মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

১০ সূচকের ৬টিই খারাপ

ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে এমসিসিআই ও পলিসি এক্সচেঞ্জের জরিপ এ তথ্য দেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নতি করতে কাজ করবে : সালমান এফ রহমান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

ব্যাংক ঋণ, জমির প্রাপ্যতা নিয়ে সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যবসা করতে নেমে অনেককেই বিপাকে পড়তে হয়। নানামুখী সমস্যার কারণে তাই দেশে ব্যবসার পরিবেশ সূচকে ১০টির মধ্যে ৬টি সূচকেই বাংলাদেশের অবস্থা নড়বড়ে। তবে ৪টি সূচকে উন্নতির দিকে। ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬১। বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ যে ভালো নয়, বিশ্বব্যাংকের পর এবার দেশীয় দুটি প্রতিষ্ঠানের জরিপেও একই চিত্র উঠে এল। জরিপের তথ্য বলছে, ব্যবসায়ীদের জন্য দেশে ব্যাংকঋণ পাওয়া বেশ জটিল। ব্যবসা শুরুর আগে একজন উদ্যোক্তার জন্য আইনকানুনের তথ্য পাওয়া কঠিন। আন্তসীমান্ত বাণিজ্যসুবিধা নড়বড়ে। প্রযুক্তির ব্যবহারও কাঙ্খিত নয়।

১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে ‘বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স’ (বিবিএক্স) নামের জরিপটি পরিচালনা করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং পলিসি চেঞ্জ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে ১০টির মধ্যে ৬টি সূচকের অবস্থান খারাপ। বাকি ৪টি সূচকে উন্নতির দিকে। ১০টি সূচকের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে অবকাঠামো সুবিধা। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আন্তসীমান্ত বাণিজ্যসুবিধা সূচকে। মোট ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬১। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে আটটি বিভাগীয় শহরে ৩৫১ জন ব্যবসায়ীর ওপর জরিপটি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ভার্চ্যুয়াল জরিপে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে এবারই প্রথমবারের মতো জরিপ করেছে বেসরকারি দুটি সংস্থা।

এর আগে বহুজাতিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক ২০০৫ থেকে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ বা সহজে ব্যবসা সূচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিল। বিশ্বের ১৯০টি দেশ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি তৈরিতে অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় এ বছর থেকে আর প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হবে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদনে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৮তম। সংস্থাটির ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৪৫।

এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাদ কবিরের সঞ্চালনায় ভার্চ্যুয়াল সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত এত নাউকি, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন, বিল্ডের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম খান, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রূপালী চৌধুরী, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমানসহ অন্যরা। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পলিসি চেঞ্জ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর রিয়াজ।

মাসরুর রিয়াজ তাঁর প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, অবকাঠামো সুবিধা, ব্যবসা শুরু, কর পরিশোধ, শ্রমনীতি, আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি, জমির প্রাপ্যতা, বিরোধ নিষ্পত্তি, প্রযুক্তির ব্যবহার, ঋণের প্রাপ্যতা এবং আন্তসীমান্ত বাণিজ্যসুবিধাÑএ ১০টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে জরিপটি করা হয়েছে।

কোনো সূচকের স্কোর যদি ০ থেকে ২০-এর মধ্যে থাকে, এর মানে হলো দেশে ব্যবসার পরিবেশ খুবই কঠিন। ১০টির মধ্যে অবশ্য এ স্কোরে কোনো সূচক পড়েনি। কোনো সূচকের স্কোর যদি ২১ থেকে ৪০-এর মধ্যে থাকে, এর মানে হলো সেখানে ব্যবসায় প্রবল বাধা আছে। এ স্কোরেও কোনো সূচক নেই। কোনো সূচকের স্কোর যদি ৪১ থেকে ৬০-এর মধ্যে থাকে, তার মানে হলো দেশে ব্যবসার পরিবেশ বেশ জটিল। এ স্কোরের মধ্যে আছে ছয়টি সূচক। এর মধ্যে ৪৯ দশমিক ৪৩ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে তলানিতে আছে আন্তসীমান্ত বাণিজ্যসুবিধা। ঋণের প্রাপ্যতা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৫০ দশমিক ৭৮। এ ছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহার সূচকে স্কোর ৫৭ দশমিক ৭০, বিরোধ নিষ্পত্তি সূচকে স্কোর ৫৭ দশমিক ৪৮, জমির প্রাপ্যতা সূচকে ৫৮ দশমিক ৯০ স্কোর এবং আইনকানুনের তথ্যের প্রাপ্যতা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৫৯ দশমিক ৮৩।

কোনো সূচকের স্কোর যদি ৬১ থেকে ৮০-এর মধ্যে থাকে, সেটিকে বলা হয় ব্যবসার পরিবেশ উন্নতির দিকে। এ স্কোরের মধ্যে বাকি চারটি সূচক আছে। সেগুলো অবকাঠামো সুবিধা স্কোর ৭২ দশমিক শূন্য ২, ব্যবসা শুরুতে ৬৮ দশমিক ৯১, কর পরিশোধে ৬৮ দশমিক ৭২ এবং শ্রমনীতিতে ৬৬ দশমিক ৩৫। ৮১ থেকে ১০০ স্কোর থাকলে তখন বলা হয় পরিবেশ ব্যবসাবান্ধব। এ স্কোরে কোনো সূচক নেই।

জরিপে দেখা গেছে, ১০টি সূচকে ব্যবসায়ীদের আলাদা আলাদা গল্প আছে। যেমন পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জমির প্রাপ্যতা। জমির অপ্রতুলতার কারণে অনেক সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা ব্যবসা শুরু করতে পারছেন না। আবার ১০টি সূচকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অন্য বিভাগের তুুলনায় খারাপ অবস্থানে। ব্যবসা শুরু করা, জমি পাওয়াসহ অন্য সব সূচকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বেশ পিছিয়ে।

জরিপের ওপর আলোচনা
প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ব্যবসার পরিবেশ নিয়ে একমাত্র বিশ্বব্যাংকই জরিপ করত। যদিও ওই জরিপের পদ্ধতি নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলেছি। শেষ পর্যন্ত অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিবেদনটি প্রকাশ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় দেশীয় দুটি সংস্থার জরিপের পদ্ধতি বেশ ভালো। কারণ, বিশ্বব্যাংকের জরিপে ঢাকা ও চট্টগ্রামÑএ দুটি বিভাগ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হতো। দেশীয় দুটি সংস্থা আটটি বিভাগের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এ জরিপের তথ্য দিয়ে দেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নতি করতে কাজে দেবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জাপানের রাষ্ট্রদ্রত বলেন, করোনার মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয়। দ্রুত অর্থনীতির একটি বাংলাদেশ। তবে ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হতে হলে ব্যবসার পরিবেশ আরও উন্নত করতে হবে। এখানে শুল্কায়ন কার্যক্রমে সমস্যা আছে। আন্তবাণিজ্য সুবিধাতে ঘাটতি আছে। এসব জায়গায় উন্নতি করতে হবে।
সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, দেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি। তবে সেটি করতে হবে অগ্রাধিকারভিত্তিতে। একই সঙ্গে পরিকল্পিত উপায়ে। পোশাক খাতে জমির প্রাপ্যতা বেশ কঠিন। আবুল কাশেম খান বলেন, ব্যবসার পরিবেশ উন্নতি করতে হলে ব্যবসায়ীদের পুরোপুরি ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেবা দিতে হবে। ঋণ পেতে ব্যবসায়ীদের যে হয়রানি হতে হয়, সেটি কমিয়ে আনতে হবে।

জসিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসার পরিবেশ জানতে এত দিন বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় থাকতে হতো। দেশে প্রথমবারের মতো একটি প্রক্রিয়া শুরু হলো। এটি ইতিবাচক। এ জরিপের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Msh Sajid ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৩ এএম says : 0
দেশের উন্নতির জন্য সব কিছুই মেনে নিবে আপামর জনসাধারণ
Total Reply(0)
Taifuddin Shanto ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৩ এএম says : 0
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বাড়ানোর উদ্দ্যোগকে সাধুবাদ জানাই
Total Reply(0)
Taufiq Sumon ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৩ এএম says : 0
Right honourable mp and adviser.
Total Reply(0)
Dewan Aminul Islam ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৪ এএম says : 0
Requesting you to work for the tourism sector of Bangladesh. Huge possibility is there.
Total Reply(0)
Amdad Hasan ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৪ এএম says : 0
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আপনার অনেক পরিশ্রম দিতে হচ্ছে, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Motiur Rahman ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৪ এএম says : 0
আপনার সুসাস্হ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
Total Reply(0)
Putul Sheikh ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৪ এএম says : 0
Alhamdulilah.. congratulations sir god bless you
Total Reply(0)
Shawkat Shikder ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:০৫ এএম says : 0
Have a nice dream. Good hope . Thanks
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন