দুই. হালাল অর্থ থেকে দান করা : দান করতে হয় হালাল সম্পদ থেকে। অন্যথা এই দান কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : হে মুমিনগণ! তোমরা যা কিছু উপার্জন করেছ এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা কিছু উৎপন্ন করেছি, তার উৎকৃষ্ট জিনিসসমূহ থেকে একটি অংশ (আল্লাহর পথে) ব্যয় কর। (সূরা বাকারা : ২৬৭)। মুমিন যদি ইখলাসের সাথে হালাল সম্পদ থেকে আল্লাহর পথে খরচ করে, আল্লাহ নিজ দায়িত্বে সেটিকে যত্ন করে গড়ে তোলেন, বড় করেন এবং কিয়ামতের দিন বান্দার হাতে তা বহু গুণে বর্ধিত করে তুলে দেবেন। শর্ত একটাই- ‘হালাল সম্পদ’ থেকে খরচ করতে হবে। প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ দান করে, -আর আল্লাহ ‘হালাল’ ছাড়া গ্রহণ করেন না- আল্লাহ তা ডান হস্তে গ্রহণ করেন। অতঃপর তা লালন-পালন করে বড় করতে থাকেন। যেমন তোমরা ঘোড়ার বাচ্চা লালন-পালন কর। একপর্যায়ে এই ‘সামান্য দান’ পাহাড়সম হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী : ১৪১০)।
তিন. দান করা উচিত পছন্দের জিনিস থেকে : যা আমি দান করছি তা তো আসলে পরকালের জন্যই আল্লাহর হাতে রেখে দিচ্ছি। বীজের জন্য মানুষ ভালো ফসলটাই রেখে দেয়, যাতে নতুন করে বীজ বোনা যায়। কাজেই মুমিনেরও উচিত, হাতে থাকা সম্পদ থেকে উত্তমটাই আল্লাহর কাছে গচ্ছিত রাখা। নিজের পছন্দের জিনিসটি আল্লাহর পথে খরচ করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : তোমরা কিছুতেই পুণ্যের নাগাল পাবে না, যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু হতে (আল্লার জন্য) ব্যয় করবে। (সূরা আলে ইমরান : ৯২)।
আমাদের পূর্বসূরিগণ ছিলেন কোরআন-সুন্নাহর ওপর আমলের জীবন্ত নমুনা। দ্বীন সম্পর্কে যা জানতেন তাই আমলে পরিণত করতেন। এক্ষেত্রে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। বিখ্যাত তাবেয়ী ইমাম রবী ইবনু খুছাইম রাহ.। জ্ঞান-গরিমা এবং বিচক্ষণতায় ছিলেন আপন যুগের তুলনারহিত এক ব্যক্তিত্ব। তাঁর সম্পর্কে নুসাইর রাহ. বলেন : কোনো ভিখারী এলে রবী ইবনে খুছাইম বলতেন, তাকে চিনি খাওয়াও (দাও); কারণ, রবী চিনি পছন্দ করে। (আযযুহদ, হান্নাদ ইবনুস সারী ১/৩৪৪)।
চার. সাধ্য অনুযায়ী অল্প হলেও দান করা : কারো মনে এ ভুল ধারণা জন্মাতে পারে, বা হতাশার উদ্রেক হতে পারে যে, দান করার সাধ্য কি আমার আছে? আমি স্বল্প আয়ের মানুষ; নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, আমি দান করব কীভাবে! না, হতাশার কোনো কারণ নেই! আল্লাহর রাস্তায় দান করার জন্য কাড়ি কাড়ি অর্থ লাগে না।
ইসলামের শিক্ষা হলো, যার হাতে যতটুকু রয়েছে, সাধ্যের ভিতর থেকে দান করবে। ইখলাসের সাথে হালাল রিযিক থেকে দান করলে ‘সামান্য অর্থ’ও আল্লাহ গ্রহণ করবেন, এর বিনিময়ে দান করবেন পাহাড়সম নেকি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি। তাই তো রাসূলুল্লাহ (সা.) জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য এক টুকরো খেজুর হলেও দান করতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে : জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করো, খেজুরের এক টুকরো (পরিমাণ সদকা করে) হলেও। (সহীহ বুখারী : ১৪১৭)।
এছাড়া একটু পূর্বেই আমরা জানলাম, হালাল রিযিক থেকে ইখলাসের সাথে বান্দার সামান্য একটি খেজুর পরিমাণ দানকেও আল্লাহ গ্রহণ করেন এবং তার সওয়াব বৃদ্ধি করে পাহাড়সম ফিরিয়ে দেন। সুতরাং দান করার জন্য অঢেল অর্থের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন এখলাস আর হালাল রিযিকের।
পাঁচ. দান করতে হয় নিজের প্রয়োজনে নিজ দায়িত্বে : ইসলামের দৃষ্টিতে দান করতে হয় নিজের প্রয়োজনে। দানের মাধ্যমে গ্রহীতার প্রতি অনুগ্রহ করা হচ্ছেÑ এমনটি নয় কখনো; বরং তার প্রাপ্য ও অধিকারটাই তাকে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন : আর যাদের সম্পদে নির্ধারিত ‘হক’ (অধিকার) রয়েছে যাঞ্চাকারী ও বঞ্চিতদের। (সূরা মাআরিজ : ২৪-২৫)।
অর্থাৎ কোরআনে কারীমে একে তাদের ‘হক’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং দানকারীর মানসিকতা থাকবে, দান করছি নিজের প্রয়োজনে। গ্রহীতা ‘দান’টা গ্রহণ করে কেমন যেন আমার প্রতিই এক ধরনের করুণা করল!
আল্লাহ আমাদেরকে ইখলাসের সাথে সঠিক পন্থায় দান করার তাওফীক দিন এবং আমাদের দানকে আমাদের কল্যাণ ও আখেরাতে নাযাতের ওসিলা বানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন