বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

বিনিয়োগে প্রধানমন্ত্রীর আহবান

| প্রকাশের সময় : ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের দেশে বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার প্রবাসীদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এই আহবান জানান। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর রাতে নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট হোটেলে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রবাসীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রবাসীরা বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগ করতে পারেন। শুধু আমেরিকাতেই বিনিয়োগ করবে তা নয়, দেশেও তারা বিনিয়োগ করতে পারেন। বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে সরকার দেশে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা করে দিচ্ছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলও গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রবাসী ব্যবসায়ীদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর এই আহবান ইতিবাচক এবং উৎসাহব্যঞ্জক। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রধানমন্ত্রী যখনই দেশের বাইরে যান, তখনই দেশে বিনিয়োগের জন্য প্রবাসীদের তাকিদ দেন। এতে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে তাঁর আন্তরিক আকাক্সক্ষার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়।

বিগত এক দশক ধরে দেশের বিনিয়োগের চিত্রটি আশাব্যঞ্জক নয়। সরকারি বিনিয়োগ থাকলেও বেসরকারি এবং বিদেশী বিনিয়োগ হতাশাজনক। সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ বা এফডিআই-এর গতি অত্যন্ত ধীর। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালে বিদেশী বিনিয়োগ ছিল ৭৭৫ মিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে তা হয়েছে ১৫১০ মিলিয়ন ডলার। জাতিসংঘের বিশ্ব বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা আনকটাড-এর হিসাব অনুযায়ী, গত বছর করোনা মহামারিতে যেখানে চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিদেশী বিনিয়োগ শতকরা ৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ভিয়েতনামে ১৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হলেও বাংলাদেশে হয়েছে মাত্র ২.৫৬ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ জিডিপি’র ১ ভাগ, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। যদিও বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা উৎসাহমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে বলা হচ্ছে, তবে তার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, ‘ডুয়িং বিজনেস’ বা ব্যবসা সহজীকরণ সমস্যা। বিশ্ব ব্যাংকের ২০২০ সালের ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৬৮। বিশ্ব প্রতিযোগিতামূলক সূচক (জিসিআই)-এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূল সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্বল স্থাপত্য কাঠামো, নতুন শিল্পকারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে দীর্ঘসূত্রতা, সঠিক লোকবলের অভাব এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। এছাড়া সম্পদ স্থানান্তর ও অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় লাগা। দেখা যাচ্ছে, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একজন বিনিয়োগকারীকে নানা সমস্যা ও ঝক্কির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এর ফলে তারা উৎসাহ হারিয়ে ফেলছে। অন্যদিকে, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ সহজ করার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করাসহ বিনিয়োগকারীদের সর্বোচ্চ সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে অনেক এগিয়ে। বিনিয়োগের এসব সমস্যার কারণে দেশের অনেক বিনিয়োগকারীও বিদেশে চলে যাচ্ছে। সেখানে তারা নানা শিল্পকারখানা ও ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগ করছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগের সহজ সুবিধা পেয়ে কৃষিকাজ, গার্মেন্টসহ অন্যান্য ব্যবসায় তারা বিনিয়োগ করছে। প্রবাসীরাও নানাবিধ সমস্যার কারণে দেশে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহী করে তুলতে ব্যক্তিগতভাবে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তিনি প্রবাসীসহ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উদাত্ত আহবান জানাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। মীরসরাই, শীতাকুন্ড, সোনাগাজী অঞ্চলে ৩০ হাজার একর জায়গায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর সমাপ্তির পথে। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ এখানের বেশ কয়েকটি শিল্পকারখানা পুরোপুরি চালু হবে। এছাড়া বাকী শিল্পাঞ্চলগুলো নির্মাণাধীন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে কাজ করলেও, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা সমস্যা অন্তরায় হয়ে রয়েছে। বিনিয়োগ বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলো যদি আন্তরিকতার সাথে বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে দেশে বিনিয়োগের হার দ্রুত গতি লাভ করবে।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতিতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির বিকল্প নেই। একটি শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠা মানে কর্মসংস্থানসহ অর্থনীতির সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাওয়া। করোনায় আমাদের অর্থনীতির যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্থনীতিকে পুনরায় দাঁড় করাতে, বিনিয়োগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখন আরও কর্মতৎপর হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যেমন প্রবাসীদের বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন, তেমনি তাঁর সাথে তাল মিলিয়ে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতা দেখাতে হবে। বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। উন্নত বিশ্বসহ বিভিন্ন দেশে যেসব প্রবাসী ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী রয়েছে তারা যদি দেশে বিনিয়োগ করে, তাহলে আমাদের বিনিয়োগ কিছুটা হলেও বাড়বে। উন্নত বিশ্বে আমাদের অনেক চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল মানুষ রয়েছে। তাদের কিভাবে কাজে লাগানো যায় এবং তারা যাতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ করে ভূমিকা রাখতে পারে, এ ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে। কেবল বিদেশে রোড শো, বিনিয়োগ সম্মেলন করলে হবে না, এসব থেকে বিনিয়োগ আসার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের সামনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কি কি সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এবং তাদের চাহিদা সহজে পূরণ করার পদক্ষেপগুলো তুলে ধরতে হবে। প্রবাসী বা দেশী বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দিক প্রাধান্য দিলে হবে না। দল ও মত নির্বিশেষে সকলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। তা নাহলে, বিনিয়োগকে গতিশীল করা যাবে না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Rafique zhc ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৭:২৬ পিএম says : 0
দেশে আটকা পড়া প্রবাসীদের কর্মস্হলে ফিরে যাওয়ার কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না, বিনিয়োগ করবে কে?
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন