হাবিবুর রহমান : কারিগরি ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রাজধানীতে স্মার্টকার্ড বিতরণের হার কম হলেও তুলনামূলকভাবে কুড়িগ্রাম জেলায় এগিয়ে আছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজধানীতে গড়ে প্রতিদিন ৪৫ শতাংশের মতো নাগরিক কার্ড নিতে পারছেন, কুড়িগ্রামের গ্রামে এ হার ৭০ শতাংশের বেশি। স্মার্টকার্ড বিতরণে এক সপ্তাহের অভিজ্ঞতায় যে সমস্যাগুলো সামনে এসেছে, সেগুলোর সমাধান করতে নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগ ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বসবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রাজধানীর রমনা নির্বাচনী থানার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নাগরিকদের কার্ড বিতরণ চলছে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কেন্দ্রে। উত্তরা নির্বাচনী থানার ১ নম্বর ওয়ার্ডে বিতরণ চলছে উত্তরা হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে।
ঢাকা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: শাহ আলম ইনকিলাবকে বলেন, শুরুতে কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি আমরা। এখন তা কাটিয়ে উঠছি। দুই জায়গায় ৪৫ শতাংশের বেশি বিতরণ হচ্ছে।
তিনি বলেন, রাজধানীতে স্থানান্তরিত ভোটার বেশি বলে সমস্যাও হচ্ছে বেশি। অনেকেই ওই দু’টি এলাকায় ভোটার হয়ে পরে বাসা বদলে অন্য এলাকায় চলে গেছেন। এ কারণে অনুপস্থিতি বেশি। আর উৎসাহী অনেকে কার্ড নিতে কেন্দ্রে চলে আসছেন, যদিও তিনি ওই এলাকার ভোটার নন। তাছাড়া আঙুলের ছাপ না মেলা, স্থায়ী ঠিকানা সঠিকভাবে পূরণ না করা, নিবন্ধন ফরমের প্রয়োজনীয় তথ্য কম্পিউটারে না থাকা এবং ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন করায় অনেকে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েও কার্ড নিতে পারছেন না।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, কারিগরি ত্রুটি হলে বা কারো কার্ড প্রিন্ট হয়ে না এলে বা খুঁঁজে পেতে বিলম্ব হলে আঙুলের ছাপ ও আইরিশের প্রতিচ্ছবি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যোগাযোগ নম্বর রেখে দেয়া হচ্ছে। পরে তাদের কাছে কার্ড পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ঢাকার মধ্যে রমনা থানা নির্বাচনী এলাকায় নাগরিকদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে বেশি এবং জটিলতা কাটিয়ে সেখানে দ্রুত সেবা দেয়া হচ্ছে; উত্তরা এলাকাতেও ধীরে ধীরে কার্ড বিতরণের হার বাড়া শুরু করেছে।
রমনা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবা মমতা হেনা জানান, অফিস খোলার দিনের চেয়ে শুক্র ও শনিবার বেশি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রবিবার বিতরণ হয়েছে ৪০ ভাগ তার থেকে সোমবার ৪৫ ভাগ বিতরণ হয়েছে।
উত্তরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: শাহজালাল জানান, উত্তরায় গতকাল পর্যন্ত এক হাজার ১০ জনকে কার্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া দুই শতাধিক জনের বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেজিস্ট্রার খাতায় নাম, ঠিকানা লিখতে লিখতে তারা জানান, নির্ধারিত এলাকার ভোটার হয়েও স্মার্টকার্ড প্রিন্ট হয়ে না আসার কোনো ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে না। ঠিকানা পরিবর্তন করায় একজনের কার্ড প্রস্তুত হয়নি বলে জানানো হয়েছে। আঙুলের ছাপ না মেলায় দু’দিন এসেও কোনো সমাধান পাননি বলে জানিয়েছেন উত্তরা এলাকার বাসিন্দা রাজু আহমেদ, সুমি আহসান, আফিফা আকতার, শিউলি বেগম এবং মেহেদী আহসান।
মেহেদী আহসান জানান, গত শনিবার আমার কার্ড বিতরণের তারিখ ছিল, আমি জানতামই না। সোমবার এসে বেশ সহজেই কার্ড পেয়ে গেলাম। লোকজন কম থাকায় ঝামেলা হয়নি। তবে কার্ডে বর্তমান ঠিকানাটি দৃশ্যমান রাখা ঠিক হয়নি. স্থায়ী ঠিকানা থাকলে ভালো হতো বলেন শিউলি বেগম। কয়েকজন অপারেটরও স্বীকার করেন, অনেক কার্ড প্রিন্ট হয়ে না আসায় সার্ভারে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তাতে হতাশ হচ্ছেন নাগরিকরা।
বিতরণ কেন্দ্রে ইসির আইডিইএ প্রকল্পের টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ফয়সাল মো: শাহনেওয়াজ ইনকিলাবকে বলেন, প্রথম দিনে কিছু জটিলতার মুখোমুখি হয়েছিলাম আমরা। এখন কাটিয়ে উঠেছি। ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মিললে বা ঠিকানাসহ প্রয়োজনীয় তথ্য অসম্পূর্ণ থাকলে তাদের কার্ড প্রিন্ট করা হয়নি।
বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় চলছে স্মার্টকার্ড বিতরণ ৭০ শতাংশ
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়া এলাকায় প্রতিদিন ৭০ শতাংশের বেশি নাগরিক কার্ড নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে এ এলাকায় ভোটার হলেও দূর-দূরান্তে থাকায় কার্ড নিতে পারছেন না। আঙুলের ছাপ ও ঠিকানা নিয়ে এখানে ঝামেলা কম। সবাইকে বলেছি ২২ অক্টোবরের মধ্যে কার্ড নিয়ে যাওয়ার জন্য। অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে রাজধানী ও ঢাকার বাইরের বিতরণের অভিজ্ঞতা নিয়ে পরে বড় পরিসরে বিতরণে যাবে নির্বাচন কমিশন। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলায় আগামী ২২ অক্টোবর এক লাখ ২১ হাজার ভোটারের মধ্যে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে।
গত ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। পরদিন ৩ অক্টোবর থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উত্তরা এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) রমনা থানায় কার্ড বিতরণ করছে ইসি। ডিএনসিসিতে উত্তরা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে এবং ডিএসসিসিতে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে কার্ড বিতরণ চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন