শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

টাঙ্গাইলে বাল্যবিয়ের শিকার ১২৪২ শিক্ষার্থী

করোনাকালীন স্কুল বন্ধ

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসাগুলোর তালিকা অনুযায়ী জেলার ১২টি উপজেলায় করোনাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ২৪২ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১ হাজার ২৪০ ছাত্রী ও ২ ছাত্র রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম । তবে বাস্তবে কয়েকগুণ বেশি শিক্ষার্থী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু মাধ্যমিকে নয় প্রাথমিকেও বাল্য বিয়ে হয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। কিন্তু বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তাতে কোন শিক্ষার্থী বাল্য বিয়ের শিকার হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা অফিসার মো.আব্দুল আজিজ মিয়া।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, বাল্যবিয়ের শিকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরাঞ্চলের হুগড়া হাবিব কাদের উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ৫০ জন, কালিহাতীর ফিরোজ নগরের গান্ধিনা এলাকার ফেরদৌস আলম ফিরোজ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪২ জন, ভূঞাপুর উপজেলার চরাঞ্চল গাবসারা ইউনিয়নের রায়ের বাসালিয়ার কুলসুম জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৮ জন, চরগাবসারা দাখিল মাদরাসার ৩০ জন, টেপিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ২৫ জন। এ রকম জেলার প্রতিটি বিদ্যালয়েই ২০ থেকে ৩০ জন বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে শিক্ষার্থীরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ বিয়ের পরে স্কুলে আসলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই আর স্কুলে আসছে না। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, করোনাকালীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও তাদের সন্তানদের নিয়ে অনেকটা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। অনেকেই আবার নিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন তাই পছন্দমতো ছেলে পেয়ে গোপনেই তাদের সন্তানকে বিয়ে দিয়েছেন। তবে বাল্যবিয়ের শিকার অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিচ্ছে এবং পড়াশুনা করছে বলে তারা জানিয়েছে।
গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়–য়া বাল্য বিয়ের শিকার এক স্কুল ছাত্রী জানায়, বাবা না থাকায় এবং পারিবারিক আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ৭ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার বিয়ে দেয়া হয়েছে। কর্মজীবী এক ছেলের সঙ্গে তাকে ছোট বয়সেই বিয়ে দেয়া হয় বলে জানায় ওই ছাত্রী।
এ বিষয়ে শাফিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দা তাহমিনা বেগম জানান, তার প্রতিষ্ঠানে শুধু এসএসসি পরিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকেই ১৪ জনের বিয়ে হয়ে গেছে। অন্য শ্রেণির সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। নলশোধা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মির্জা আখলিমা বেগম জানান, এ পর্যন্ত তিনি ২৯ ছাত্রীর বাল্যবিয়ের তথ্য পেয়েছেন।
এ বিষয়ে দেলদুয়ার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুজিবুল আহসান বলেন, উপজেলার ২৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টি ও ৯টি মাদরাসার মধ্যে একটির তথ্য পাওয়া গেছে। তাতে দেখা গেছে ১২টি বিদ্যালয়ের ২৫৩ ও একটি মাদরাসার ১৬ ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। তবে সব প্রতিষ্ঠানের সঠিক তথ্য পেলে এ সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়ে যাবে।
ভ‚ঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার কাজী ইয়াদ আলী বলেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদরাসা পড়–য়া শিক্ষার্থীরা বাল্যবিয়ের শিকার হচ্ছে। গ্রাম্য ইমাম এই বাল্য বিয়ে পড়ান। এতে মেয়ের বয়স কম হওয়ায় কাজীদের কাছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা যান না। ফলে বাল্যবিয়ের কোন কাবিননামাও হয় না। এতে পরবর্তীতে বিবাহ বিচ্ছেদের মত ঘটনা ঘটলে কোন প্রকার আইনি সহায়তাও পাবে না তারা। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লায়লা খানম জানান, বিয়ে বন্ধ হওয়ার ভয়ে অভিভাবকরা গোপনে বাল্যবিয়ের মতো অপরাধ করে তাদের সন্তানকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। সামাজিকভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন বলে মনে করেন এ শিক্ষা কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ জানান, বাল্য বিয়ে সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থী এবং বাল্য বিয়ে ঘটার আগেই তা রোধ করতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন