শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গ্রাহকদের ২৫০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে

ই-কমার্স কিউকম সিইও রিপন রিমান্ডে

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম তার গ্রাহকদের ২৫০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত রোববার রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে কিউকমের সিইও রিপন মিয়াকে গ্রেফতার করে ডিবি মতিঝিল বিভাগ। পরে তার বিরুদ্ধে পল্টন থানায় এক ভুক্তভোগী গ্রাহক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
গতকাল সোমবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। পল্টন থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় রিপনের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমামের আদালত রিমান্ড আদেশ দেন।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, করোনাকালীন ই-কমার্স ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটে। নাগরিকরাও এতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তবে বেশ কিছু বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। কিউকমও করোনাকালীন তাদের ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু বর্তমানে কিউকমের অনেক ক্রেতাই পণ্য অর্ডার করে মালামাল না পেয়ে প্রতারিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, রিপন মিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে-কিউকম প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করে পণ্য অনলাইনে কেনাবেচা করে আসছিল। তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডিং করার জন্য তারা ব্যাপকভাবে মোটরসাইকেল বিক্রি করে। বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে কিউকম লোভনীয় দামে মোটরসাইকেল বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিয়ে আসছিল।
তিনি বলেন, বাজার যে মোটরসাইকেলের দাম ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, সেটি তারা ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিত। বিপুল সংখ্যক ক্রেতা অর্ডার করে মোটরসাইকেল না পেয়ে হতাশায় ভোগে। এক্ষেত্রে রিপন মিয়া মোটরসাইকেল ডেলিভারি না দিয়ে ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার চেক দিয়ে দিত গ্রাহকদের।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুন মাস থেকে এস্ক্রো সিস্টেম চালু করে। এর অধীনে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম চালু হয়। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ফোস্টার নামে একটি কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকের পেমেন্টটি ফোস্টারের কাছে থাকবে, পণ্য ডেলিভারি পর পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠাবে ফোস্টার।
পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কিউকমের পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে চেক প্রদানের বিষয়টি ফোস্টারের নজরে আসে। পরে ফোস্টার কিউকমের সব পেমেন্ট আটকে দেয়। ফোস্টার এখন পর্যন্ত কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা মোটরসাইকেলের পেমেন্ট আটকে দিয়েছে বলে রিপন মিয়া আমাদের কাছে দাবি করে। এছাড়া তার কাছে গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির ২৫০ কোটি টাকা আটকে আছে।
রিপন মিয়ার ব্যাংকে কত টাকা আছে এবং গ্রাহকদের এটা কীভাবে সে ফিরত দেবে? এ বিষয়ে রিপন মিয়া কিছু জানিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সে আমাদের কাছে বলে গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দিয়ে এ সমস্যা থেকে বের হতে পারবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের মূল্যছাড় দিয়ে এ কাজগুলো করছে। অর্থাৎ এগ্রেসিভ মার্কেটিং পলিসি নিয়ে তারা প্রতারণার কাজগুলো করছে। জনগণের স্বার্থে আমরা ই-কমার্স সাইটগুলোকে ধরছি। হাতেগোনা ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করছে, আমরা তাদের ধরছি। আমরা আশা করছি যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ই-কমার্সের সুফল পাবে নাগরিকরা। তবে মামলা হলেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি, এছাড়া নয়।
কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা ফোস্টারের কাছে আছে। সেক্ষেত্রে গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু এটা শুধুমাত্র মোটরসাইকেলের টাকা। মোটরসাইকেল কেনার জন্য যারা টাকা দিয়েছেন তাদের পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অন্য কোনো এমএলএম কোম্পানির সঙ্গে রিপন মিয়ার সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাকে গ্রেফতার করছি। এ বিষয়ে তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানাতে পারব।
কিউকমের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী ঠিক কি অভিযোগ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল অর্ডার করে পেমেন্ট দিয়েছেন। কিন্তু পেমেন্ট দেওয়ার পরেও মোটরসাইকেল ডেলিভারি পাননি। তাকে গ্রেফতারের পর প্রচুর সংখ্যক ভুক্তভোগী আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। সে এখন মালামাল না দিয়ে চেক দেয়া শুরু করেছে। এছাড়া চেক দিয়ে সে গ্রাহকদের যে কমিটমেন্ট দিয়েছিল তার বরখেলাপ করছে।
চেক যাদের দিয়েছে তারা কি টাকা হাতে পেয়েছেন কি না? জবাবে তিনি বলেন, কিছু লোক টাকা তুলতে পেরেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। যারা ই-কমার্স প্রতারণায় গ্রেফতার হয়েছে তারা ছাড়াও অন্য প্রতারকদের বিষয়ে ডিবি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে কিনা? জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, প্রতারণা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব। সম্প্রতি দেখা গেছে অনেকে অনলাইনে টাকা ঋণ দিয়ে সুদের ব্যবসা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব। ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে এ ধরনের প্রতারণা করে আসছে কিউকম। বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর কিউকম-এর কর্মকর্তারা তাদের তেজগাঁও অফিসটিও বন্ধ করে গা-ঢাকা দেয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Abu ৫ অক্টোবর, ২০২১, ২:৪৮ এএম says : 0
These are not e commerce business....these are all ''CHEATING'' ! Why not all these criminals and their businesses should be call as CHEATING and people should be aware!
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন