জয়পুরহাট জেলা সংবাদদাতা
জয়পুরহাট সদর উপজেলার দুইটি ইউনিয়নে ভুয়া নিকাহ রেজিস্টার বহিতে বাল্যবিয়ে, ভুয়া নিকাহ রেজিস্ট্রেশনসহ কথিত দুজন কাজীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে রাতের আঁধারে এরা অনৈতিকভাবে বেআইনী ও ভুয়া নিকাহ রেজিস্ট্র্রি ও বাল্যবিবাহ দেয়ায় সচেতন মহল অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল ইউনিয়নে নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) মো. একরামুল হক। তিনি অধিক্ষেত্র তথা নিজ এলাকার বাহিরে গিয়ে জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার খোশবোদন এলাকায় এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ হিসাবে কর্মরত আছেন। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার পিতা ও ভাইদের দ্বারা বিবাহ রেজিস্ট্রারের কাজ করে আসছেন। এ কারণে ২০০৯ সালে একরামুল হকের বিরুদ্ধে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন জনৈক বেলাল হোসেন। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে ১ জানুয়ারি ২০১০ সালে সিনিয়র সহকারী সচিব এবিএম জহিরুল গনি চৌধুরী বিচার শাখা ৭ হইতে জয়পুরহাট সদরের সাব রেস্ট্রিারের কাছে বিষয়টির তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। জয়পুরহাট সাব রেজিস্ট্রার তদন্ত করে বিষয়টির সত্যতা পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠান। কিন্তু রহস্যজনক কারণে প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যকরী পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। এর ফলে একরামুল হক আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং বহাল তবিয়তে আইন ভেঙে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাজ নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিকার না পেয়ে পুনরায় জয়পুরহাট সদরের ছিট হেলকুন্ডা গ্রামের মাহমুদ হোসাইন আইন বিচার সংসদ মন্ত্রণালয়ে একই অভিযোগপত্র প্রদান করেছেন। অপরদিকে সদর উপজেলার মোহাম্মাদাবাদ ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্র্রার সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ও রেজিস্ট্র্রি বহি ভাড়া দেয়াসহ একই অভিযোগ উঠেছে। তার রেজিস্ট্র্রি বহি ভাড়া নিয়ে একই ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা কথিত হোসেন কাজী ও জয়পুরহাট আরাম নগর এলাকার মৌলভী আবু তাহের, দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে বাল্যবিবাহ ও দেনমোহরের গরমিলসহ নানা অপকর্ম। উল্লেখ্য গত কয়েক মাসে রাতের আঁধারে শুধু আরাম নগর এলাকায় ৮-১০টি বাল্যবিবাহ পড়ানো হয়েছে ও ভুয়া নিকাহ রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। গত ২ সপ্তাহ আগে একটি ভুয়া নিকাহ রেজিস্ট্র্রি করতে গিয়ে কথিত ওই হোসেন কাজীর রেজিস্ট্রি বহি জব্দ করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পরে নির্বাহী অফিসার তার রেজিস্ট্র্রি বহি মালিকানা জানতে চেয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ করেন। রির্পোট লেখা পর্যন্ত নোটিশের কোন সদুত্তর জানা যায়নি। এ ব্যাপারে কথিত হোসেন কাজীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমি সাইফুল কাজীর নিকট হতে নিকাহ রেজিস্ট্র্রির বই নিয়ে নিকাহ রেজেস্ট্র্রি করে আসছি এবং যে খাতাটি জব্দ করা হয়েছে সেটি ওই কাজীর। সাইফুল কাজী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার নিকট থেকে নিকাহ রেজিস্ট্র্রির কাজ করে আমাকেই ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। কাজী একরামুল হকের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এমন অনিয়ম করে দেশে হাজার হাজার কাজি কাজ করে যাচ্ছে। আমি করলে দোষ কোথায়? এ ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার জানান, তিনি নতুন এসেছেন। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। একরামুল হকের মতো বহু নিকাহ রেজিস্ট্রার একই কায়দায় জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে বাল্যবিবাহসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন হচ্ছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন কথিত হোসেন কাজীর রেজিস্ট্র্র্র্রি বহির মালিকানা জানতে চেয়ে শোকজ করা হয়েছে। জবাব পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন