শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কর্ণফুলী টানেল ও চীনা শিল্পাঞ্চল

প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

১৪ অক্টোবর উদ্বোধনের অপেক্ষায় চট্টগ্রামবাসী
শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম : চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের সাথে চট্টগ্রামের বহুল প্রতীক্ষিত কর্ণফুলী টানেলেরও উদ্বোধন হবে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৪ অক্টোবর (শুক্রবার) বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট যৌথভাবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। আর এর মাধ্যমে শুরু হবে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেল। সেই সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বিশেষায়িত চীনা অর্থনৈতিক জোন উদ্বোধন করা হবে। এর মাধ্যমে বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে যাচ্ছে। চীনা অর্থনৈতিক জোনটি শতভাগ চীনের বিনিয়োগে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হবে। উভয় মেগাপ্রকল্প উদ্বোধনের মুহূর্তের অপেক্ষায় এখন চট্টগ্রামবাসী।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রথম এবং একমাত্র এ টানেলটি চালু হলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। সরকারের গৃহীত ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার অর্থনৈতিক করিডোর বাস্তবায়ন আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। কর্ণফুলী নদীর ওপারে গড়ে উঠবে অর্থনৈতিক জোন ও সমৃদ্ধ আরও এক মহানগরী। এর ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার দূরত্ব আরও কমে যাবে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মূল শহরের সঙ্গে নদীর অন্য প্রান্তের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। চাপ কমবে নদীর ওপর থাকা অন্য দুই সেতুর। একই সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপিত হবে প্রস্তাবিত সোনাদিয়া সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে। কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় আট হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অ্যাপ্রোচ রোডসহ ৪ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটি নির্মিত হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার জাতীয় মহাসড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।
জানা যায়, টানেলটি শুরু হবে নগরীর পতেঙ্গা এলাকায়। আর শেষ হবে নদীর অপর প্রান্তে আনোয়ারায়। টানেলটির পূর্ব প্রান্তে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ও পশ্চিম প্রান্তে ৭৪০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। এটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে ৪৩ মিটার নিচ দিয়ে যাবে। এর দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৪০ কিলোমিটার। আগামী ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত বছর ২৪ নভেম্বর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় একনেক। ২০১৩ সালে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করে চায় না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) ও হংকংয়ের ওভিই অরূপ অ্যান্ড পার্টনারস। এরপর টানেল নির্মাণে প্রস্তাব দেয় সিসিসিসি। একই বছরের ২২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় এমওইউ। পরবর্তীকালে চীন সরকার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিসিসিসিকে মনোনয়ন দেয়। পরবর্তীকালে প্রথমে ৬৫৬ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলার এবং পরে সেতু কর্তৃপক্ষ গঠিত ইনডিপেনডেন্ট কনসালট্যান্টের সুপারিশ অনুযায়ী কিছু নতুন আইটেম যুক্ত করে ৬৭৯ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলারের সংশোধিত প্রস্তাব দেয় চীনা প্রতিষ্ঠানটি।
প্রস্তাব মূল্যায়নে গঠিত কমিটি মূল্যায়ন ও নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে প্রস্তাবিত (৬৭৯ দশমিক ১৬ মিলিয়ন) ডলার থেকে ৩৩ দশমিক ১৬ মিলিয়ন ডলার কমানো হয়। পরে পরামর্শকদের প্রস্তাবিত এবং বিশেষজ্ঞ দল ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সুপারিশ অনুযায়ী আরও কিছু নতুন কাজ যুক্ত করে চুক্তিমূল্য দাঁড়ায় ৭০৫ দশমিক ৮০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৬৭৫ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থ আসবে জিওবি (রাষ্ট্রায়ত্ত) খাত থেকে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে জিটুজি ভিত্তিতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের জুনে চীন সফরের সময় এ টানেল নির্মাণে চীনের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। ২০১৫ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এবং সিসিসিসি’র মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলী নদীর উত্তরপ্রান্তে সমৃদ্ধ মহানগরী হলেও অপরপ্রান্তে এখনও গ্রাম। বর্তমানে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু ও শত বছরের পুরনো রেলসেতু দিয়ে ক্রমবর্ধমান যান চলাচল সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া কর্ণফুলী নদীর তলদেশে পলি জমার কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
এ অবস্থায় কর্ণফুলীতে নতুন করে কোনো ব্রিজ নির্মাণ না করে নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সরকার। এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় সেতু বিভাগ। উন্নয়ন সংস্থা জাইকা ’৯০-এর দশকে কর্ণফুলী নদীতে ব্রিজ নির্মাণের বদলে তলদেশে টানেল নির্মাণের প্রস্তাব করে। তৎকালীন সরকারগুলোর সিদ্ধান্তহীনতার কারণে টানেল নির্মাণের প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়নি।
আনোয়ারায় চীনা অর্থনৈতিক জোন
চীনের অর্থায়নে অন্যতম মেগা প্রকল্প আনোয়ারায় প্রস্তাবিত চীনা অর্থনৈতিক জোন এ মুহূর্তে দ্বার উদ্ঘাটনের অপেক্ষায়। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় শতভাগ চীনের পুঁজি বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশেষ এই অর্থনৈতিক অঞ্চল। এর জন্য অপরিহার্য অবকাঠামো সুবিধা সম্পন্ন করে বিনিয়োগের উপযোগী করতে আগামী এক বছর সময় লাগবে। এ মেগা প্রকল্পে যোগাযোগের জন্য সড়ক নির্মাণের মধ্য দিয়ে আনোয়ারায় ‘চায়নিজ ইকনোমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোনে’র প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ১৪ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই মেগা প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। গত বছর জুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় চীনা প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে এই বিশেষ অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। পরে এ বিষয়ে বেজা ও চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে সড়কপথে মাত্র ২৮ কিলোমিটার দূরত্বে প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হলে দূরত্ব অর্ধেকে নেমে আসবে।
আনোয়ারায় চীনা অর্থনৈতিক জোনটি হবে দেশের প্রথম জিটুজি অঞ্চল। যেখানে চীনের শতভাগ বিনিয়োগ হবে। মেগা প্রকল্পটিতে সরকারের ৩০ শতাংশ এবং চীনা বিনিয়োগকারীদের ৭০ শতাংশ অংশীদারিত্ব থাকবে।
আনোয়ারায় চীনা অর্থনৈতিক জোন বাস্তবায়নকারী বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) সূত্রে জানা যায়, জিটুজি (বাংলাদেশ ও চীনা সরকার) পদ্ধতিতে আনোয়ারা উপজেলায় ৭শ’ ৭৪ একর জমিতে প্রস্তাবিত এই মেগা প্রকল্পে ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এতে ৩৭১টি শিল্প-কারখানা স্থাপিত হবে। আর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে ৫৩ হাজারেরও বেশি মানুষের। প্রকল্পে সড়কের কাজের সাথে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ প্রদান করা হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Abu Abdullah, Dubai ১৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:২৫ এএম says : 0
আমার পুরাপুরি মনে আছে বি এন পীর আমলে এক টক শো তে বি এন পীর এক মন্ত্রী বলে ছিলেন আমরা কর্ণফুলী নদী তলদেশে টানেল বানাবো, তখন আওয়ামী মন্ত্রী সুরঞ্জিত বাবুর উনাকে উপহাস করে বলেছিল, বাংলাদেশে ও টানেল বানানো সম্বভ IIকিন্ত আজ সম্বভ হচ্ছে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন