাতেই পারমাণবিক ক্ষমতা রয়েছে।’

গত ৫ আগস্ট, ২০১৯ তারিখে, যুক্তরাজ্যের এই সংসদ সদস্য বলেছিলেন যে, ভারত সরকার সর্বজনীনভাবে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করেছে, স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে প্রতিস্থাপন করেছে এবং এর পরিবর্তে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল সরাসরি নয়াদিল্লি দ্বারা শাসিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার কিনক বলেন, ‘এর পরে ভারতীয় সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত লকডাউন জারি করেছিল। লকডাউন এবং ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা কাশ্মীরি মানুষের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সবইক্ষুণ্ন হয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘এই একতরফা পদক্ষেপটি একটি শান্তিপূর্ণ এবং সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী নিষ্পত্তি অর্জনের চেষ্টার ক্ষেত্রে বিপরীত ছিল।’ কিনক জানান, লেবার পার্টি নয়াদিল্লিকে এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার সময় কাশ্মীরি নাগরিকদের ব্যক্তিগত অধিকার এবং স্বাধীনতার উপর প্রভাব সাবধানে মূল্যায়ন করার আহŸান জানাবে। তিনি বলেন, ‘লেবার পার্টি সবসময় কাশ্মীরের মানুষের অধিকারের জন্য কথা বলবে।’

আরেক ব্রিটিশ সংসদ সদস্য নাজ শাহ বলেন, গত শতাব্দীর ঘটনার পর, ‘এখনই আমাদের সবার জানা উচিত যে ফ্যাসিবাদী দল কেমন দেখায়, কথা বলে এবং কেমন কাজ করে’। আমাদেরও জানা উচিত যে, অবৈধ দখলদারি এবং জাতিগত নিধন কেমন দেখায়। যাইহোক, আমরা আমাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছি, এটা জেনেও যে, বিজেপির গণহত্যার দিকে যাত্রা করছে। জেনোসাইড ওয়াচের উদ্ধৃতি দিয়ে নাজ বলেন, কাশ্মীর সামরিক শাসনের অধীনে থাকলেও জম্মু ও কাশ্মীরে গণহত্যা প্রক্রিয়ার দশটি ধাপের সবই সম্পন্ন হয়।

‘কেন দ্বৈত মান,’ নাজ শাহ প্রশ্ন করেন, ‘অন্যায় কি সর্বত্র ন্যায়বিচারকে প্রভাবিত করে না? আমরা কি আমাদের বন্ধুদের এবং ব্যবসায়িক অংশীদারদের জন্য আলাদা মান এবং আমাদের শত্রæদের জন্য ভিন্ন মান প্রয়োগ করি? শত্রæদের সমালোচনা করা সহজ কিন্তু আমাদের বন্ধুদের সমালোচনা করার সাহস কি আমাদের আছে? তিনি মনে করিয়ে দেন যে, কাশ্মীরকে দেশভাগের অসমাপ্ত ব্যবসা বলে মনে করা হয়। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী এবং এই অঞ্চলে কাশ্মীরিদের মনে প্রশ্নটি কেবল এই যে, ‘গুজরাটের কসাই’ কীভাবে দেশভাগের এই অসমাপ্ত ব্যবসাকে নিষ্পত্তি করবে। জেনোসাইড ওয়াচের দেওয়া মূল্যায়ন যদি চলতে থাকে, তাহলে আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি।’

লেবার পার্টি থেকে এমপি আফজাল খান বলেন, আইআইওজেকে -তে মানবাধিকার পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ। ‘কাশ্মীর সংঘাত জাতিসংঘের এজেন্ডায় দীর্ঘতম অমীমাংসিত বিরোধ। মহামারীর সময় কাশ্মীরিদের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। কাশ্মীরের মানুষ একটি অনিশ্চিত এবং অন্ধকার ভবিষ্যতের মুখোমুখি।’ তিনি বলেন, ‘সংখ্যালঘু অধিকারের শ্বাসরোধ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার অভাব খ্রিস্টান এবং দলিত সহ সংখ্যালঘুদের চলমান কৃষকদের বিক্ষোভ এবং বিক্ষোভের দ্বারা চিত্রিত হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাশ্মীরই ভারতের একমাত্র রাজ্য যেখানে বিক্ষোভ দমনে বন্দুক ব্যবহার করা হয়। যার কারণে শিশুসহ ৭০০ কাশ্মীরি অন্ধ হয়ে গিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘ভারত একটি ক্ষয়িষ্ণু গণতন্ত্র। ব্রিটিশ সরকার ভারতের সাথে বন্ধুত্ব এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা বলতে পছন্দ করে কিন্তু সত্যিকারের বন্ধুত্বের জন্য সততা এবং জবাবদিহিতা প্রয়োজন। কাশ্মীর সংঘাতে যুক্তরাজ্যের ভ‚মিকা আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। সংঘাতের শিকড় তার উপনিবেশিক অতীতে রয়েছে। যা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সহিংস বিভাজনকে সহজতর করেছিল এবং কাশ্মীরিদের ভাগ্যকে অনিশ্চিত করে রেখেছিল ‘ সূত্র : ট্রিবিউন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন