শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

নবী-জীবনে সত্যবাদিতা-২

মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আব্দুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

দাওয়াতের প্রথম দিকের ওই ঘটনা তো আমাদের সবারই জানা আছে। সাফা পাহাড়ের ঘটনা। সহীহ বুখারিতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, (কোরআন মাজীদে নিকটাত্মীয়দের দাওয়াতের আদেশ নাযিল হওয়ার পর) নবী (সা.) সাফা পাহাড়ে উঠলেন এবং উচ্চস্বরে বললেন, ‘ইয়া সাবাহাহ্!’ অর্থাৎ বিপদ! বিপদ! কোরাইশের লোকেরা পাহাড়ের সামনে উপস্থিত হলো। তিনি তাদের লক্ষ্য করে বললেন : আমি যদি তোমাদের বলি যে, একটি শত্রুদল এই পাহাড়ের ওপার থেকে তোমাদের ওপর আক্রমণ করবে তোমরা কি আমার কথা বিশ্বাস করবে?

সকলে বলল : আমরা আপনাকে কখনো মিথ্যা বলতে দেখিনি। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের জন্য এক কঠিন আযাবের আগের সতর্ককারী। (সহীহ বুখারি : ৪৯৭১)। এই ঘটনায় অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। তবে এখানে প্রাসঙ্গিক বিষয়টি হচ্ছে নবী (সা.) সম্পর্কে তার জাতির সাক্ষ্য : আমরা কখনো আপনাকে মিথ্যা বলতে দেখিনি।

ইমাম বুখারি রাহ. সহীহ বুখারিতে হিরাক্লিয়াসের সাথে আবু সুফিয়ানের সাক্ষাৎ ও কথোপকথনের বিখ্যাত ঘটনা বর্ণনা করেছেন, আবু সুফিয়ান তখনো ইসলাম কবুল করেননি। তিনি ব্যবসার উদ্দেশ্যে শামে গিয়েছিলেন। শাম ওই সময় বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল, সম্রাট কোনো কারণে শামে অবস্থান করছিলেন।

রাসূলে কারীম (সা.) এর আগমনের সংবাদ তার নিকট পৌঁছেছিল। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে আরো জানতে চাচ্ছিলেন। তো আদেশ দিলেন, এখানে যদি আরবের কেউ থাকে তাকে আমার কাছে নিয়ে আস, আমি আরবের নবী সম্পর্কে কিছু জানতে চাই। আবু সুফিয়ান শামে ছিলেন, তাকে হিরাক্লিয়াসের সামনে হাজির করা হলো। হিরাক্লিয়াস অনেকগুলো প্রশ্ন করলেন। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন ছিল : তিনি নবুওতের দাবি করার আগে তোমরা কি কখনো তাকে মিথ্যাকথনে অভিযুক্ত করেছ?

আবু সুফিয়ান বলেন, আমি উত্তরে বললাম, না, এমন অভিজ্ঞতা আমাদের কখনো হয়নি; আমরা তাকে মিথ্যাবাদিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারিনি। হিরাক্লিয়াস যে বিষয়গুলো জানতে চেয়েছিলেন সে সম্পর্কে আবু সুফিয়ানের উত্তর শোনার পর তিনি নিজেই একে একে সেই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো বিশ্লেষণ করেছেন।

সত্যবাদিতা সংক্রান্ত প্রশ্নের ব্যাপারে বললেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তোমরা কি তাকে নবুওত দাবির আগে মিথ্যাবাদিতার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পেরেছ? তুমি বলেছ, অভিযুক্ত করতে পারোনি। এ থেকে আমি বুঝতে পেরেছি, তিনি সত্য নবী। কারণ যে ব্যক্তি মানুষের ব্যাপারে মিথ্যা বলেন না, তিনি আল্লাহর ব্যাপারেও মিথ্যা বলতে পারেন না। (পুরো কথোপকথনটি সহীহ বুখারিতে (হাদীস নং ৭) আছে। যে কেউ তা দেখে নিতে পারেন)।

এটি হচ্ছে তাঁর সম্পর্কে এমন এক ব্যক্তির সাক্ষ্য, যিনি ঐ সময় পর্যন্ত তাঁর প্রাণের দুশমন ছিলেন এবং তার মর্যাদাহানীর সুযোগ খুঁজছিলেন। রাসূলে কারীম (সা.) এর উম্মত ও অনুসারী হিসেবে আমাদের কর্তব্য, জীবনের সকল ক্ষেত্রে সত্যবাদিতাকে অবলম্বন করা। তিনি নিজেও ছিলেন শ্রেষ্ঠ সত্যবাদী আর তাঁর শিক্ষা ও সাহচর্যে গড়ে উঠেছিল সত্যবাদী ও সত্যনিষ্ঠদের এক মহান জামাত-সাহাবায়ে কেরাম।

কীভাবে রাসূলে কারীম (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে সত্যবাদিতার শিক্ষা দান করেছেন। কীভাবে তাদের তরবিয়াত করেছেন সেটাও নবী-জীবনের আরেক উজ্জ্বল অধ্যায়। আল্লাহপাক যদি তাওফীক দান করেন তাহলে ইনশাআল্লাহ অন্য অবসরে এই বিষয়ে কিছু বলার চেষ্টা করব। আল্লাহপাক আমাদের সবাইকে এই মহান গুণ অর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
সোয়েব আহমেদ ১২ অক্টোবর, ২০২১, ৭:২৯ এএম says : 0
সত্যবাদিতার দিশারী, বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর সত্যবাদিতা দুনিয়াজুড়ে যুগে যুগে সব মানুষের জন্য অনন্য দৃষ্টান্ত।
Total Reply(0)
সততাই উৎকৃষ্ট পন্থা ১২ অক্টোবর, ২০২১, ৭:২৯ এএম says : 0
অবিশ্বাসীরাও তাঁকে প্রচণ্ড সত্যবাদী হিসেবে জানতেন
Total Reply(0)
তৌহিদুজ জামান ১২ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩০ এএম says : 0
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এই মহান গুণ অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
তানিম আশরাফ ১২ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩০ এএম says : 0
মুসলিম উম্মাহর উচিত, বিশ্বনবির সত্যবাদিতার এ আমলটি নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করা। সত্যবাদিতার মাধ্যমে জান্নাতের পথের শুভ সূচনার চেষ্টা অব্যাহত রাখা।
Total Reply(0)
গাজী ফজলুল করিম ১২ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
রাসুল (সা.)'র মন ছিল আকাশের মতো উদার, সত্যে প্রতি অবিচল। জীবনে কোনো দিন কোন প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেননি। কোন মিথ্যা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি, দানে-ধ্যানে জ্ঞানে, বিচারে-সহানুভবতায় তিনিই ছিলেন তার দৃষ্টান্ত।
Total Reply(0)
জোবায়ের খাঁন ১২ অক্টোবর, ২০২১, ৭:৩২ এএম says : 0
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন বিশ্ব তথা মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে। হজরত আদম (আ.)- এর মাধ্যমে দুনিয়ার বুকে প্রথম নবীর আগমন, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)'র আগমনের মাধ্যমে পৃথিবীতে নবী-রসুলের আগমন পর্বের সমাপ্তি টানা হয়েছে।
Total Reply(0)
Ansarul islam ১২ অক্টোবর, ২০২১, ৯:০০ এএম says : 0
If you want to go Jannat .you forget how to tell lie
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন