দীর্ঘ ১৬ বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার স্বপ্ন ছিল জামাল ভূঁইয়াদের। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলো না। বাজে রেফারিংয়ে স্বপ্নভঙ্গ হলো বাংলাদেশের। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর লাল কার্ড ও ম্যাচের শেষ দিকের পেনাল্টিতেই সর্বনাশ। গতকাল বিকালে মালদ্বীপ জাতীয় স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচে নেপাল ১-১ ব্যবধানে বাংলাদেশের সঙ্গে ড্র করে প্রথমবারের মতো সাফের ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। বাংলাদেশের পক্ষে ফরোয়ার্ড সুমন রেজা ও নেপালের মিডফিল্ডার অঞ্জন বিষ্টা একটি করে গোল করেন। ম্যাচের ৮৬ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল বাংলাদেশই। পরের মিনিটেই সবকিছু উলট-পালট হয়ে যায়। ৮৭ মিনিটে উজবেকিস্তানের রেফারি রিসকুলায়েভ আখরল পেনাল্টির বাঁশি বাজালে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের মাথায় যেন বাজ পড়ে। আর পেনাল্টি থেকে গোল হজমের পর তো জামালদের সব আশা শেষ হয়ে যায়। ড্র করে চার ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে নেপাল ফাইনালে উঠলেও ৫ পয়েন্ট পেয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ে অস্কার ব্রæজোনের দল।
এবারের সাফে বাংলাদেশ-নেপাল লিগ পর্বের শেষ ম্যাচটি অলিখিত সেমিফাইনালে রূপ নিয়েছিল। এখানে দু’দলের ছিল ভিন্ন দুই সমীকরণ। ২০০৫ সালের পর ফের টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলতে হলে যেখানে জয়ের বিকল্প ছিলনা বাংলাদেশ দলের, সেখানে জামাল ভূঁইয়াদের জয় আটকে ড্র করে ১ পয়েন্ট পেলেই ফাইনালে যাবে নেপাল। এই সমীকরণ মাথায় নিয়ে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় বাংলাদেশ। পরিবর্তিত ছকে খেলা শুরু করে তারা। আগের তিন ম্যাচ ৪-১-৪-১ পদ্ধতিতে খেললেও কাল বাংলাদেশ ৪-৪-২ পদ্ধতিতে খেলেছে। চারটি পরিবর্তন এনে নেপাল ম্যাচের জন্য সেরা একাদশ সাজান কোচ অস্কার ব্রæজোন। ইয়াসিন আরফাত, রহমত মিয়া, সোহেল রানা ও মতিন মিয়াদের বদলে এ ম্যাচের সেরা একাদশে কোচ খেলান টুটুল হোসেন বাদশা, বিশ্বনাথ ঘোষ, রাকিব হোসেন ও সুমন রেজাকে। শুরুতে নেপাল বল নিয়ন্ত্রণে কিছুটা আধিপত্য করার চেস্টা করলেও দ্রæত নিজেদের গুছিয়ে নেন রাকিব-সুমনরা। শুরু করেন নেপালী সীমানায় একের পর এক আক্রমণ। সাফল্য পেতেও সময় লাগেনি। ম্যাচের ৯ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ফ্রি-কিক নিলে নেপালের এক খেলোয়াড় মাথা ছোঁয়ালেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। বক্সের মধ্যে ভালো অবস্থানে থাকা সুমন রেজা লাফিয়ে উঠে চমৎকার হেডে গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন (১-০)। গোলের পর প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়ে মালদ্বীপ স্টেডিয়াম।
এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান বাড়াতে মরিয়া হয়ে লড়ে একাধিক সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। ২৩ মিনিটে অঞ্জন বিষ্টার ফ্রি কিক অনেকটা লাফিয়ে ফিস্ট করে ফেরান গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। দুই মিনিট পর বক্সের ডান দিক দিয়ে অরক্ষিত ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিন তাড়াহুড়ো করে শট নেন। বল চলে যায় বাইরে। প্রথমার্ধের যোগকরা সময়ে নেপালের আয়ুশ খালানের হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে গেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন জিকো। এগিয়ে থেকে বিরতিতে গেলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ব্যবধান বাড়াতে লড়ে যান জামাল-রাকিবরা। সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে পাল্টা আক্রমণ চালায় নেপালও। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে তাদের দু’টি আক্রমণ ফিরিয়ে বাংলাদেশকে রক্ষা করেন জিকো। ৫০ মিনিটে আয়ুশের ফ্রি-কিক পাঞ্চ করে ফেরানোর তিন মিনিট পর অনন্ত তামাংয়ের ব্যাক হেড বিপদমুক্ত করেন তিনি। ৫৪ মিনিটে সুমন রেজা নেপালের গোলরক্ষক কিরণ কুমার লাম্বুকে একা পেয়েও লক্ষ্যে বল মারতে পারেননি। ৬৪ মিনিটে ইব্রাহিমের হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে গেলে আরেকটি সুযোগ নষ্ট হয় বাংলাদেশের। পরের মিনিটে নবযুগ শ্রেষ্ঠার হেড লাফিয়ে ধরে ফেলেন জিকো। ৭৯ মিনিটে ঘটে দুর্ঘটনা। নেপালের একটি আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো বক্স ছেড়ে অনেকটা সামনে চলে আসেন। বল তার হাতে লাগলে লাল কার্ড দেখান রেফারি। ফলে দশজনের দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। ম্যাচে দলকে বেশ কয়েকবার বাঁচানো জিকো বেরিয়ে গেলে পোস্ট সামলানোর দায়িত্ব নেন সিনিয়র গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা। জিকোর লাল কার্ডের পর খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে বাংলাদেশ বক্সে হেড করতে গিয়ে পড়ে যান অঞ্জন বিষ্টা। বেশ কয়েকবার রিপ্লেতে দেখানো হয়েছে সাদ উদ্দিনের সঙ্গে বিষ্টার তেমন কোনো সংঘর্ষ হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের স্তম্ভিত করে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ৮৮ মিনিটে স্পট কিক থেকে গোল করে দলকে প্রথমবারের মতো ফাইনালে পৌঁছে দেন অঞ্জন বিষ্টা (১-১)। ঠিক দিকে ডাইভ দিলেও রানা আটকাতে পারেননি বিষ্টার পেনাল্টি শট। শেষ পর্যন্ত ড্র করে হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় বাংলাদেশকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন