মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ৮ দফা সুপারিশ

প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বার্ষিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সমানুপাতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের আহ্বান
চট্টগ্রাম ব্যুরো : আমদানি-রফতানিমুখী কন্টেইনারবাহী ও খোলা পণ্যসামগ্রী ওঠানামা, ডেলিভারি পরিবহনের ক্রমবর্ধমান চাপ, চাহিদা এবং প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে গৃহীত ও চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য ৮ দফা সুপারিশ করেছে চিটাগাং চেম্বার।
গতকাল (রোববার) চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির বন্দর ব্যবহারকারী স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে গঠিত পোর্ট-শিপিং বিষয়ক স্ট্যান্ডিং সাব-কমিটির এক সভায় এ সুপারিশ করা হয়। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ চেম্বার কার্যালয়ে চেম্বার পরিচালক ও কমিটির আহ্বায়ক মাহফুজুল হক শাহর সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও শিল্পোদ্যোক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভিশন-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তৈরিপোশাক রফতানির ক্ষেত্রে ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। চট্টগ্রাম বন্দরের সমৃদ্ধি মানে জাতীয় সমৃদ্ধি। প্রধান এ বন্দরের মাধ্যমে সমুদ্রপথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের ৯২ শতাংশ সম্পাদিত হয়। দেশের ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং বন্দরের ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ, অপারেশন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও টার্মিনাল বৃদ্ধির জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রকল্পসমূহ প্রশংসার দাবিদার।
সভায় বলা হয়, গভীর সমুদ্র বন্দরের বিকল্প হিসেবে এবং দেশের আগামী ৫০ বছরের চাহিদা মেটাতে বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন অতীব জরুরি। তবে এসব প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে জাহাজের টার্ন এরাউন্ড টাইমসহ এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা চি‎িহ্নত করা এবং তা সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। সভায় বন্দরের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও কর্তৃপক্ষের কাছে ৮ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে আগে প্রতিমাসে যেখানে ৫০টা জাহাজ আসতো এখন সেখানে ৭৫টা জাহাজ আসে। প্রত্যেক মাসে প্রায় ১ লাখ টিইইউএস কন্টেইনার আমদানির বিপরীতে ৫০ হাজার টিইইউএস রফতানি হয়ে থাকে। এরফলে ৫০ হাজার খালি কন্টেইনার নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বেসরকারি ডিপোগুলো (আইসিডি) অতিরিক্ত কন্টেইনার রাখতে চায় না এবং কোন কোন ডিপো আইটেম পোর্ট থেকে সরাসরি ডেলিভারি নেয়া হচ্ছে। বন্দরের অভ্যন্তরে কন্টেইনার জট আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। খালি কন্টেইনারের কারণে টার্মিনালে জট সৃষ্টি হচ্ছে এবং ফোর্স শিপমেন্টে বাধ্য করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে খালি কন্টেইনারের জন্য আলাদা ডিপো নির্মাণ যেমনÑ লালদিয়ার চরে ইয়ার্ড করে খালি কন্টেইনার রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বন্দরের ইকুইপমেন্ট (কন্টেইনার ও খোলা পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের যান্ত্রিক সরঞ্জাম) সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে লোডিং আন-লোডিংয়ে ব্যাপক সময়ের অপচয় হচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্যান্ট্রি ক্র্যান অর্ডার করার পরেও সরবরাহ পেতে ১৮ মাস সময় লাগবে। তবে অন্যান্য ইকুইপমেন্ট অত্যন্ত কম সময়ে সংগ্রহ করা সম্ভব। গ্যান্ট্রি ক্র্যানের বিকল্প হিসেবে কোলকাতা বন্দরের মতো মোবাইল হারবার ক্র্যান ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষকে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ওপর নির্ভর করতে হয়। যা একটি অত্যন্ত দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এরজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করার এখতিয়ার প্রদান করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নির্মাণের পর নীতিমালা নির্ধারণ করতে ৭ বছর ব্যয় হয়।
জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধার (নাব্যতা) জন্য ১নং এবং ২নং বার্থে ড্রেজিং করা প্রয়োজন। আমদানিকৃত কার্গোর প্রায় ৪০ শতাংশ বহির্নোঙরে খালাস করা হয়। কিন্তু বহির্নোঙরে বিশেষ করে ‘আলফা’য় প্রচুর স্ক্র্যাপ শিপ রাখার কারণে চার্টার শিপের সমস্যা হচ্ছে। তাই কুতুবদিয়া পর্যন্ত বন্দরের সীমা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
বন্দরের সেবার মানোন্নয়নে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে সমন্বয় সাধন অত্যন্ত জরুরি। এই দু’পক্ষের সমন্বয়ের অভাবে কারশেড এবং অকশনশেড কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বন্দরে স্ক্যানার সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। যে ক’টি স্ক্যানার আছে সেগুলো সবসময় ঠিকমত কাজ করে না। ফলে বন্দর ব্যবহারকারীরা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই স্ক্যানারের সংখ্যা প্রয়োজন অনুযায়ী বৃদ্ধি করতে হবে।
বন্দরের ট্রাফিক (পরিবহন) ব্যবস্থা গত কয়েক মাস ধরে কোন উন্নতি হয়নি। ঈদের পরে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে জাহাজের টার্ন এরাউন্ড টাইম ৬-৭ দিন লাগছে। জাহাজ বার্থিংয়ের পর কন্টেইনার খালাসে প্রচুর সময় লাগছে। ফলে অনেক সময় আমদানি কন্টেইনার খালাসের পরে রফতানিমুখী কন্টেইনার জাহাজীকরণ (লোড) না করেই জাহাজ ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। যা রফতানিসহ দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থী।
আলোচক বন্দর ব্যবহারকারীরা এসব পরামর্শ বিবেচনা ও সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী, নৌমন্ত্রী, এনবিআর চেয়ারম্যান, বন্দর চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
সভায় বক্তব্য রাখেন চেম্বারের বন্দর-শিপিং কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার গোলাম সরওয়ার, মোঃ আবদুল মান্নান সোহেল, বার্থ অপারেটরস শিপহ্যান্ডলিং অপারেটরস ওনার্স এসোসিয়েশনের ফজলে একরাম চৌধুরী, আতাউল করিম চৌধুরী, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী, ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী, মার্কস বাংলাদেশ লি-এর মোঃ সরওয়ার আলম চৌধুরী, ক্যাপ্টেন আলাউদ্দিন আল আজাদ, সাগর দোভাষ, এ কে এম শামসুজ্জামান (রাসেল) এবং মোঃ আবু সাঈদ প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন