শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কোটিপতি বাড়ছে অর্থনৈতিক বৈষ্যম্য-মহামারিতেও

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

দেশে এখন কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের (অ্যাকাউন্ট) সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। যা ছয় মাস আগেও ছিল প্রায় ৯৪ হাজার। বিশ্লেষকদের ধারণা, এটি দেশে বৈষম্য বাড়ার বহিঃপ্রকাশ। নানারকম সংকটের মধ্যেও দেশে বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা। করোনা সংক্রমণে মানুষের আয় কমলেও কমেনি কোটি টাকার আমানতকারী। দেশে এখন কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের (অ্যাকাউন্ট) সংখ্যা প্রায় ১ লাখ। যা ছয় মাস আগেও ছিল প্রায় ৯৪ হাজার। অন্যদিকে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব বেড়ে যাওয়াকে ‘অর্থনৈতিক বৈষম্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন বিশিষ্টজনেরা। তাদের মতে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন একটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তাদের মতে, অর্থনীতিতে যখন কোনো সংকট বিদ্যমান, আয়ের পথ সংকুচিত হয়, তখন এক শ্রেণির মানুষের হাতে অর্থবিত্ত বেড়ে যাওয়া সুখের লক্ষণ নয়- এমনটাই মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের ধারণা, এটি দেশে বৈষম্য বাড়ার বহিঃপ্রকাশ।

তবে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যে টাকা খাটাচ্ছে না। এই টাকাগুলোই ব্যাংকে আসছে আমানত হিসেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনার সময়ে কিছু কিছু খাত যেমন চিকিৎসা সামগ্রী, তথ্যপ্রযুক্তি খাত ভালো ব্যবসা করেছে। এসব টাকা ব্যাংকে জমা হয়েছে। আবার প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বেশ শক্তিশালী অবস্থানে আছে। কারণ অনেক প্রবাসী জমানো টাকা নিয়ে একবারে দেশে ফিরে এসেছেন। মূলত এসব কারণে ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব বেড়ে গিয়ে থাকবে।

কোটি টাকার হিসাব
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে দেশে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৬টি। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা।
এর মধ্যে কোটি টাকার হিসাব ৯৯ হাজার ৯১৮টি। এসব হিসাবে আমানতের পরিমাণ ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট আমানতের প্রায় ৪৪ শতাংশই কোটিপতি হিসাব।

ছয় মাস আগে অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে কোটি টাকার বেশি হিসাব ছিল ৯৩ হাজার ৮৯০টি। হিসাবগুলোতে আমানতের পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৯৫ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসে দেশে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৬ হাজার ২৮টি। আর এসব হিসাবে আমানত বেড়েছে ৩৯ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা।
তবে কোটি টাকার হিসাব মানেই সব ব্যক্তি হিসাব নয়। কারণ, ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তারও কোনো সীমা নির্দিষ্ট নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।

এক কোটি থেকে ৫০ কোটি হিসাব সংখ্যা
এই সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা। ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা জমা রয়েছে ৭৮ হাজার ৬৯৪টি ব্যাংক হিসাবে। ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ৭৩ হাজার ৮৭৫টি। ছয় মাসে এসব হিসাব বেড়েছে ৪ হাজার ৮১৯টি। ৫ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির মধ্যে হিসাব রয়েছে ১১ হাজার ১৩টি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে যা ছিল ৯ হাজার ৪২৬টি। ১০ কোটি ১ টাকা থেকে ১৫ কোটির মধ্যে হিসাব জুন শেষে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৫৯৯টি, ডিসেম্বরে যা ছিল ৩ হাজার ৫০৭টি।

১৫ কোটি এক টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে হিসাব ১ হাজার ৭৩২টি, ডিসেম্বরে যা ছিল ১ হাজার ৪৭২টি। ২০ কোটি ১ টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে হিসাব দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৮৫ টি, ডিসেম্বরে যা ছিল ৯৯৭টি। ২৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৩০ কোটির মধ্যে হিসাব ৮৩৯ টি, আগে যা ছিল ৫৮৮ টি। ৩০ কোটি ১ টাকা থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে হিসাব সংখ্যা ৪২৫টি, ডিসেম্বর এসব হিসাব ছিল ২৪৬টি। ৩৫ কোটি এক টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে হিসাব রয়েছে ৩১৪টি, আগে যা ছিল ২৯৪টি। ৪০ কোটি ১ টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকা অ্যাকাউন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯০টি, ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ৩৫৮টি। ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হিসাব সংখ্যা ১ হাজার ৫২৭টি, আগে যা ছিল ১ হাজার ২৮৩টি।

১২ বছরে কোটিপতি বেড়েছে তিন গুণের বেশি
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া হিসাব অনুয়ায়ী, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি হিসাবের সংখ্যা ছিল ৫টি, যা ১৯৭৫ সালে ৪৭টিতে উন্নীত হয়। দেশে কোটিপতি হিসাব ১৯৮০ সালে ছিল ৯৮টি, ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪টি, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি, ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩টি এবং ২০১৫ সালে ৫৭ হাজার ৫১৬টি। ১২ বছরে দেশে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা তিন গুণেরও বেশি বেড়েছে।

দেশে কোটিপতির প্রকৃত হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করে না। ফলে কত মানুষের কোটি টাকা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা যায় না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, করোনার কারণে কিছু মানুষ যেমন গরিব হয়েছে, তেমনি ধনীরা আরও বেশি ধনী হয়েছেন। ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে অনেকে লাভবান হয়েছেন, যা ব্যাংকে রাখছেন। আবার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নেয়া ঋণের একটা অংশও ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখা হতে পারে। ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আরো বলেন, ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি মানে টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে না, কর্মসংস্থানও হচ্ছে না। এর ফলে সমাজে বৈষম্য বাড়ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন