বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অস্তিত্ব হারাবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়

অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনে বাড়বে মান

প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪০ পিএম, ১০ অক্টোবর, ২০১৬

ফারুক হোসাইন : গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞানের নতুন শাখা উন্মোচন এবং মানব জীবনের কল্যাণে তা প্রয়োগোপযোগী করাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাজ। এ লক্ষ্যেই কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে হচ্ছেও তাই। প্রতিনিয়তই জ্ঞান-বিজ্ঞানে নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়ে চমকে দিচ্ছে তারা। বাংলাদেশেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে পিছিয়ে রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। অনেক ক্ষেত্রে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীদের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে অনেকবারই। আবার কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষা উপকরণ ছাড়াই কেবল সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থীকে প্রতারিত ও অপমানিত হতে হয় কর্মক্ষেত্রে। তাই দীর্ঘদিন ধরেই উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়নের কাজ করছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অবশেষে গতকাল (সোমবার) মন্ত্রী সভায় সেই আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। এর ফলে দেশের ৩৮টি পাবলিক ও ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল। এ ছাড়া সব ধরনের মেডিক্যাল, প্রকৌশল, কৃষি, ব্যবসায়, আইনসহ বাংলাদেশের ভেতরে উচ্চশিক্ষা দানকারী সব ধরনের প্রতিষ্ঠান এর আওতায় আসবে। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় আবাসন সুবিধা ও গবেষণা কম হওয়ায় বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ছে। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল আশার প্রতিফলন ঘটবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদেরা।
এতোদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানসহ সার্বিক বিষয়ে দেখভালের দায়িত্ব ছিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ওপর। তবে শিক্ষার মান যাচাইয়ের জন্য কোনো ভূমিকা রাখতে না পারার অভিযোগ ছিল কমিশনের বিরুদ্ধে। ফলে অনেক মানহীন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে প্রতারিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। যদিও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান, পাঠ্যক্রম ও গবেষণা পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের তদারকির জন্য আছে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার ব্যতীত সব দেশে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল কাজ করছে। তাই এই কাউন্সিল গঠনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই প্রবীণ শিক্ষাবিদদের তাগিদ ছিল। অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করে আসছি। উচ্চশিক্ষার গুণগত মানের জন্য এই কাউন্সিলের প্রয়োজন ছিল অনেক বেশি। ইউজিসির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান বলেন, ইউজিসি নীতিমালা প্রণয়ন করলেও অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল হবে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। এ কাউন্সিল দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা উচ্চ শিক্ষাকে জাতীয় উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে চিহ্নিত করেছি তাই এর গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবিদদের সূত্রে জানা যায়, অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে একদিকে যেমন উচ্চশিক্ষার মানের গুণগত পরিবর্তন আসবে। অন্যদিকে এই আইন বাস্তবায়ন হলে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অস্তিত হারাবে। এই আইস পাস হলে উচ্চশিক্ষার সব নিয়ন্ত্রণ যাবে কাউন্সিলের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন, একাডেমিক কার্যক্রম, কারিকুলাম এবং কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা নিয়ন্ত্রণ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করবে প্রতিষ্ঠানটি। গুণগতমানও নিশ্চিত করা ছাড়াও নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বা বিভাগ খোলার জন্য কাউন্সিলের কাছে আবেদন করতে হবে। শুধু তাই নয়, স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি সনদ দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিংও প্রকাশ করবে প্রতিষ্ঠানটি। কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারবে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অ্যাক্রিডিটেশন সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ও ফি প্রদানের মাধ্যমে কাউন্সিল বরাবর আবেদন করবে। এর পর কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ সদস্যের একটি অ্যাসেসমেন্ট কমিটি সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যাবলি পর্যবেক্ষণ করে মতামতসহ প্রতিবেদন দেবে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় শর্তসাপেক্ষে কাউন্সিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কনফিডেন্স ও অ্যাক্রিডিটেশন সনদ দেবে। সনদের যোগ্যতা নির্ধারণ করবে গঠিত কাউন্সিল। শর্ত ভঙ্গ করলে সনদ বাতিল করা হবে।
কাউন্সিলকে সরকারের কাছে প্রত্যেক আর্থিক বছরের ৩০ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে। অ্যাক্রিডিটেশন সনদ সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছে, সনদের আবেদন প্রক্রিয়া, আবেদন মঞ্জুর ও নামঞ্জুর, অ্যাক্রিডিটেশন সনদের বৈধতা, সনদের উপর শর্তারোপ, অডিট ও অ্যাসেসমেন্ট এবং সনদ বাতিল আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। সনদপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের সনদ বাতিল করা হলে তারা রিভিউ আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাউন্সিল একটি কমিটি গঠন করে বিবেচনা করবে। কাউন্সিলের আইন বিষয়ে বলা হয়েছে, অ্যাক্রিডিটেশন সনদ ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তি বা তথ্য নির্দেশিকার প্রকাশ করতে পারবে না। কোনো সনদও দিতে পারবে না। কাউন্সিলের সদস্যরা কোনো প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে কোনো তথ্য গোপন করতে পারবে না। ভুল তথ্য দিলে সনদ বাতিল করা হবে। নিয়ম ভঙ্গের জন্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অনধিক ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা অনধিক পাঁচ বছরের কারাদ- অথবা উভয় দ-ের বিধান রাখা হয়েছে।
এর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ২০১০ সালে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় ইউজিসি। ইউজিসির সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনেও অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Sofiq ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১:১৩ পিএম says : 0
অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি
Total Reply(0)
Farjana ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১:১৪ পিএম says : 0
অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার মানের গুণগত পরিবর্তন আসবে।
Total Reply(0)
খোরশেদ আলম ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১:২০ পিএম says : 0
যেহেতু র্যাংকিং হবে এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পজেটিভ প্রতিযোগিতা বাড়বে, যা দেশের জন্য ভালো হবে।
Total Reply(0)
সাইফ ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১:২০ পিএম says : 0
এই উদ্যোগের জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাই।
Total Reply(0)
Firoz ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১:২৪ পিএম says : 0
উচ্চশিক্ষার গুণগত মানের জন্য এই কাউন্সিলের প্রয়োজন ছিল অনেক বেশি।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন