শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ই-কমার্সের প্রতারণা রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনের হাত ধরে ই-ব্যাংকিং, ই-কমার্স একটি ক্রমপ্রসারমান খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখার পথ ধরে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক গতিতেই এগোচ্ছিল। আচমক করোনা মহামারিতে লকডাউনে অচল হয়ে পড়া অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অনলাইন পরিষেবা, পণ্য ক্রয়-বিক্রয় তথা ই-কর্মাস বিকল্পহীন মাধ্যম হয়ে ওঠে। যেখানে ২০২৪ সাল নাগাদ তথ্য প্রযুক্তি, ই-গভর্নেন্স এবং ডিজিটাল পরিষেবার যে লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার কথা, সেখানে ২০২০ সালেই সে লক্ষ্য অর্জিত হয়। দেশের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে দীর্ঘদিন ধরে নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করলেও ই-কমার্স খাতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সম্ভাবনা আমাদের সামনে নতুন আশার সঞ্চার করে। করেনাকালে ই-কমার্সের প্রবৃদ্ধিতে যে উল্লম্ফন দেখা গেছে, তা আগের প্রবৃদ্ধির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। করোনার আগে বাংলাদেশে ই-কমার্সের প্রবৃদ্ধি ছিল ২০-২৫ শতাংশ, সেখানে ২০২০ সালে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩০০ শতাংশে উন্নীত হয়। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, ২০২০ সালে দেশে ই-কমার্সের মাধ্যমে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বা ১৬ হাজার কোটি টাকার পণ্য সামগ্রী কেনা-বেচা হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষিপণ্য ও কুটির শিল্প উৎপাদক থেকে শুরু করে শহুরে মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণীরাও এই সৃজনশীলতা ও পণ্য বিনিময়ের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছে। আপাত দৃষ্টিতে করোনাকাল পেরিয়ে এসে সবকিছু খুলে যাওয়ার পরও এর সম্ভাবনা কমে যায়নি। তবে ই-কমার্সের নামে একশ্রেণির প্রতারক এই খাতের সম্ভাবনাকে এখন চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

গত কয়েক মাস ধরে গণমাধ্যমে একের পর এক ই-কমার্সের প্রতারণার খবর বেরিয়ে আসছে। ই-ভ্যালি, আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জ, আনন্দের বাজারসহ ২০-২৫টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের প্রতারণার শিকার হয়ে হাজার হাজার সাধারণ ভোক্তা ও উদ্যোক্তা কোটি কোটি টাকা খুইয়েছে। দেশে বর্তমানে ছোট বড় মিলিয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। ফেইসবুক ভিত্তিক অনলাইন পণ্য ও পরিষেবা বিপণন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় অর্ধলক্ষ বলে জানা যায়। দেশে মোবাইলফোন, স্মার্টফোন ও ডিজিটাইল ডিভাইস ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটির বেশি। সাধারণ গ্রাহককে চটকদার বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে ই-কমার্সের প্রতারণার জালে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে। অস্বাভাবিক কমমূল্যে পণ্য দেয়ার লোভনীয় অফারে বিভ্রান্ত হয়ে একশ্রেণির মানুষ নিজেদের পুঁজি হারাচ্ছে এসব প্রতারক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে। অস্বাভাবিক কমমূল্যে মোটরসাইকেলসহ বেশকিছু পণ্যের কথিত সাইক্লোন অফারে প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হয়েছিল গত বছর করোনাকালেই। এরপরও তাদের তৎপরতা থামেনি। তাদের পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একই কায়দায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করে দেয়ার ঘটনা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে। তাদের লোভনীয় অফারে সাড়া দিয়ে মোটরসাইকেল কেনার টাকা পাঠিয়ে শত শত গ্রাহক পণ্য বা টাকা কোনোটাই ফেরত পাননি। এক্ষেত্রে প্রতারক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অস্বাভাবিক অফারে লোভের ফাঁদে পা দেয়ার ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী গ্রাহকদেরও দায় রয়েছে।

গতকাল একটি সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, আনন্দের বাজার নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের স্বল্পমূল্যে মোটরসাইকেল ও মোবাইলফোন বিক্রির অফারে প্রলুব্ধ হয়ে শত শত গ্রাহক কোটি কোটি টাকা অগ্রিম পরিশোধ করার পর প্রতিষ্ঠানটি উধাও হয়ে গেছে। গুলশানে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পাচ্ছেন বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা, কোনো কর্মকর্তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে হাজার হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ও ফেইসবুক ভিত্তিক ক্ষুদ্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাথে লাখ লাখ মানুষের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। অনলাইনে পণ্যের অর্ডার ও ডেলিভারি সিস্টেমে অনেক প্রচলিত-অপ্রচলিত ও নিত্যনতুন পণ্যের বিপণন বেড়ে চলেছে, তখন এসব প্রতারক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কারণে ই-কমার্স মাধ্যমের প্রতি সাধারণ গ্রাহকদের আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে এসব প্রতারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর অবস্থান দেখা গেলেও লোপাট হওয়া অর্থ ফেরত না পাওয়ায় প্রতারিত হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখালেও এর সেবার মান ও নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বিধিব্যবস্থা না থাকায় প্রতারণা থামছে না। ইন্টারনেটের গতি এবং সেবার মান নিয়ে দেশের সব ইন্টারনেট গ্রাহকই সংশ্লিষ্ট অপারেটর কোম্পানির দ্বারা প্রতারিত হয়ে আসছে। চুক্তি অনুসারে ইন্টারনেটের গতি ও সেবার মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি ই-কমার্স ও অনলাইন পরিষেবায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ই-কমার্সের নামে প্রতারকদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন ও নজরদারির কার্যকর উদ্যোগও নিতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন