বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর আজব শক্তি-১

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ফারুক (রা.) একদিন মদীনার মসজিদে নাবুবীতে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের সাথে কোরআনুল কারীমের ফাজায়েল সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন। তাদের মধ্যে একজন বললেন সূরা বারাআতের শেষাংশ সর্বোত্তম।

আর একজন বললেন-কা-ফ হা-ইয়া-আইন-সোয়াদ ও ত্বা-হা সর্বোত্তম। এভাবে প্রত্যেকেই আপন আপন জানা অনুসারে বিভিন্ন উক্তি করেন। এই মজলিসে হযরত উমর বিন মায়দী কারব (রা.) ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন : হে আমীরুল মুমেনীন! আপনারা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর বিস্ময়কে ভুলে গেছেন দেখছি। আল্লাহর কসম! বিসমিল্লাহ-এর মধ্যে এক অত্যাশ্চার্য শক্তি নিহিত আছে।

একথা শুনে খলীফা হযরত উমর বিন খাত্তাব (রা.) সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন : হে আবু মাছুর? আপনি আমাদের কাছে বিস্মিল্লাহ-এর বিস্ময়কর বিষয়টি খুলে বলুন। সুতরাং হযরত উমর বিন মায়দী কারব (রা.) বর্ণনা আরম্ভ করলেন : হে আমীরুল মুমেনীন! জাহেলিয়াতের যুগে একবার আমরা ভীষণ দুর্ভিক্ষের শিকার হই। সে সময় একদিন আমি রুজীর সন্ধানে ঘোড়ায় চড়ে জঙ্গলে যাই। এভাবে আমি কিছু দূর গমন করার পর আমার সামনে একটা ঘোড়া, কিছু গবাদি পশু ও একটা তাঁবু নজরে পড়ল। আমি তাঁবুর কাছে পৌঁছলাম। তাঁবুতে একজন সুন্দরী মলিহাকে দেখতে পেলাম। তাঁবুর সামনে এক বৃদ্ধকে হেলান দিয়ে পড়ে থাকতে দেখলাম। আমি বৃদ্ধকে বললাম, তোমার কাছে যা কিছু আছে তা’ আমাকে দিয়ে দাও। তোমার মা তোমাকে ধ্বংস করুক।

বৃদ্ধটি বলল, তুমি যদি আতিথেয়তা চাও, তাহলে নেমে এস। আর যদি সাহায্য চাও তাহলে বল, আমরা তোমাকে সাহায্য করব। আমি বললাম-তোমার মাতা তোমাকে ধ্বংস করুক। তোমাদের জিনিসপত্র সব আমাকে দিয়ে দাও?

তখন সে এমন দুর্বল বৃদ্ধের মতো উঠল, সে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। তারপর বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলতে বলতে আমার দিকে এগিয়ে এলো এবং আমাকে ধরে এমন জোরে টান দিলো যে আমি নিচে পড়ে গেলাম এবং সে আমার বুকের ওপর চড়ে বসল। তখন সে বলল, তোকে ছেড়ে দেব নাকি মেরে ফেলব? আমি বললাম, আমাকে ছেড়ে দাও। সুতরাং সে আমার ওপর থেকে উঠে গেল।

আমি মনে মনে ভাবলাম, আমি মরু আরবের এক বিখ্যাত বীর। এই বৃদ্ধটি থেকে পালিয়ে যাওয়ার চাইতে আমার মরে যাওয়াই ভালো। সুতরাং আমার মন-মগজ পুনরায় আমাকে লড়াই করার জন্য উত্তেজিত করে তুলল। আমি বৃদ্ধটিকে লক্ষ্য করে বললাম, তোমার মাতা তোমাকে ধ্বংস করে দিক। তোমাদের মাল-পত্রগুলো আমাকে দিয়ে দাও। তারপর পুনরায় সে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলতে বলতে আমার দিকে তেড়ে আসল এবং আমাকে এমন জোরে টান দিলো যে আমি তার নিচে চলে গেলাম এবং সে আমার বুকের ওপর চড়ে বসল।

বলল, বল, তোমাকে হত্যা করব নাকি ছেড়ে দেব? আমি বললাম, ছেড়ে দাও। সুতরাং সে আমাকে ছেড়ে দিলো। পুনরায় পরাজয়ের গ্লানি আমাকে ধিক্কার দিতে লাগল, আমি ক্ষীপ্ত হয়ে বললাম, তোমার মাতা তোমাকে খতম করে দিক। তোমার যাবতীয় মাল সম্পদ আমাকে দিয়ে দাও? সে পুনরায় বিসমিল্লাহ পড়তে পড়তে আমার দিকে ধেয়ে আসল। আমি শিউরে উঠলাম। সে এমন জোরে আমাকে টান দিলো যে আমি তার নিচে গিয়ে পড়লাম। তখন আমি সবিনয়ে বললাম, এবারেও আমাকে ক্ষমা করে দাও।

সে বলল, তিন বারের মাথায় আমি তোমাকে ছেড়ে দেব না। তারপর বলল, ওহে বাঁদী? তীক্ষèধার তরবারিটি নিয়ে এস? বাঁদী তরবারিটি বুড়োর হাতে তুলে দিলো। বুড়ো আমার মাথার টিকি কেটে দিলো এবং ছেড়ে দিলো।

হে আমীরুল মুমেনীন! জাহেলিয়াতের যুগে আমাদের মাঝে এই রীতি ছিল যে, কেউ মাথার টিকি কেটে দিলে পুনরায় টিকি না উঠা পর্যন্ত আমরা বাড়ি ফিরতে লজ্জা বোধ করতাম। কাউকে মুখ দেখাতেও চাইতাম না। নীরবে নিভৃতে সময় কাটাতাম। বৃদ্ধ লোকটি আমাকে বলল, উমর! টিকি কাটা অবস্থায় কোথাও না গিয়ে বরং এক বছর যাবত তুমি আমার খেদমত করবে, আমার সাথে থাকবে। লোক লজ্জার হাত হতে রেহাই পাবে। অগত্যা আমি এই প্রস্তাব মেনে নিলাম এবং এক বছর যাবত বুড়োর সেবা করতে রাজি হয়ে গেলাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মুফতি আবদুল্লাহ আল ফুআদ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৫০ এএম says : 0
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পবিত্র কোরআনের একটি বরকতময় বাক্য। আল্লাহর দুটি গুণবাচক নাম সংবলিত এই বাক্যটি সুরা তাওবা ছাড়া কোরআনের সব সুরার শুরুতে আছে। তা ছাড়া এটি কোরআনের স্বতন্ত্র আয়াত। প্রতিটি ভালো কাজের শুরুতে এ বাক্যটি উচ্চারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটি এমন ফজিলতপূর্ণ আয়াত, যা পাঠ করার মাধ্যমে ওই কাজে বরকত ও পূর্ণতা আসে।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৫০ এএম says : 0
হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া হয়নি তা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৪/৩২৯)
Total Reply(0)
কাওসার আহমেদ ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৫১ এএম says : 0
কল্যাণ ও পূর্ণতার জন্য মুমিনের প্রতিটি ভালো কাজের প্রারম্ভিক আমল এই বিসমিল্লাহ হওয়া উচিত।
Total Reply(0)
হাসিবুল হাসান শান্ত ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৫১ এএম says : 0
মূলত এই আমলের মাধ্যমে মুমিন বান্দা তার কাজের ব্যাপারে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন। আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন।
Total Reply(0)
গিয়াসউদ্দীন একরাম ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৫২ এএম says : 0
বিসমিল্লাহ একটি শক্তিশালী আমল। এর মাধ্যমে শয়তানের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। অকল্যাণ ও অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আবু মুলাইহ থেকে বর্ণিত, তিনি একজন সাহাবি থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি একবার নবী (সা.)-এর সঙ্গে তাঁর আরোহীর পেছনে বসা ছিলাম। এমন সময় আরোহী পা ফসকে পড়ে গেল। তখন আমি বললাম, শয়তান ধ্বংস হোক। নবী (সা.) বলেন, ‘শয়তান ধ্বংস হোক এরূপ বোলো না, কেননা এতে সে নিজেকে খুব বড় মনে করে এবং বলে আমার নিজ শক্তি দ্বারা এ কাজ করেছি; বরং এরূপ মুহূর্তে বলবে ‘বিসমিল্লাহ’। এতে সে অতি ক্ষুদ্র হয়ে যায়, এমনকি মাছিসদৃশ হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৯৭৮২)
Total Reply(0)
ইউসুফ বিন ইকবাল ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৩:৫২ এএম says : 0
বরকতময় আয়াত ‘বিসমিল্লাহ’র মর্যাদা রক্ষার পাশাপাশি আল্লাহ আমাদের প্রত্যেক ভালো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার তাওফিক দান করুন।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন