শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

কার্গো ভিলেজে পণ্যজট : অব্যবস্থাপনা দেখে সালমান এফ রহমানের ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১১:৫০ এএম

হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজের ইডিএস (এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম) স্ক্যানিং মেশিন বিকল থাকায় কার্গো ভিলেজে পণ্যজট তৈরি হচ্ছে। এতে সময়মতো উড়োজাহাজে কার্গো লোডিং করা সম্ভব হচ্ছে না। ১০ থেকে ২০ শতাংশ জায়গা খালি রেখেই উড্ডয়ন করতে হচ্ছে এয়ারলাইনসগুলোকে। শুধু তাই নয়, অনেক সময় পণ্য বিমান থেকে নামিয়ে খোলা জায়গায় রাখার ফলে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়। এছাড়াও যথাস্থানে চিহ্নিত করে না রাখার কারণে পণ্য সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না।
এদিকে, বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে রপ্তানি পণ্যের স্ক্যানিং করার প্রক্রিয়া ও অব্যবস্থাপনা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। বুধবার ঝটিকা পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ ক্ষোভ জানান। এ সময় নষ্ট মেশিন সঠিক সময় যেন চালু করা যায় সে বিষয়ে আল্টিমেটাম দেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, ছিদ্দিকুর রহমান, সহ-সভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম প্রমুখ।
পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে সালমান এফ রহমান বলেন, এখানে আসার কারণ হলো- আমাদের ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে বিদেশি ক্রেতারা অভিযোগ করে আসছেন যে, ঢাকা বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজে রপ্তানি পণ্য স্ক্যানিং মেশিন নষ্ট হওয়ায় রপ্তানিতে সমস্যা হচ্ছে।
এর মাঝে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক হলে বিমান কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয় যে, কিছুদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তারপরও দেখলাম সমাধান হচ্ছে না। এছাড়া বিদেশ থেকে বারবার অভিযোগ আসছিল। ভাবলাম আমি নিজে গিয়ে দেখি কী হচ্ছে। আসলে ঘটনাটা কী? এসে দেখি, ৪টা স্ক্যানিং মেশিন আছে। সবগুলো নষ্ট। যার কারণে এই সমস্যাটা হচ্ছে। এর মধ্যে এখনো দুটো মেশিন চালুই হয়নি। বিমান কর্তৃপক্ষ জানালো, মেশিনগুলো গত মার্চ মাসে স্থাপন করা হয়েছে।
সালমান এফ রহমান বলেন, ৬ মাস হলো এখনো চালু করা হয়নি? বিমান কর্তৃপক্ষ বললো- করোনার কারণে চালু করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আমি মনে করি, তাদের এই ব্যাখ্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। করোনার মাঝেও আমাদের দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫.৬ শতাংশ। তার মানে হলো- এর মাঝেও আমরা কাজ করেছি। অন্যরা যদি পারে, তাহলে বিমান কর্তৃপক্ষ কেন পারলো না। অবশ্যই তাদের এটা গাফিলতি। ৬ মাস হলো একটা মেশিন বসে আছে, অথচ সেটা চালু করতে পারলাম না। এটাই দুঃখজনক।
এখন বিমান কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা আগামী এক মাসের মধ্যে সবগুলো মেশিন চালু করতে পারবে। এর মধ্যে দু’টি মেশিন এক সপ্তাহের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে।
সালমান এফ রহমান বলেন, এই সময় যেন কোনোভাবেই ভঙ্গ না হয়। এখন যা হয়েছে তা তো গেছে। এটা নিয়ে আমি খুবই হতাশ। কিন্তু আমাদের দেশের রপ্তানি খাত চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে- বিদেশে আমাদের দেশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আমাদের সুযোগ হাত ছাড়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রপ্তানিতে বাংলাদেশের সামনে ব্যাপক সুযোগ-সুবিধার হাতছানি দিচ্ছে। চীনে পোশাক কারখানা বন্ধ হচ্ছে। ভিয়েতনামেও করোনার কারণে কারখানা বন্ধ। ফলে ক্রেতারা আমাদের দেশে আসা শুরু করেছে। সেটার চাপ তৈরি হয়েছে। আবার সামনে বড় দিন আসছে। এতে রপ্তানি আদেশ বাড়ছে। তাই আমাদের বিমানবন্দর যদি কার্যকর না থাকে তাহলে আমাদের সুযোগগুলো হাতছাড়া হয়ে যাবে। অর্থাৎ আমাদের নিয়মিত ব্যবসা তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেই। অতিরিক্ত আরও যে নতুন ব্যবসা করার সুযোগ আছে সেটাও হাত ছাড়া হচ্ছে।

এর আগে কার্গো ভিলেজের স্ক্যানিং মেশিন পরিদর্শনে প্রবেশের সময় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসানকে উদ্দেশ্য করে সালমান এফ রহমান বলেন, আপনাদের দুবাই ঘুরে আসা উচিত। সেখানকার ব্যবস্থাপনা ও সেবার মান দেখা দরকার। এই পরিবেশ দেখেই আমার তো প্রবেশ করতে ইচ্ছা হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করবো। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। আমরা বলছি উন্নয়নশীল দেশ। অথচ আমাদের বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। এটা লজ্জার। চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আপনারা নিজেরাও করবেন না, অন্যদেরও করতে দেবেন না।
রপ্তানিকারকরা জানান, আকাশপথে কার্গো পাঠাতে বাংলাদেশে যে খরচ হয় তা প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। হ্যান্ডলিংসহ অন্যান্য খরচ বাবদ শাহ্জালাল বিমানবন্দরে যেখানে কেজিপ্রতি খরচ হয় ১৮-২০ সেন্ট, সেখানে কলকাতা বিমানবন্দরে খরচ ৮-১০ সেন্ট। আবার শাহ্জালাল বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজে জায়গা সংকট রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে স্ক্যানিং মেশিনের সমস্যা। এতে প্রায়ই কার্গো ভিলেজে পণ্যজট তৈরি হয়। কখনো কখনো একটি ট্রাকের পণ্য নামাতেই তিন-চারদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ফলে যারা দ্রুত ক্রেতার কাছে পণ্য পাঠাতে চান, তারা সড়কপথে কলকাতায় গিয়ে সেখান থেকে আকাশপথে পণ্য পাঠান। এতে অনেক ক্ষেত্রে খরচও কম হয়। এজন্য রপ্তানি কার্গো স্ক্যানিং করার প্রক্রিয়াকে গতিশীল করার জন্য বিমানবন্দরে পর্যাপ্তসংখ্যক ইডিএস মেশিন স্থাপন করা জরুরি।
কার্গো ভিলেজের তথ্যমতে, বর্তমানে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আকাশপথে ইউরোপে পণ্য রপ্তানিতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে ৪-৫ ডলার, যা গত বছরও ছিল কেজিপ্রতি ২ থেকে ২ ডলার ২০ সেন্ট। এর সঙ্গে যোগ হয় হ্যান্ডলিংসহ অন্যান্য খরচ। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতি কেজিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টার্মিনাল হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ ৮ সেন্ট এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সিকিউরিটি স্ক্যানিং চার্জ বাবদ ৬ সেন্ট। আর অন্যান্য খরচ মিলিয়ে যেটা গিয়ে দাঁড়ায় ১৮-২০ সেন্টের মতো।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, কার্গো ভিলেজে দু’টি ইডিএস (স্ক্যানার) মেশিনের পাশাপাশি চার সেট ইডিডি সিস্টেম অর্থাৎ প্রশিক্ষিত কুকুর এবং হাতে ব্যবহার করা যায় এমন স্ক্যানার দিয়ে কার্গো পণ্য পরীক্ষা করা হয়। তবে ইডিএস মেশিন কোনো কারণে বিকল হলে সে সময় কিছু সময়ের জন্য সমস্যা তৈরি হয়। তবে তিনি বলেন, বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ চলছে। পুরো কাজ শেষ হলে আশা করা যায় সমস্যাগুলোও থাকবে না।
ঢাকা কাস্টম হাউজের মাধ্যমে ছাড়পত্র নিয়ে আকাশপথে প্রধানত তৈরি পোশাক, বিভিন্ন গার্মেন্ট পণ্য ও সবজি যাচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে। এছাড়া ওষুধ, শুকনো খাবার, লেদার পণ্য, ফলমূল উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে পাঠানো হয়। অন্যদিকে চীন, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান থেকে দেশে আসে মোবাইল ফোন, গার্মেন্ট পণ্য, কাপড়, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ। এছাড়া টেলিযোগাযোগ যন্ত্রাংশ আসে ইউরোপ থেকে। ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামাল আসে ভারত ও চীন থেকে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসে ব্যক্তিগতভাবে আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্যও।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
আবদুর রহমান ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৩০ পিএম says : 0
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে অষংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
গোলাম মোস্তফা ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৩১ পিএম says : 0
আশা করি এবার কর্তাব্যক্তিদের ঘুম ভাঙ্গবে
Total Reply(0)
হাসান সোহাগ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৩৪ পিএম says : 0
হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সমস্যা রয়েছে
Total Reply(0)
পায়েল ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৩৪ পিএম says : 0
আমাদের দেশের রপ্তানি খাত চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
Total Reply(0)
নওরিন ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৩৫ পিএম says : 0
সালমান এফ রহমানের মত অন্যারাও যদি দেশের সমস্যাগুলো নিয়ে অগ্রণী ভুমিকা পালন করতো তাহলে আমরা অনেক দ্রুত এগিয়ে যেতাম
Total Reply(0)
তাজউদ্দীন আহমদ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৩৭ পিএম says : 0
কার্গো ভিলেজের ইডিএস (এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম) স্ক্যানিং মেশিন দ্রুত সচল করা হোক
Total Reply(0)
মমতাজ আহমেদ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৩৮ পিএম says : 0
কার্গো ভিলেজের ইডিএস (এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম) স্ক্যানিং মেশিন বিকল হতেই পারে, তাই সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি
Total Reply(0)
রায়হান ইসলাম ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৩৯ পিএম says : 0
আমরা সাধারণ মানুষ বললে তো কোন লাভ হয় না, এখন যেহেতু সালমান এফ রহমান সাহেব বলেছেন; এবার অন্তঃত কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে নজর দেয়া উচিত
Total Reply(0)
টুটুল ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৪০ পিএম says : 0
আমাদের বিমানবন্দর যদি কার্যকর না থাকে তাহলে আমাদের সুযোগগুলো হাতছাড়া হয়ে যাবে।
Total Reply(0)
চৌধুরী হারুন আর রশিদ ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৪২ পিএম says : 0
আমরা বলছি উন্নয়নশীল দেশ। অথচ আমাদের বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। এটা লজ্জার। - সালমান এফ রহমান স্যারের এই কথাগুলো দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের কথা।
Total Reply(1)
asad ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:০৩ পিএম says : 0
Salman F Rahman is perfect person for our country develop..
Mohammad Lokman ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৫:৪৭ পিএম says : 0
Good Careatake Check always you can find out alotof unmanagement of airpot.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন