শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

লাদাখে উত্তেজনা বাড়ছেই

১৩তম বৈঠকও ব্যর্থ, চীন ক্ষতবিক্ষত সৈন্যদের ছবি প্রকাশ করায় ভারতীয়রা ক্ষুব্ধ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম

লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) ১৩তম বৈঠকের পর ফের একবার লাদাখ সমস্যা নিয়ে ভারতকে দোষারোপ করেছে চীন। এলএসসির কাছে চুশুলের মোল্ডোতে সেনা কর্মকর্তা পর্যায়ের ১৩তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রোববার। তবে এ বৈঠকের পরও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে কোনো সমাধান সূত্র পাওয়া যায়নি।
এদিকে, ২০২০ সালে হিমালয় সীমান্ত এলাকার গালওয়ান উপত্যকায় চীন-ভারত সংঘর্ষের সময় বন্দী ও খারাপভাবে আঘাতপ্রাপ্ত ভারতীয় সেনা ও কর্মকর্তাদের ছবি সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় ভারতীয়রা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।

১৩তম বৈঠকের পর ফের একবার লাদাখ সমস্যা নিয়ে সরাসরি ভারতকে দোষারোপ করেছে চীন। চীনা সরকারের মিডিয়া ‘গ্লোবাল টাইমস’ অনুযায়ী, ওয়েস্টার্ন কমান্ড বৈঠকের পর চীন জানিয়েছে, ভারত অযৌক্তিক এবং অবাস্তব দাবির ওপর জোর দেয়, তাই আলোচনা করতে তাদের অসুবিধা হচ্ছে। চীনা সেনার তরফে ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের মুখপাত্র বৈঠকের বিষয়ে বলেন, ‘সীমান্তে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে প্রচেষ্টা চলছে এবং দুই সামরিক বাহিনী নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সম্পূর্ণরূপে আন্তরিকতা প্রদর্শন করেছে।’ চীনের তরফে আরো ‘আশা’ ব্যক্ত করা হয়, ‘ভারত আন্তরিকতা দেখাবে, পদক্ষেপ নেবে এবং সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা যৌথভাবে রক্ষার জন্য চীনের সাথে কাজ করবে।’

পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় বিগত ১৬ মাস ধরে একটানা সীমান্ত সমস্যা চলছে ভারত আর চীনের মধ্যে। বিতর্কিত অঞ্চল থেকে সেনা সরানো নিয়ে ১৩টি বৈঠক হয়ে গিয়েছে দু’দেশের সামরিক আধিরকারিকদের মধ্যে। তবে সমাধান সূত্র এখনও বেরিয়ে আসেনি। সূত্রের খবর, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় এখনও পর্যন্ত মোটামুটি ১৮টি বিতর্কিত পয়েন্টকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থান সংক্রান্ত যাবতীয় বিবাদ ধাপে ধাপে মেটাতে চাইছে ভারত।
এদিকে লাদাখের উত্তাপ ছড়িয়েছে অরুণাচলপ্রদেশেও। সেখানে কয়েকদিন আগেই চীনের পিপল’স লিবারেশন আর্মি-র ২০০ জন সেনাকে সীমান্ত পার করা থেকে বিরত রাখেন ভারতীয় জওয়ানরা। এলএসি-র তাওয়াং সেক্টরে ইয়াংসে-র কাছে মুখোমুখি হয় দুই সেনা। তবে ঘটনায় কোনও হতাহতের বা ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।

এদিকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব ছবি ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, ভারতীয় সৈন্যরা প্রচণ্ড মার খেয়েছে এবং লম্বা কলামে মিছিল করে ফিরে যাচ্ছে, যখন চীনা সৈন্যরা পাহারায় দাঁড়িয়ে আছে। নতুন ছবিগুলো প্রাথমিকভাবে চীনা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিল এবং দেখিয়েছিল যে, গালওয়ানে ২০২০ সালের চীন ও ভারতের সংঘর্ষের সময় ভারতীয় সৈন্যরা কীভাবে পরাস্ত হয়েছে। ছবিতে দেখা গেছে, আহত ভারতীয় সৈন্যরা চীনা সেনাবাহিনীর (পিএলএ) হাতে বন্দী। সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছবিতে দেখা যাওয়া সৈন্যরা ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৬ বিহার রেজিমেন্টের অন্তর্ভুক্ত যারা তাদের কমান্ডিং অফিসারকে চীনা সেনাদের দয়ায় রেখে পালিয়ে যায়।

২০২০ সালের শুরু থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে অচলাবস্থা অব্যাহত রয়েছে। চায়না ডেইলি তার ৯ অক্টোবরের প্রকাশনায় চীনা সেনাবাহিনীর সূত্র উদ্ধৃত করে বলেছে যে, ২৮ সেপ্টেম্বর চীনা সীমান্ত রক্ষীরা ডংঝাং এলাকায় নিয়মিত টহল দিচ্ছিল। চীন-ভারত সীমান্তের চীনা দিক, কিন্তু ভারতীয় পক্ষ তাদের ‘অযৌক্তিকভাবে অবরুদ্ধ’ করে। চীনা অফিসার এবং সৈন্যরা ‘দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করেছে এবং টহল মিশন শেষ করে ফিরে এসেছে’।
কাগজটি চীনা উৎসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে যে, ডংঝাং এলাকাটি চীনের অন্তর্নিহিত অঞ্চল এবং চীনা সীমান্তরক্ষীদের তাদের নিজস্ব অঞ্চলে টহল দেয়া সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত এবং আইনী ছিল।

এটি চীনের সৈন্যদের ‘সীমা অতিক্রম’ করার জন্য আটক হওয়ার বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রচারকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এটিকে মিথ্যা এবং সত্যের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে। কাগজটি উল্লেখ করেছে যে, দায়িত্বটি সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় পক্ষের উপর নির্ভর করে। ইকোনমিক টাইমস অনুসারে, গত মাসে উত্তরাখণ্ডের বারহোতিতে ১০০ জনেরও বেশি পিএলএ সৈন্য সীমান্ত অতিক্রম করে, তারা পিছু হটার আগে একটি সেতুসহ কিছু অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে চীন ছবিগুলো প্রকাশ করেছে। ছবিগুলো স্পষ্ট প্রমাণ দেয় যে, কীভাবে ভারতীয় সৈন্যরা চীনা সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়েছিল এবং চীনা সৈন্যদের দ্বারা পরাস্ত হওয়ার পর শত শত বন্দী হয়েছিল। সূত্র : হিন্দুস্থান টাইমস, ট্রিবিউন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Md. Nurjamal ১২ অক্টোবর, ২০২১, ১:০১ এএম says : 0
একটা জিনিস খেয়াল করবেন সবাই, আমরা হয়তো ভারত বিরোধী কিংবা চীন বিরোধী তাই তাদের সেনাদের মৃত্যুতে আমরা খুশি হই । কিন্তু একটু ভাবুন যে সেনারা মারা যাচ্ছে তারা প্রত্যেকে এক এক জন বীর ও খাঁটি দেশ প্রেমী। যেখানে আমরা নিজের আপন জনের জন্য জীবন দিতে রাজী নই সেখানে তারা দেশের জন্য খুব সহজেই জীবন দিয়ে দেয় ।
Total Reply(0)
Nazim Khan ১২ অক্টোবর, ২০২১, ১:০১ এএম says : 0
চীন ও ভারতের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল,সীমান্তে গুলি না চালানোর জন্য, টিক সেই ভাবে আমি মনে করি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আরেকটি চুক্তি হওয়া প্রয়োজন।
Total Reply(0)
Tanjil Siddique ১২ অক্টোবর, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
ভারতীয় সেনাদের আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানোর জোর দাবি জানাচ্ছি..
Total Reply(0)
Jubayer Ahmed Mss ১২ অক্টোবর, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
ভারত শুধু মুভির মধ্যেই চীন আর পাকিস্তানকে মাইর দেয়।। বাস্তবে.....
Total Reply(0)
Ismail Hossain Bhuiyan ১২ অক্টোবর, ২০২১, ১:০৩ এএম says : 0
ভারত যতই হম্বিতম্বি করুক চীনারা যখন লাদাখ অরুণচলের উপর পাখির চোখ করেছে তখন লালফৌজ সেটি কব্জা করেই ছাড়বে ৷
Total Reply(0)
গিয়াস উদ্দীন ফোরকান ১২ অক্টোবর, ২০২১, ১০:১৯ এএম says : 0
২ দিন পর পর উত্তেজনার চেয়ে একবারে সমাধান হওয়াটা ভালো
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন