মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তিন মাসের মধ্যে রেমিটেন্স স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে - অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ

রাশিয়া থেকে ১ লাখ টন গম, দুটি হেলিকপ্টার আমদানি হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০২১, ৭:০০ পিএম

ফাইল ছবি


  • ৬৭ লাখ এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনা হবে সিঙ্গাপুর থেকে
  • ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাত ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন

আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, তিন মাসে এক বিলিয়ন ডলারের মতো রেমিট্যান্স কম এসেছে। আশা করছি আস্তে আস্তে ঠিক হবে, বাড়বে।

বুধবার (৬ অক্টোবর) বুধবার সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। এর আগে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অর্থনৈতিক সংক্রান্ত এবং সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, গতবছর প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এখনো যে গতিতে আসছে সে গতিতে এলে ২২-২৩ বিলিয়ন ডলার আসবে। ২২ বিলিয়ন ডলার কিন্তু কম না। রেমিট্যান্স কম আসার মূল কারণ হচ্ছে, বিদেশে যেসব প্রবাসী আছে, তারা দেশে এসে আর যেতে পারেননি। অথচ রেমিট্যান্স আসে তাদের কাছ থেকেই। আগে যত পরিমাণ প্রবাসীরা বিদেশে ছিলেন এখন সেই পরিমাণ নেই। করোনা পরিস্থিতি ভাল হওয়ার কারণে আবার যাওয়া আসা শুরু হয়েছে। এ কারণে মনে হয় দুই-তিন মাসে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ -সিপিডি বলেছিল অন্য কোনো টাকা রেমিট্যান্সের নাম করে দেশে ঢুকছে কিনা, সেটা চেক করার জন্য- এমন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, এটি একটি অবাস্তব প্রস্তাব। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন কথাবার্তা বলা হচ্ছে। কেউ বলে যে, দেশের টাকা বিদেশে পাঠিয়ে দিয়ে সেখান থেকে আবার আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের বহু খাত আছে যেখানে প্রণোদনা দেয়া হয়ে থাকে।। শুধু রেমিট্যান্সকে টার্গেট করবে কেন? সেটা ঠিক না। আমাদের আরেকটু সময় দিতে হবে, আমরা দেখব। তিনি বলেন, আগে যে পরিমাণ জনবল বিদেশে ছিল সেই পরিমাণ বিদেশে আছে কিনা সেটা আগে দেখা প্রয়োজন। সেটা হওয়ার পরেও কম এলে বুঝতে হবে অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে।

উল্লেখ্য, তিন মাসের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলারের মতো রেমিট্যান্স কম এসেছে। গত মাসে ১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। বিগত ১৬ মাসের মধ্যে এটাই সর্বনিম্ন প্রবাসী আয়। হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক মাধ্যমে অর্থ পাঠানোকে এর জন্য দায়ী মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রবাসী আয় কম এসেছে ১৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর গত আগস্ট মাসের তুলনায় কম এসেছে ৫ শতাংশ। এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে বাংলাদেশে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। তখন থেকে গত আগস্ট পর্যন্ত ১ দশমিক ৮৩ থেকে ১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ছিল এই সংখ্যা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, স¤প্রতি সারা বিশ্বে চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল হয়েছে। প্রবাসী আয় কম আসার পেছনে এটাও কারণ হতে পারে।

এদিকে অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে দেশের খাদ্য মজুদ বাড়াতে রাশিয়া থেকে ১ লাখ টন গম আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের জন্য রাশিয়া থেকে জি-টু-জি পদ্ধতিতে দুটি হেলিকপ্টার ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া সিঙ্গাপুর থেকে ৬৭ লাখ ২০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অর্থনৈতিক সংক্রান্ত এবং সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানান, অর্থনৈতিক সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে দুটি ও ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য সাতটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুইটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের দুইটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাবনা ছিল। কমিটির অনুমোদিত সাতটি প্রস্তাবে অর্থের পরিমাণ ৩ হাজার ১৮০ কোটি ১৮ লাখ ১১ হাজার ৭০ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি হতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৮৭৪ কোটি ৪০ লাখ ৭৮ হাজার ৯১২ টাকা এবং বিশ্বব্যাংক ও দেশীয় ব্যাংক হতে ঋণ ৩০৫ কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার ১৫৮ টাকা।

বৈঠক শেষে অনলাইনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন খাদ্য অধিদফতর রাশিয়ান ফেডারেশন হতে জি টু জি ভিত্তিতে ১ লাখ টন গম ৩৫৭ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকায় আমাদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি টন গমের দাম ৪১৯ ডলার। তিনি জানান, সিঙ্গাপুর থেকে ৬৭ লাখ ২০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি করা হবে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলা সিঙ্গাপুরের এম/এস ভাইটল এশিয়া পিটিই লিমিটেড’র নিকট থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি সর্বমোট ১ হাজার ২০৫ কোটি ৭২ লাখ ৮১ হাজার ৭২ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সিঙ্গাপুরের কোম্পানিটি প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রতি এমএমবিটিইউ ৩৫ দশমিক ৮৯ ডলার। এছাড়া অপর একটি প্রস্তাবে সিঙ্গাপুরের গানভোর সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড’র নিকট থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি সর্বমোট ১ হাজার ২৪১ কোটি ২২ লাখ ৮২ হাজার ৪২৮ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কোম্পানীটির প্রস্তাবনা অনুযায়ী প্রতি এমএমবিটিইউ ৩৬ দশমিক ৯৫ ডলার।

পুলিশের জন্য দুটি হেলিকপ্টার কেনা হচ্ছে

পুলিশের জন্য রাশিয়া থেকে জি-টু-জি পদ্ধতিতে দুটি হেলিকপ্টার ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকারি অর্থনৈতিক সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, জননিরাপত্তা বিভাগের অধীন পুলিশ অধিদফতর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য জি-টু-জি পদ্ধতিতে রাশিয়া থেকে দুটি হেলিকপ্টার রাশিয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান জেএসসি রাশিয়ান হেলিকপ্টার এর নিকট থেকে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন