বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের ভবিষ্যৎ মার্কিন-চীনা সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল

মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ক্রুরতা- শেষ

দ্য ইকোনোমিস্ট | প্রকাশের সময় : ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

যুক্তরাষ্ট্রে ইন্ডিয়ানদের পতনের দিন থেকে দেশটি সাম্রাজ্যবাদী সহিংসতার ইতিহাসে অতি পরিচিত। যেহেতু মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর বা রাজনৈতিক শ্রেণীর সংস্কৃতিতে আদৌ কোন পরিবর্তন হয়নি, তাই বৈশ্বিক আধিপত্যের গতিপথ এবং বর্তমান মার্কিন শক্তির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কেউ কি আশা করতে পারে, তার কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

তবে মার্কিন শক্তি অনেকটা নির্ভর করে পৃথিবী কিভাবে পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে তার উপর। ভাবিষ্যতে ইউরোপ কি একটি সভ্য শক্তি হিসেবে নিজের সম্ভাবনা কথা উপলব্ধি করবে, প্রায় এক শতাব্দী আগের মারাত্মক সঙ্কট প্রতিক্রিয়াকে বিপরীতে ঘুরিয়ে, যখন ইউরোপ ফ্যাসিবাদে ডুবে গিয়েছিল এবং রুজভেল্টের নতুন চুক্তি সামাজিক গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত করেছিল?

এখন পৃথিবীটা অন্যরকম। ট্রাম্প তথাকথিত সভ্য মার্কিন সমাজের আস্তরের নীচের বহমান বিষকে নিপুণতার সাথে ব্যবহার করে এমন বিষাক্তভাবে চোলাই করেছেন যে, তা দেশটিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। তিনি এখন যে দলটির মালিক, তারা প্রকৃত ফ্যাসিবাদের দীর্ঘ অবনতি থেকে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে।

যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে ১৯৩০-এর দশক থেকে উল্টো ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি একটি নিষ্ঠুর প্রহসনে পরিণত হবে, বিশেষ করে তাদের জন্য, যাদের জীবনকে এটি যড়ন্ত্রের শিকারে পরিণত করবে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষমতা প্রদানকারী বিশ্বের জন্যও বিধ্বংসী হয়ে উঠবে। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দু হল চীন। উদাহরণস্বরূপ, অ্যানেনবার্গ সেন্টারের মতে, যারা বলে থাকে যে, তাদের ধারণার পক্ষে কোন প্রমাণ নেই, ‘এক-তৃতীয়াংশ আমেরিকান বিশ্বাস করে যে, করোনাভাইরাস চীন সরকার তৈরি করেছে একটি জৈব অস্ত্র হিসাবে।’ হুমকির মাত্রাগুলোকে আমূল বাড়িয়ে উপস্থাপন করা যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক আদর্শের অন্যতম।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন অভ্যন্তরীণ নথি, যেমন, ১৯৫০ সালে মার্কিন রাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিভাগ কর্তৃক প্রণীত একসময়ের গোপনীয় নীতিমালা এনএসসি-৬৮-এ মার্কিন দাস রাষ্ট্রের মৌলিক নকশা, সোভিয়েত শত্রু, এবং বাকি বিশ্বের উপর সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব অর্জনের বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে মার্কিন উন্মাদনার উল্লেখযোগ্য নজির রয়েছে।

চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তিটি বাস্তব এবং প্রায়ই বাজেভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এসব অপরাধ কি যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও হুমকি? অভ্যন্তরীণ নিপীড়ন মারাত্মক কিন্তু তা অন্যান্য অনেক নৃশংসতার চেয়ে বড় আন্তর্জাতিক হুমকি নয়, যেগুলোর মধ্যে কয়েকটি যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত বাড়িয়ে তোলার পরিবর্তে সহজেই এর অবসান ঘটাতে পারতো। যেমন, আমেরিকার একনিষ্ঠ সমর্থনে গাজায় ২ মিলিয়ন মানুষের উপর ইসরাইলের অমানবিক নির্যাতন।

দক্ষিণ চীন সাগরে, চীন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে যদিও দীর্ঘদিন ধরে তা অনুমোদন করতে অস্বীকৃতি জানানো যুক্তরাষ্ট্র (সমুদ্রের আইনের নীতি বিরোধী) আপত্তি করার মতো শক্ত অবস্থানে নেই। মার্কিন শক্তির বিপজ্জনক প্রদর্শনী চীনের আইন লঙ্ঘনের সঠিক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং এর সমাধান হ’ল, আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সরাসরি নেতৃত্বে কূটনীতি এবং আলোচনা। অন্যান্য সঙ্ঘাতের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

যেসব সঙ্কট বিশ্বকে হুমকিতে ফেলেছে, সেগুলোর কোন আঞ্চলিক সীমানা নেই। বর্তমানের বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকির মধ্যে আর দেরি করার পরিস্থিতি নেই। এবং পৃথিবী যেসব সঙ্কটের মুখোমুখি, তার প্রত্যেকটির জন্য পরিচিত, সম্ভাব্য প্রতিকার রয়েছে। একটি সংগঠিত এবং সংঘবদ্ধ জনসাধারণ ব্যক্তিগত এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোর মুখোমুখি হতে পারে, যা স্বল্পমেয়াদী স্বার্থের দৌড়কে রসাতলে নিয়ে যেতে পারে এবং নীতি নির্ধারকদের সমাধান বাস্তবায়নে বাধ্য করতে পারে।

এখন যুক্তরাষ্ট্রের এবং বিশ্বের ভবিষ্যৎ প্রকৃত আন্তর্জাতিকতাবাদের একটি বিশ্বজনীন সমাজে মার্কিন-চীনা সহযোগিতার ওপর নির্ভর করে। একবার যদি আমরা নিজেদেরকে ‘আমরা ব্যতিক্রম’ ভাবা বন্ধ করে দেই এবং সমস্যগুলিকে সার্বজনীন হিসেবে নেই, আমরা নিজেদেরকে একই মানদণ্ডের বিচার করতে পারবো, যা আমরা অন্যদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করি। (নৈতিক ভিত্তিতে আমাদের নিজেদেরকে উচ্চতর মানদণ্ডে রাখা উচিত) কেন নিজেদের ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করি? যদি আমরা এই প্রশ্নের মুখোমুখি হই, তখনই আমাদের নিজস্ব পৃথিবীর চিত্রটা বদলে যাবে। (সমাপ্ত)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন