শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর আজব শক্তি-২

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৭ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

হযরত উমর বিন মায়দী কারব আজ জুবাইদি (রা.) আরো বললেন : হে আমীরুল মু’মিনীন! এভাবে দিন যায়, মাস যায় আমি সে বৃদ্ধের সেবায় নিয়োজিত রইলাম। এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর সেই বৃদ্ধ আমাকে বলল, হে উমর! এক বছর তো পূর্ণ হয়ে গেল।

এখন আমি চাই, তুমি আমার সঙ্গে গভীর জঙ্গলে গমন কর। এই প্রস্তাবও আমি সানন্দে গ্রহণ করলাম। বৃদ্ধ লোকটি খুব আনন্দিত হলো এবং তার ঘোড়া, গবাদিপশু ও তাঁবু গোছ গাছ করে গুছিয়ে নিলো। আমিও তার সঙ্গে অজানার পথে বেরিয়ে পড়লাম। বেশ কয়েকদিন পথ চলার পর আমাদের কাফেলা একটি গভীর জঙ্গলের নিকটে পৌঁছল। তখন বৃদ্ধ লোকটি সেখানকার বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পাঠ করল। ফলে জঙ্গলের সমস্ত পাখ-পাখালী স্বেচ্ছায় নিজেদের বাসা থেকে বেরিয়ে অন্যত্র চলে গেল। তারপর আমার সঙ্গি বৃদ্ধলোকটি দ্বিতীয়বার বিসমিল্লাহ-এর আওয়াজ দিলো। হঠাৎ করে খেজুর গাছের মতো লম্বা, পশমের পোশাক পরিহিত বিকট দর্শন এক ব্যক্তি আমাদের সামনে হাজির হলো। যাকে দেখে আমার গা শিউরে উঠল এবং থর থর করে কাঁপতে লাগল।

সেই বুড়ো তখন আমাকে বলল, হে উমর! ভয় করো না। আমরা হেরে যাওয়ার মুখোমুখি হলেও ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’-এর বদৌলতে বিজয় লাভ করব। এবার মোকাবিলা শুরু হলো। সে এক বিরাট শক্তির সাথে লড়াই। মোকাবিলার এক পর্যায়ে আমরা হেরে গেলাম। আমি তখন বললাম, আমার মনিব লাত ওজ্জার কারণে হেরে গেছে, পরাজিত হয়েছে।

একথা শুনে আমার মনিব বুড়ো আমাকে এমন এক থাপ্পড় মারল যে, আমার মাথা উপড়ে যাবার যোগাড় হলো। আমি কাতর কণ্ঠে বললাম, আর কখনো এমন কথা বলব না। তারপর দ্বিতীয় বার মোকাবিলা শুরু হলো। ভীষণ লড়াই। এই লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ বিরাটকায় লোকটি পরাজিত হলো। তখন আমি সানন্দে বললাম, আমার মনিব এবার ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’-এর বদৌলতে জিতে গেছেন। আমার মনিব বুড়ো তখন বিশাল দেহ বিশিষ্ট পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বীকে তুলে ধরে চারাগাছ রোপণ করার মতো মাটিতে পুতে ফেলল। তারপর তার পেট চিরে তার ভেতর হতে কালো লণ্ঠনের চিমনির মতো কোনও জিনিস বের করল। তারপর আমাকে লক্ষ্য করে বলল, হে উমর! এই জিনিসটি হলো এই দুশমনের প্রতারণা ও কুফর।

আমি তখন আশ্চর্য হয়ে বললাম হে মনিব! আপনার সাথে পরাজিত এই হতভাগার দ্বন্দ্বটা কী নিয়ে, কী জন্য এই বিরোধ? তখন আমার বৃদ্ধ মনিব বলল, সেই যে মেয়েকে তুমি তাঁবুর মধ্যে দেখেছ, তার নাম হলো নারিয়াহ বিনতে মাছতুরদ। জ্বিনদের কাছে আমার এক ভাই বন্দি আছে। সে হযরত ঈসা মসীহ (আ.)-এর দ্বীনের অনুসারী। মেয়েটি সেই জ্বিন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।

আমি তাকে আমার ভাই-এর বদলা স্বরূপ বন্দি করে সযত্নে রেখেছি। তাই সেই জ্বিন সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে একটা করে জ্বিন প্রত্যেক বছর আমার সাথে লড়াই করতে আসে। ওই মেয়েটাকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চায়। মহান আল্লাহ পাক আমাকে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম-এর বরকতে তাদের বিরুদ্ধে বিজয় দান করেন। এবারও তাই হয়েছে।

তারপর আমরা বিস্তীর্ণ খোলা প্রান্তরে ও ধূসর মরু অঞ্চলে চলতে লাগলাম। কখনো বিশ্রাম কখনো পথ চলা। এ চলার যেন শেষ নেই। ইতি নেই। এক সময় আমার বুড়ো মনিব আমার হাতে ভর দিয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সে কি গভীর নিদ্রা! আমি তখন মনে মনে ভাবলাম, এই কট্টর বুড়ো মনিব হতে মুক্তি লাভের এটাই মোক্ষম সুযোগ। যেই ভাবনা সেই কাজ।

আমি তখন তার খাপ থেকে শানিত তলোয়ার টেনে বের করে তার উপর আঘাত করে, হাটুর নিচ থেকে কেটে ফেললাম। সে তখন আমাকে বলে উঠল, ওরে গাদ্দার! তুই এত ভয়ানক প্রতারণা করলি? এই বলে সে করুণ আর্তনাদ করতে লাগল। বুড়োর আর্তনাদের দিকে কর্ণপাত না করে আমি তাকে টুকরো টুকরো করে ফেললাম। তার পর তাঁবুর কাছে গেলাম। সেই মেয়েটি আমার সামনে আসল এবং বলল, হে উমর! বৃদ্ধ শায়খের কী হয়েছে? আমি বললাম, আগন্তক জ্বিন তাকে হত্যা করে ফেলেছে।

মেয়েটি বলল, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। হে বিশ্বাসঘাতক! তুমিই শায়খকে হত্যা করেছ। তারপর সে দ্রুত তাঁবুর ভিতরে প্রবেশ করে ডুকরে কাঁদতে লাগল এবং মর্মস্পর্শী কিছু কবিতা আওড়াতে লাগল। আমি তখন রক্তমাখা তরবারী হাতে তাকেও হত্যা করার জন্য তাঁবুর মধ্যে প্রবেশ করলাম। কিন্তু সেখানে কাউকেই দেখতে পেলাম না। মনে হলো, জমিন যেন তাকে গিলে ফেলেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
নাজনীন জাহান ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪২ এএম says : 0
শিক্ষণীয় ঘটনা। আরও এই ধরনের আর্টিকেল প্রকাশ করা হোক।
Total Reply(0)
মুক্তিকামী জনতা ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪৩ এএম says : 0
পরিপূর্ণ বিশ্বাসের সাথে আমল করলে অবাক করার মতো ফল পাওয়া যায় আলহামদুলিল্লাহ।
Total Reply(0)
কুদ্দুস তালুকদার ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪৪ এএম says : 0
হাদিসের ভাষ্য মতে, ‘বিসমিল্লাহ’ ছাড়া যে কাজ শুরু করা হয়, তা কল্যাণহীন, অসম্পূর্ণ ও বরকতশূন্য থেকে যায়। (ইবনে মাজাহ)। রসুল (সা.) প্রতিটি কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ দ্বারা শুরু করতেন।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪৪ এএম says : 0
ইসলামী বিধান মোতাবেক যেকোনো কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা বা ‘বিসমিল্লাহ’ দ্বারা কাজ শুরু করা সুন্নত।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪৫ এএম says : 0
ইসলামের মূলনীতি হলো— প্রত্যেক ভালো কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ দ্বারা শুরু করা উচিত। ‘বিসমিল্লাহ’ শুধু একটি সূচনাবাক্য নয়; মহান আল্লাহর বড়ত্ব, তার একত্ববাদের সাক্ষ্য ও নিয়ামতের স্বীকৃতিসহ প্রভুর কাছে সাহায্য চাওয়া এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে মুক্তির প্রার্থনা নিহিত রয়েছে এ বাক্যে।
Total Reply(0)
তৌহিদুজ জামান ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৪৬ এএম says : 0
হজরত সুলাইমান (আ.) সর্বপ্রথম রানী বিলকিসের কাছে লেখা চিঠিতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ ব্যবহার করেছেন। এরপর আর কোনো নবী-রসুলকে ‘বিসমিল্লাহ’ দান করা হয়নি। রসুল (সা.) প্রথম প্রথম ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা’ বাক্য ব্যবহার করতেন। এরপর কোরআন নাজিলের ধারাবাহিকতায় সুরা নামলের ৩০তম আয়াতে পুরা ‘বিসমিল্লাহ’ নাজিল হওয়ার পর থেকে তিনি এর ব্যবহার শুরু করেন। (তাফসিরে রূহুল মাআনি)।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন