বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

উন্নয়নের নামে এই ভোগান্তি কবে শেষ হবে?

| প্রকাশের সময় : ১০ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

মানুষের যাতায়ত ব্যবস্থা দ্রুত ও আধুনিক করার বিকল্প নেই। এজন্য সারাবিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ একটি স্বাভাবিক ব্যাপার ও বাস্তবতা। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পাতাল সড়ক, রিং রোডসহ যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করার নানা প্রকল্প নেয়া হয়। আমাদের দেশেও বিগত এক দশক ধরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নানা উন্নয়নমূলক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। রাজধানীতে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে বছরের পর বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেশিরভাগ দখল করে এসব উন্নয়নমূলক কাজ চলমান থাকায় মানুষের যতায়াতের ক্ষেত্রটি অত্যন্ত সংকুচিত হয়ে গেছে। কর্মজীবী মানুষসহ সাধারণ মানুষ অশেষ ভোগান্তিতে রয়েছে। উন্নয়ন কাজও শেষ হচ্ছে না, তাদের ভোগান্তিও কমছে না। বর্তমানে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল এবং উত্তরা থেকে গাজীপুর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে। প্রধান সড়ক দখল করে এই দুই প্রকল্পের কাজ গত প্রায় এক দশক ধরে চলছে। এতে পুরো রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থবির হয়ে রয়েছে। অসহনীয় যানজটের কারণে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। কবে এ থেকে তারা মুক্তি পাবে, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই।

আমাদের দেশে যেকোনো বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হলে আর শেষ হতে চায় না। শুরুতে এর মেয়াদকাল ও বাজেট একরকম করা হলেও, শেষ পর্যন্ত তাতে আর কুলায় না। যতই দিন যেতে থাকে, ততই এর সময় ও ব্যয় বাড়তে থাকে। কোনো প্রকল্প সময়মতো শেষ হওয়া একটি বিরল ঘটনা। রাজধানীর যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করার ক্ষেত্রে যেসব প্রকল্প নেয়া হয়েছে, সেগুলো বিগত বছরের পর বছর ধরে কি অসীম ভোগান্তি সৃষ্টি করে চলেছে, তা নগরবাসী জানে। সরকারের লোকদের মনোভাব এমন, উন্নয়ন পেতে হলে ভোগান্তি সইতে হবে। জনগণ উন্নয়ন চায়। তবে এই উন্নয়ন করতে গিয়ে কত সময় পর্যন্ত তাদের ভোগান্তি পোহাতে হবে তার হিসাবটি তো তাদের দিতে হবে। অনির্দিষ্ট কাল ধরে যদি উন্নয়ন কাজ চলতে থাকে, তাহলে এই উন্নয়নের কি কোনো অর্থ আছে? বলা বাহুল্য, রাজধানীর উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল একটি জেনারেশন বলতে গেলে না পেয়েই শেষ হয়ে গেছে। এভাবে জেনারেশনের পর জেনারেশন চলে যাবে, উন্নয়ন প্রকল্পের সুফল পাবে না, উল্টো শারীরিক-মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও অশেষ দুর্ভোগের শিকার হবে, এটা হতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বরাবরই বলে আসছেন, আমাদের দেশে যেকোনো উন্নয়নমূলক প্রকল্পের পরিকল্পনার শুরুতেই গলদ থাকে। শুরুতে যে পরিকল্পনা করা হয়, পরবর্তীতে তা সংশোধন করতে হয়। এর অর্থ, প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা রয়েছে। এর সাথে সময়ক্ষেপণ ও দুর্নীতির বিষয়টিও জড়িয়ে আছে। উন্নত বিশ্বে যেকোনো প্রকল্প শুরুর আগে মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি আগে বিবেচনা করা হয়। এতে মানুষের চলাচলে কি অসুবিধা ও সমস্যা হতে পারে তা বিবেচনা এবং যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা করে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়। নির্ধারিত সময়েও তা শেষ করা হয়। আমাদের এখানে এর কোনো বালাই নেই। প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নিয়েই কাজ শুরু করে দেয়া হয়। এতে মানুষের চলাফেরায় কি অসুবিধা হবে, তা বিবেচনায় নেয়া হয় না। এই যে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা বিআরটিএ’র কারণে নগরবাসী অশেষ ভোগান্তিতে পড়েছে, সেটা আমলেই নেয়া হচ্ছে না। এসব উন্নয়নমূলক প্রকল্প শুধু মানুষের চলাফেরাকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে না, এ থেকে উৎপাদিত ধুলা-বালি ও কাদা পুরো পরিবেশকে দূষিত করে ফেলছে। ইতোমধ্যে বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে ঢাকা শীর্ষ স্থান দখল করেছে। কয়েক বছর আগে প্রকাশিত পরিবেশ অধিদফতরের এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজম্যান্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু রাজধানীতে বায়ু দূষণজনিত রোগে বছরে মারা যায় ১৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া শব্দ দূষণে অনেকে ধীরে ধীরে বধির হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে যানজটের ক্ষতির হিসাব পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিবেদন অনুযায়ী, যানজটে প্রতিদিন মানুষের ৩২ লাখ বা তার চেয়েও বেশি কর্মঘন্টা নষ্ট হয়। এই শ্রমঘন্টার মূল্য বছরে ১ লাখ কোটি টাকা। উৎপাদন খাত, স্বাস্থ্যগত ও দুর্ঘটনার ক্ষতি হিসাব করলে এর পরিমাণ হবে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। আর এখন উন্নয়ন প্রকল্পে স্থবির হয়ে পড়ায় ক্ষতির পরিমাণ যে আরও বেড়েছে, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। শুধু রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রকল্পই নয়, উন্নয়নের ভোগান্তি রাজধানীর বাইরেও সৃষ্টি হয়েছে এবং হচ্ছে। এক ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে চার লেন করতে গিয়ে কি দুর্ভোগই না জনগণকে পোহাতে হয়েছে। এখন এর কাজ শেষ হলেও নিম্নমানের কারণে সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং ভোগান্তিরও সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়েতেও সমস্যা রয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল হাইওয়ের কথা তো বলাই বাহুল্য। দেখা যাচ্ছে, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যদি পরিকল্পিতভাবে ও সময়মতো টেকসইভাবে সম্পন্ন করা যেত, তাহলে মানুষকে অশেষ দুর্ভোগ মেনে নিতে হতো না।

উন্নয়ন নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত নেই। তবে উন্নয়ন প্রকল্প হতে হবে নিখুত, পরিকল্পিত ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এবং তা শেষ হওয়ার নিশ্চয়তা থাকতে হবে। উন্নত বিশ্বে একটি প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ পাঁচ বছর ধরলে তা তারা মেয়াদের আগেই শেষ করে। আমাদের দেশে হয় উল্টো। এতে উন্নয়নের গতি যেমন ধীর হয়ে পড়ে, তেমনি জনগণের অর্থেরও অপচয় হয়। আমরা আশা করব, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী এ বিষয়টির দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন। প্রকল্পের কাজ কেন সময়মতো শেষ হয় না এবং অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা করতে হবে। এর সাথে যারা জড়িত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প শুরুর আগেই মানুষের যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভোগান্তি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয় এ দিকটি নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ১০ অক্টোবর, ২০২১, ১১:৫১ এএম says : 0
যতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশ আল্লাহর আইন দিয়ে চলবে না ততদিন পর্যন্ত আমরা এই অভিশপ্ত সরকারের নির্যাতন সহ্য করে চলতে হবে এ ছাড়া কোন উপায় নাই
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন